শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পায়রায় ডুবোচরের বিপদ

পায়রায় ডুবোচরের বিপদ

 পাউবোকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই ভাঙা বাঁধ সংস্কার হবে: তানিয়া ফেরদৌস, ইউএনও, মির্জাগঞ্জ

পায়রা নদীর বিভিন্ন জায়গায় জেগে উঠেছে ডুবোচর। দিন দিন তা বেড়েই যাচ্ছে। ফলে স্রোত মাঝনদীতে বাধা পেয়ে বয়ে যাচ্ছে তীর ঘেঁষে। এতে চাপ বাড়ছে বেড়িবাঁধের ওপর। ফলে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলায় নদী ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে। নদী তীরবর্তী মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, তারা সব সময়ই আতঙ্কে থাকছেন। নদীর স্রোতের ধাক্কা তীরের দিকে চলে এসেছে। যেকোনো সময় তাদের ভিটেমাটি সহায় সম্বল ভাসিয়ে নিতে পারে।

মূলত, মির্জাগঞ্জ উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫টি ইউনিয়ন ঘেঁষেই বয়ে গেছে পায়রা নদী। পায়রায় বিরামহীন ভাঙনের মুখে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে এসব ইউনিয়নের মানচিত্র।

স্থানীয় সূত্রমতে, পায়রার তীব্র স্রোতে পিপঁড়াখালী গ্রামের শাহজাহান হাওলাদারের বাড়িসংলগ্ন বেড়িবাঁধটি ভেঙে গেছে। এতে ঘরবাড়িসহ কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইতোমধ্যে উপজেলার রামপুরা এলাকার দেড় কিলোমিটার, পিঁপড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসল।

এছাড়াও প্রতিদিনই প্রায় ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গোলখালী, চরখালী, মেহিন্দাবাদ, কাকড়াবুনিয়া, ভয়াং, রামপুর ও সন্তোষপুরসহ বিভিন্ন এলাকার বেড়িবাঁধ। বছর কয়েক আগে পায়রা নদী গিলে নিয়েছে সুন্দ্রা কালিকাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সুন্দ্রা প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামপুর দাখিল মাদ্রাসা। বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে গোলখালী স্লুইসগেট ও কাকড়াবুনিয়া বাজার।

আরও পড়ুনঃ  পাঁচ মিনিটের পথ এক ঘণ্টায়

মির্জাগঞ্জ উপজেলার ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দা রিপন, রফিকসহ আরও অনেকে বলেন, আগে এলাকায় তীব্র নদী ভাঙন ছিল। বছর দুয়েক আগে ভাঙন প্রবণতা অনেকটাই কমে আসে। তবে বর্তমানে আবারও তা তীব্র আকার ধারন করেছে।

বাসিন্দাদের মধ্যে অভিজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে নদীর মাঝে মাঝে অসংখ্য ডুবোচর জেগেছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব ডুবোচরের বালু কাটা বন্ধ থাকায় চরগুলো অনেক বড় পুরু হয়েছে। এসব চরে স্রোত ও ঢেউ বাধা পেয়ে নদীর কিনারা দিয়ে বয়ে যায়। এতে চাপ পড়ছে বেড়িবাঁধ ও নদী সংলগ্ন এলাকায়। ইতোমধ্যে ভিটেমাটিসহ ফসিল জমি নদীতে মিশে গেছে। এসব ডুবোচর খনন ও দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণের দাবি নদীতীরের বাসিন্দাদের।

মির্জাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাড, আবুল বাশার নাসির দৈনিক আনন্দবাজারকে বলেন, দ্রুত নদীশাসন ও ড্রেজিং করে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া না হলে আমার ইউনিয়ন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। জরুরিভিত্তিতে এখানে জিও ব্যাগ ফেলে নদীভাঙন বন্ধ করা দরকার।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ফেরদৌস বলেন, ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও (পাউবো) অবহিত করা হয়েছে। শিগগিরই ভাঙা বাধা সংস্কার করা হবে।

মির্জাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান খান মো. আবু বকর সিদ্দিকী বলেন, নদী ভাঙনে উপজেলার অনেক মানুষই নিঃস্ব হয়েছে। বসতভিটাসহ ফসলি জমি হারিয়ে তারা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে। এমনকি নদীভাঙন এলাকাসমূহ পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী পরিদর্শন করেছেন। এসময় তিনি টেকসই বেড়িবাঁধের আশ্বাস দিয়েছেন।

পটুয়াখালী পাউবোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. কাইছার আলম বলেন,  ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন