কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার ৮নং ওয়ার্ডের চড়ুয়া পাড়া গ্রামে জলাবদ্ধতার কারণে প্রায় শত একর জমিতে আমন চারা রোপন করতে পারেনি কৃষকরা। জলাবদ্ধতা নিরসনে পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কমিশনারসহ মেয়রকে অনুরোধ করেও কোনো প্রতিকার মেলেনি বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
ভুক্তভোগী কৃষকরা জানান, চড়ুয়া পাড়ার টুপামারির দোলায় প্রায় ১০০ একরেরও বেশি আবাদি জমি রয়েছে। এসব জমি দুই ফসলি। জমিগুলোতে শুধু ধানের আবাদ হয়। ধান চাষ করেই ওই কৃষকদের পরিবারের খাবারের জোগান চলে। তবে, মৌসুম শেষ হতে বসলেও জলাবদ্ধতার কারণে এখনও ওই দোলার জমিগুলোতে আমন চারা রোপন করতে পারেননি তারা। অথচ অতীতে কখনও এমন জলাবদ্ধতা হয়নি।
তাদের দাবি, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নিতে বারবার পৌর কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হলেও কোনও প্রতিকার মিলছে না। ফলে ওই এলাকার শত একর আবাদি জমি এ বছর অনাবাদি পড়ে থেকে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা করছেন তারা।
টুপামারির দোলায় প্রায় তিন একর জমিতে আবাদ করেন কৃষক আনোয়ার ও তার পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু জমিতে এখনও হাঁটু পানি আর কচুরি পানা। ফলে এবছর তারা কেউ ধান রোপন করতে পারেননি। ধানের চারার দোগাছি (স্থানীয় ভাষায় চারাও) রোপন করতে গেলেও জমিতে জমে থাকা পানিতে ডুবে যাচ্ছে।
আনোয়ার বলেন, ‘আমরা অসহায়। কেউ আমাদের দিকে তাকায় না। একর একর জমি পানিতে তলায় আছে। আমরা কেমন করি আবাদ করবো। পৌরসভায় বারবার গিয়েও কাজ হচ্ছে না।
কৃষক নজরুল, লাইজু ও আফতাব বলেন, প্রতিবছর এই সময়ে টুপামারির দোলা ধানের সবুজ চারায় ভরে ওঠে। বাতাসে দোল খায়। ঝাকে ঝাকে ফসলের ক্ষতিকর পোকা খেকো পাখির আগমন ঘটে। কিন্তু এবছর জলাবদ্ধতার কারণে কেউ ধান রোপন করতে পারেনি। অথচ মৌসুম শেষ হচ্ছে। আমরা আবাদ করতে না পারলে কী খাবো, পরিবারকে কী খাওয়াবো?
কৃষি বিভাগ বলছে, কৃষকরা ভাদ্র মাসের ২৫ তারিখ পর্যন্ত আমন রোপনের সময় পাবেন। এরপর নিয়মিত জাত রোপন করলে ফলন ভালো হবে না। তবে নাভি জাতের ধান রোপন করার সুযোগ থাকবে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘জলাদ্ধতা নিরসনে কৃষি বিভাগের কিছু করণীয় নেই। তবে পানি নেমে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের সরিষাসহ বিভিন্ন শস্য বীজ প্রণোদনা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
কুড়িগ্রাম পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, ‘ওই এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে ওই দোলার দক্ষিণে নীলারাম স্কুলের কাছে সড়কে পাইপ বসিয়ে পানি নিষ্কাশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শিগগির আবারও নালা খনন করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পানি নিষ্কাশনের বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র কাজিউল ইসলাম বলেন, আমি লোক পাঠিয়ে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেবো।