নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইন পুননির্মাণ কাজে পুরোনো বৈদ্যুতিক তার ও খুঁটি প্রতিস্থাপনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব বৈদ্যুতিক খুঁটি প্রতিস্থাপনের ব্যয় দেখানো হয়েছে মোট ২৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। যা বাজার মূল্যে আসমান-জমিন ফারাক। বিষয়টি স্বীকার করে ডালিয়া পাউবোর যান্ত্রিক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, জরুরি কাজ হওয়ায় ঠিকাদার কিছু পুরোনো বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তার দিয়ে লাইনটি পুননির্মাণ করেন। তবে কাজের বিল কেন প্রায় ৩০ লাখ সুপারিশ করা হয়েছে এটি আমি জানি না।
গত ১৯ অক্টোবর রাতে ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তিস্তা ব্যারেজের রক্ষাকবচ হিসেবে পরিচিত ফ্লাড বাইপাসটি ভেঙ্গে যায়। ফলে বন্যার প্রবল স্রোতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১১ কেভি এইচটি বৈদ্যুতিক লাইনটির ১১টি খুটি ভেঙে কিছু ভেসে যায় এবং তাঁরগুলিও ছিড়ে । এতে সাধুর বাজার থেকে পাউবো দোয়ানীর কলোনি, তিস্তা বিজিবি ক্যাম্প, পুলিশ ক্যাম্প, আনসার ক্যাম্পের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে তিস্তা ব্যারেজের বিভিন্ন কাজের জন্য ব্যবহৃত প্রধান ওয়ার্কশপের কাজ বন্ধসহ বিজিবি ক্যাম্প, পুলিশ ক্যাম্প, আনসার ক্যাম্পের সকল প্রকার অফিসিয়াল কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
এমতাবস্থায় পাউবোর যান্ত্রিক বিভাগ কোনো দরপত্র আহ্বান ছাড়াই মনঃপূত ঠিকাদারের মাধ্যমে জরুরিভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত ১১ কেভি এইচটি বৈদ্যুতিক লাইনটির পুনঃনির্মান ও রক্ষানাবেক্ষণ করে। যার মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৯ লক্ষ ৯৫ হাজার টাকা।
জানা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক লাইনটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০ মিটারের মতো হলেও পাউবো কর্তৃপক্ষের সুপারিশকৃত তালিকায় এর দৈর্ঘ্য ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার উল্লেখ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক খুটি ১১টি। তিস্তা যান্ত্রিক বিভাগ(ডালিয়া) ও ঠিকাদারের যোগসাজশে ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক লাইনটি পানি উন্নয়ন বোর্ডে পূর্বের মজুত থাকা পুরাতন বৈদ্যুতিক খুঁটি রং করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। পাউবোর গোডাউনে থাকা পুরোনো বৈদ্যুতিক তাঁর দিয়েই সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্ষতিগ্রস্ত বৈদ্যুতিক লাইনটির পুনঃনির্মাণ করতে নতুন করে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে ১১টি খুটি। প্রতিটি খুটি অনেক পুরাতন, ঘষেমেজে রং করা হয়েছে। বেশিরভাগ খুটি মরিচা ধরা, ট্যাপ খাওয়া। তাঁরগুলোও অনেক পুরাতন ও জোড়াতালি দেওয়া।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বৈদ্যুতিক লাইনটি মাত্র দুদিনে পুননির্মাণ করা হয়েছে। এতে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকাও খরচ হয়নি। পুরোনো খুঁটি ও তার ঘষা মাজা করে জোড়াতালি দিয়ে লাইনটি পুননির্মাণ করে সরকারের লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার পাঁয়তারা চলছে।
ডোমার বিদ্যুত অফিস সুত্রে জানা যায়, এরকম লাইন সম্পূর্ণ নতুন খুঁটি ও তাঁর দিয়ে পুননির্মাণ করলেও সর্বোচ্চ খরচ হবে তিন লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে ওই কাজের ঠিকাদার রবিউল ইসলাম বলেন, লাইনটি পুননির্মাণ ব্যয় ৩০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। তবে আজও সেই টাকা পরিশোধ করা হয়নি।
এ ব্যাপারে ডালিয়া পাউবোর যান্ত্রিক বিভাগের প্রকৌশলী রুবাইয়াত ইমতিয়াজ জানান, বিডিআর ক্যাম্পের অনুরোধে বৈদ্যুতিক লাইনটি জরুরিভিত্তিতে পুনঃনির্মাণ করা হয়েছে। সম্ভাব্য ব্যয় কেন ত্রিশ লাখ টাকা সুপারিশ করেছেন জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন।