বরিশালের বিলাঞ্চলে কারেন্ট জাল ব্যবহারের চেয়েও ভয়াবহ আকারে বেড়েছে নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার। এতে দেশীয় মাছসহ জলজ জীববৈচিত্র্য ব্যাপক হুমকিতে পড়েছে। বরিশাল জেলায় চায়না দুয়ারি জাল পেতে অবাধে মাছ নিধন করা হচ্ছে। এতে জালে আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে সাপ, কুইচা, কাঁকড়া, ব্যাঙ, শামুকসহ অধিকাংশ জলজ প্রাণী।
বরিশাল সদর উপজেলাসহ বাকেরগঞ্জ, আগৈলঝাড়া, উজিরপুর ও গৌরনদী উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে অবাধে বিক্রি হচ্ছে চায়না দুয়ারি জাল। গ্রামীণ হাটবাজারগুলোয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব জাল বিক্রি করেছে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী।
ছোট থেকে বড় সব ধরনের মাছ এ জালে আটকা পরায় মৎস্যজীবীদের কাছে চায়না দুয়ারি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। গত ২ দিন সরজমিনে বাকেরগঞ্জ ও বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ বিলে পাড়ের আইচার গ্রাম বালিয়ারচর, বাকেরগঞ্জের শিয়ালঘুনী চর, শতরাতরাজচর, গ্রাম এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ মাঠ, ডোবা, নালা, খাল সব জায়গাতেই চায়না দুয়ারি জাল পেতে মাছ ধরছেন জেলেরা। বেশিরভাগ জালে মাছের চেয়ে অন্যান্য জলজ প্রাণি আশঙ্কাজনকহারে মারা পড়ছে। বরিশালের অঞ্চলের মৎস্যচাষিরাও চায়না দুয়ারি জাল নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এ জাল পুকুরে পেতে রেখে দু থেকে তিন দিনের মধ্যে এক পুকুরের প্রায় সব মাছ সাবাড় করে দেওয়া সম্ভব।
চায়না জালের দু’পাশে দুহাত পর পর লোহার তৈরি গোল রিং পড়ানো থাকে। তার মাঝখানে এক হাত পর পর ৩০ টির মতো চারকোনা রিং পড়ানো। চারকোনা রিংয়ের মাঝে একটি করে দুয়ার রয়েছে। এসব দুয়ার দিয়ে মাছ ও জলজপ্রাণি একবার ঢুকে পড়লে আর বের হতে পারেনা। এ জালের বিশেষ বৈশিষ্ট হলো পানির তলদেশে লম্বালম্বিভাবে পড়ে থাকে। ফলে কোনো প্রকার খাদ্যদ্রব্য ছাড়াই দুই দিক থেকে মাছ ও জলজপ্রাণি জালের ভেতরে ঢুকে পড়ে। চায়না দুয়ারি জাল দেখতে অনেকটা ঢলুকের মতো। এ জাল অনেকের কাছে ঢলুক জাল নামেও পরিচিত।
সরকারি বিএম কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক আরিফুল ইসলাম জানান, চায়না দুয়ারি জালে দেশীয় প্রজাতির সব মাছ ও বিভিন্ন জলজ প্রাণি ধরা পড়ছে। এর মধ্যে বিপন্ন প্রজাতির অনেক মাছ ও জলজ প্রাণিও রয়েছে। জেলেরা মাছ ও কুইচা বিক্রি করছেন। এরপর সাপ, কুইচা, কাঁকড়া, ব্যাঙ, শামুক, ঝিনুকসহ অধিকাংশ জলজপ্রাণিই তারা মেরে ফেলছেন। ফলে সেসব মাছ ও জলজপ্রাণি বংশ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারছে না। চায়না দুয়ারি জাল কারেন্ট জালের চেয়েও মারাত্মক ক্ষতিকর।
বরিশাল সদর উপজেলার শায়েস্তাবাদ আওয়ামী মৎস্যজীবি সভাপতি সভাপতি বালিয়ার চরের গ্রামের নুর আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে খালবিল থেকে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। তবে বর্তমানে চায়না জাল প্রকৃত মৎস্যজীবীদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জালের বিস্তাররোধ করতে না পারলে ভবিষ্যতে খাল-বিলে কোনো মাছ খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এ ব্যাপারে বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা ইলিশ বিমল চন্দ্র দাস বলেন, ইতোমধ্যে উপজেলার একাধিক বিলে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি চায়না জাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। পাশাপাশি মৎস্যজীবীদের সচেতন করে তোলা হচ্ছে।
বরিশালের সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরুজ্জামান বলেন, নিষিদ্ধ চায়না জাল বিক্রি বন্ধে হাটবাজারগুলোয় অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া যাতে কোনো ব্যবসায়ী এ জাল বিক্রি করতে না পারে সেজন্য মৎস্য কর্মকর্তাদের নজরদারি বাড়াতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।