শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মরুর দেশে বিস্ময়--

 ‘দুবাই মিরাকল গার্ডেন’

 ‘দুবাই মিরাকল গার্ডেন’

প্যারিসকে যদি বলা হয় কল্পনার নগরী তবে দুবাইকে কল্পনার বাস্তব নগরী বলাটা ভুল হবে না। আরব উপদ্বীপের পূর্বাঞ্চলের দুবাই মৎস জীবিদের গ্রাম হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২১ শতকের গোড়ার দিকে এটি একটি বৃহত্তম মহাজাগতিক মহানগরে পরিণত হয়েছে। এই জনপদের শাসক শেখ মুহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাখতুম আল নাহিয়ানের অভিধানে অসম্ভব বলে কোন শব্দ নেই বল্লেই চলে! কি নেই,কি গড়ে তুলেননি মুসলিম বিশ্বের ক্ষমতাধর এই শাসক।

পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থাপনা দেশটির বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বুর্জ খলিফা, পৃথিবীর একমাত্র সাত তারকা মানের হোটেল বুর্জ আল আরব, বিশ্বের সর্বোবৃহৎ বিমানবন্দর, ফিউচার মিউজিয়াম, পৃথিবীর সর্বো গভীর সুইমিংপুল, মরুর দেশে কৃত্রিম বরফের স্থাপনা, এক কথায় আবারো কি নেই! তেমনি মরুর বুকে গড়ে তুলেছেন বিরল ও জনপ্রিয় সবুজ অরণ্যর প্রকৃতির বিস্ময়ের এক অপরূপ নিদর্শন ‘দুবাই মিরাকল গার্ডেন’ বা আশ্চর্য বাগান। যা দেশটির আল বারশা ও দক্ষিণ দুবাইয়ের ৭ লক্ষ ৮০ হাজার বর্গফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এতে প্রায় ১’শত ৫০ মিলিয়ন ফুল ও গাছপালা এবং ১২০ টিরও বেশি প্রজাতির বিভিন্ন ফুলের স্থাপনা রয়েছে।

রঙিন দুবাইয়ের নান্দনিক জীবন্ত কারুকার্য দিয়ে সাজানো হয়েছে মিরাকল-গার্ডেন। যা প্রকৃতি প্রেমী, সৌন্দর্য ও রোমান্টিক ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে সমান ভাবে জনপ্রিয়। গত একদশক ধরে দর্শনার্থীদের নিয়মিত ভিন্নমাত্রার রোমাঞ্চক অভিজ্ঞতা উপহার দিয়ে চলেছে। দর্শনার্থীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণ হলো স্মার্ফ ভিলেজ বা মাশরুম আকৃতির ঘর, যেখানে ক্ষুদ্রাকৃতির নীল কীটের বাসস্থান।  স্মার্ফ ভিলেজের দর্শনার্থীরা ল্যান্ডস্কোপ প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্ষুদ্র প্রাণীদের জগৎ এবং তাঁরা মাশরুম আকৃতির ঘরে বসবাসের অভিজ্ঞা অর্জন করতে পারেন। এছাড়াও ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে প্রাণবন্ত এবং চিত্তাকর্ষক করে তুলতে রয়েছে, বিভিন্ন প্রজাতির রঙিন ফুলের গাছ, উদ্ভিদ ভাস্কর্য নিয়ে সাজানো পূর্ণ একটি বিভাগ। উদ্ভিদ ভাস্কর্যগুলো বাস্তবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে দুবাইয়ের শৈলীতা, যা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ফুলের বাগান হিসেবে গিনেস বুক ওয়ার্ল্ড রেকর্ড এ নাম লিখিয়ে নিয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  কাপ্তাইয়ে বিজ্ঞান বিষয়ক অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

প্রকৃতির এ স্বর্গরাজ্যে আপনি হারিয়ে যাবেন মন মাতানো ফুলের সৌরভ আর দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষের অবকাঠামোতে। যেখানে মনের পরশা দিয়ে রাঙিয়ে তুলছেন পৃথিবীর বিভিন্নদেশের দক্ষ কারিগররা। চতুর্দিকে তাকালেই মনে হবে স্বর্গের মায়াবি সৌন্দর্য বুঝি চোঁখের সামনে হাজির হয়েছে। ফুল দিয়ে সাঁজানো ময়ূর, শান্তির প্রতিক কবুতর, মরুর জাহাজ উট, ত্রিমাত্রিক ঘড়ি, একটি ফোয়ারা সহ ভাসমান শিলা, মসজিদসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন ফুলের স্থাপনা দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করে। যেখানে ১৫ প্রজাতির প্রায় ৫ মিলিয়ন সূর্যমুখীর অভয় অরণ্য বৃদ্ধমান।

আলাদীনের জাদুর গালিচার কথা আপনি সুনে থাকবেন, আর আলাদীনের উড়ন্ত জাদুর গালিচায় উড়ার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞা পেতে হলেও ভ্রমণ পিপাসুদের এখান থেকে একবার ঘুরে আসা প্রয়োজন। পৃথিবীর সবজাতের ফুল একসাঙ্গে শুধুমাত্র মিরাকল গার্ডেনেই দেখতে পাবেন। কারন এমন কিছু বিলুপ্ত জাতের ফুলের গাছ রয়েছে যা পৃথিবীতে একটি মাত্র বৃদ্ধমান, আর তা এখানেই সংগৃহীত রয়েছে। মিরাকল গার্ডেনের স্থাপনার আইকনিক এমিরেটস এয়ারলাইন্স এর এ-৩৮০ মডেলের একটি ফুলের বিমানের কাঠামো তৈরী করেছে, যা বিশ্বের সর্বোবৃহত্তম ফুলের কাঠামো। যা তৈরীতে প্রায় ৯ হাজার ফুলের গাছ এবং সামগ্রিক কাঠামোর জন্য ৫ লক্ষ ফুল লেগেছে।

দেশটির যে কোন প্রান্ত থেকে ব্যক্তিগত পরিবহণ, ট্যাক্সি বা বাসে করে খুব সহজে যাতায়াত করা যায়। ভিনদেশি পর্যটকরা দুবাই বিমানবন্দরের ৩ নম্বর টার্মিনাল থেকে ট্যাক্সি করে সরাসরি দুবাই মিরাকল গার্ডেনে যেতে পারেন। এখানে প্রবেশের জন্য ৩ বছর পর্যন্ত শিশুদের জন্য কোন রকম প্রবেশ মূল্য পরিশোধ করতে হবে না, তবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ৫৫ দিরহাম এবং ৩ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ৪০ দিরহাম প্রবেশ মূল্য পরিশোধ করতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন