শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাজারের খরচে পকেট ফাঁকা

বউ বলে বাজার আনো, স্বামী বলে কেমনে?

বাজারে এক বিতিকিচ্ছি অবস্থা। ঘরে বসে সবাই লম্বা লম্বা কিচ্ছা ছাড়ে। বাজারের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র নেই তাদের। বাজার মনিটরিং না থাকায় বড় মিলার ও কর্পোরেট গ্রুপগুলো চালের দাম যাচ্ছেতাই বাড়াচ্ছে। আক্ষেপের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন চট্টগ্রামে চালের অন্যতম বড় পাইকারি মোকাম পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এসএম নিজাম উদ্দিন। একই কথা বললেন আরও কয়েকজন চাল ব্যবসায়ী।

নগরীর চাক্তাই ও পাহাড়তলী চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিন দিনের ব্যবধানে চালের দাম বস্তাপ্রতি ২ থেকে ৩শ টাকা বেড়েছে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে গাড়ি ভাড়া বাড়ানোর অজুহাতে দাম বাড়ানো হয়। ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, বাজারে কোনো মনিটরিং না থাকায় ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে পুরনো প্রথায় সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানো হচ্ছে।

পাহাড়তলী বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ও বণিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. জাফর আলম বলেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর প্রথা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। ডলার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে কয়েক দফায় দাম বাড়ানো হয়েছে। বাজার মনিটরিং না থাকায় উত্তর বঙ্গের বড় মিলার ও বড় কোম্পানিগুলো ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, চালের আমদানি শুল্কহার প্রত্যাহার ও সরকারি উদ্যোগে খোলা বাজারে চাল বিক্রি শুরু করা হলে বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল থাকবে। অন্যথায় দাম আরও বাড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, চট্টগ্রামে চালের চাহিদার বড় জোগান দেয় উত্তর বঙ্গের নওগাঁ, মহাদেবপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জের মিলারগুলো। তার সঙ্গে দেশের কর্পোরেট গ্রুপগুলোও বাজারে চাল বিক্রি করে। বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও চাল সংকটের গুজব তুলে দফায় দফায় দাম বাড়ানো হয়।

আরও পড়ুনঃ  অচলাবস্থার মেঘ কাটবে

জানা যায়, চট্টগ্রামের চাক্তাই ও পাহাড়তলী চাল বাজারের অন্তত ১০ থেকে ১৫ জন বড় ব্যবসায়ীর কাছেও প্রচুর চাল মজুত রয়েছে। উত্তর বঙ্গের মিলারদের যোগসাজশে তারাও বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়াচ্ছেন।

পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, কর্পোরেট গ্রুপগুলোর সেলসম্যান বা প্রতিনিধিরা বাজারে বাজারে চাল সংকটের গুজব ছড়ায়। এতে ব্যবসায়ী অতিরিক্ত চাল কিনে মজুত করে। পরে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বাজার অস্থিতিশীল করে তোলে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. ফয়েজউল্লাহ বলেন, ‘মন্ত্রণালয় ও অফিসের সভা করে বাজার মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হবে’।

২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের পর থেকে চালের বাজারে অস্থিতিশীলতা চলে আসছে। সরকার নানা উদ্যোগ নেওয়ার পরও চালের দাম কমাতে পারেনি। সর্বশেষ গত ২৫ জুন চাল আমদানির শুল্ককর সাড়ে ৬২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনে সরকার। শুল্কছাড়ের পর প্রায় ১০ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চাল আমদানি হয়েছে সামান্য।

চালের বড় মোকাম চাক্তাই ও পাহাড়তলী চাল বাজারে দেখা যায়, বেতি আতপ চাল বিক্রি হচ্ছে ২৬ থেকে ২৭শ টাকা দরে। গত সপ্তাহে তা ২৪শ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। মধ্যমানের বেতি দুই হাজার টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ২৩-২৪শ টাকা দরে। নূরজাহান সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ২৬-২৭শ টাকায়। জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৩৫-৩৬শ টাকা দরে। মধ্যমানের জিরাশাইল ৩৩৫০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৫শ টাকায়। কাটারি আতপ ৩৭-৩৮শ টাকা থেকে বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকা দরে। নাজিরশাইল একশ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৩৮শ টাকা থেকে চার হাজার টাকায়। চিনিগুঁড়া বিক্রি হচ্ছে ৫৮শ টাকায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন