শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উত্তরে সারের জন্য হাহাকার

উত্তরে সারের জন্য হাহাকার
  • সার-কীটনাশক-জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ ওঠানো নিয়ে চাষিদের সংশয়
  • পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না সার

সকাল থেকে দুপুর পযন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও সার পাইনি। সার কিনতে গিয়ে কাড়াকাড়ি অবস্থা। মারামারিও হচ্ছে। এভাবে আমাদের পক্ষে আমন আবাদ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে: রবিউল ইসলাম, চাষি, টুনিরহাট, রংপুর

উত্তরের জেলাগুলোতে সার পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন আমন চাষিরা। পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও মিলছে না সার। ডিলারদের মাধ্যমে সার পেতে রীতিমতো কাড়াকাড়ি করতে হচ্ছে। আবার কৃষকের ভিড় সামাল দিতে কখনো মোতায়েন করা হচ্ছে পুলিশ।

অন্যদিকে সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন রংপুর বিভাগের ৮ জেলার কৃষকরা। উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যদাম না পেলে অনেক কৃষক চাষাবাদে আগ্রহ হারাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, একদিকে খরা, অন্যদিকে সার ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধিতে এ অঞ্চলের কৃষকদের প্রায় ৬শ’ কোটি টাকা লোকসান গুণতে হবে। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাহবুবুর রহমান বলেন, চলতি বছর আসলেই বৃষ্টিপাত কম হয়েছে, আর এর মাশুল গুণতে হবে কৃষকদের। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, উত্তরের ১৬ জেলায় এ বছর ২৫ লাখ ৬৩ হাজার জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পযন্ত রোপণ হয়েছে ১৬ লাখ ৪৪ হাজার হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আমন মৌসুমের শুরু থেকে উত্তরের ১৬ জেলায় সারের এ সংকট। কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্য মতে, আগস্ট মাসে আট হাজার ৬৯০ মেট্রিক টনের বিপরীতে চার হাজার ৯৯৭ মেট্রিক টন ইউরিয়া, এমওপি চার হাজার ৩১৩ মেট্রিক টনের বিপরীতে ৮৯৩ মেট্রিক টন, টিএসপি দুই হাজার ৫৬২ মেট্রিক টনের বিপরীতে ৭৩৫ মেট্রিক টন এবং ডিএপি দুই হাজার ২৩০ মেট্রিক টনের বিপরীতে ৬৭৯ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  স্বাস্থ্যবিধি না মানলে দোকান বন্ধ

টুনিরহাট এলাকার চাষি রবিউল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে দুপুর পযন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও সার পাইনি। সার কিনতে গিয়ে কাড়াকাড়ি অবস্থা। মারামারিও হচ্ছে। এভাবে আমাদের পক্ষে আমন আবাদ করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

একই এলাকার চাষি মহিম উদ্দিন বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে খুব কষ্ট করে সার নিতে হচ্ছে। তা-ও আবার এক বস্তার বেশি দেয় না। আমন ধান রোপণের পরে এখনো সার দিইনি। সারের এমন সংকট হবে কল্পনা করিনি। আমন চাষের যে এবার কী হবে বলতে পারছি না।

পঞ্চগড় বিএডিসির সার ডিলার এ কে এম রেজাউল করিম বলেন, চাহিদামতো সার পাওয়া যাচ্ছে না। যে পরিমাণ বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে, তার চেয়ে অনেক গুণ বেশি চাহিদা রয়েছে। ফলে সার বিক্রি করতে হিমশিম খাচ্ছি।

পঞ্চগড় সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কামাল হোসেন সরকার বলেন, আমরা এক বস্তা করে সার দিচ্ছি। পাশাপাশি কৃষকদের অতিরিক্ত সার ব্যবহার করতে নিরুৎসাহ করছি। ডিলাররা একসঙ্গে সার আনলে এমন ভিড় হতো না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক শাহ মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমাদের এখানে এমওপি সারের কিছুটা সংকট রয়েছে। এরই মধ্যে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করেছি। আশা করছি দ্রুতই সার সংকট কেটে যাবে।

সারের দাম বাড়ায় কৃষকরা বিপাকে : সারের দাম বাড়ায় ফসল (খাদ্যশস্য ও সবজি) উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে বলে দুশ্চিন্তায় উত্তরের কৃষকরা।

রংপুরের কৃষক মোত্তালেব হোসেন বলেন, কীটনাশকের পর সারের দাম বৃদ্ধিতে খাদ্যশস্য ও সবজি উৎপাদনে চাপের মুখে পড়েছি। চলতি আমন মৌসুমে ধান উৎপাদনে খরচ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। কারণ কিছুদিন আগে এক বিঘা জমি হালচাষ করতে খরচ হতো ৮০০ টাকা। ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় সেই জমি হাল দিতে এখন খরচ হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা। তার ওপর বৃষ্টি না হওয়ায় বাড়তি সেচ দিতে প্রতি ঘণ্টায় খরচ হচ্ছে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া রয়েছে চারা রোপণের কামলা খরচ, সার, কীটনাশক, নিড়ানি, কাটা ও মাড়াই খরচ। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ। এরপর জমিতে কী পরিমাণ ফসল হবে, তা বলাও সম্ভব নয়। লাভ তো দূরের কথা, এ বছর উৎপাদন খরচ ওঠানো সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।  লালমনিরহাটের শিয়াল খোওয়া এলাকার কৃষক যামিনী বর্মণ বলেন, বলা নেই কওয়া নেই, সরকার হুটহাট সার, কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি করছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে কৃষি খাতে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন