শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৈকতে তীব্র ভাঙন হুমকিতে পর্যটন ব্যবসা

সৈকতে তীব্র ভাঙন হুমকিতে পর্যটন ব্যবসা

কক্সবাজারে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর অস্বাভাবিকভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে। যার কারণে সৈকতজুড়ে তীব্র ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে লাবনী পয়েন্ট। এতে পর্যটনে বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। আর দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সাগর উত্তাল, জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। কক্সবাজারে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।

সৈকতের লাবণী পয়েন্ট উচ্চ জোয়ারের আঘাতে ঝুঁকির মুখে ট্যুরিস্ট পুলিশের স্থাপনা। একদিকে ভাঙনের কারণে যেকোন মুহুর্তে ভেঙ্গে পড়তে পারে স্থাপনাটি। যার জন্য জিও ব্যাগ দিয়ে রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সৈকতের অন্যতম পয়েন্ট লাবণী জোয়ারের পানিতে ভেঙে তছনছ।

সৈকতের কিটকট (ছাতা) ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম বলেন, উচ্চ জোয়ারের কারণে প্রতিদিন ৬ বার করে ছাতা সরিয়ে নিয়ে শুকনো স্থানে রাখতে হচ্ছে। এতে পর্যটকদেরও ছাতা থেকে উঠে পুনরায় আরেক স্থানে বসতে হচ্ছে। আর জোয়ারের পানিতে একের পর এক বালিয়াড়ি ভেঙে যাচ্ছে। যার কারণে সৈকত সংশ্লিষ্ট ব্যবসা হুমকির মুখে পড়েছে।

লাবণী পয়েন্টে দায়িত্বরত লাইফ গার্ড কর্মী জহির বলেন, এত উচ্চ জোয়ার আর কোনো বছর দেখিনি। চলতি বছর সর্বোচ্চ জোয়ারের পানি আঘাত করছে উপকূলে। এতে সৈকতের মাদ্রাসা পয়েন্ট থেকে শুরু করে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত বালিয়াড়ি ভেঙে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের স্থাপনা। যার কারণে সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়ছে সৈকত। আর সৈকতে নামতে গিয়ে অনেক সময় আহত হচ্ছেন পর্যটকরা।

আরও পড়ুনঃ  আত্রাইয়ে কৃষক লীগের নির্বাচনী বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত

ঢাকা থেকে আসা কলেজ শিক্ষার্থী সোহান বলেন, দলবেঁধে লাবণী সৈকতে নেমেছিলাম। তবে, জোয়ারের কারণে জিও ব্যাগ তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে ইটের রাস্তা ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। যার ফলে সাগরের নোনাজলে নামতে গিয়ে হোচট খেয়ে দুই বন্ধু পড়ে গেছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাসুম কক্সবাজার লিখেছেন, গত ৫ বছরে পদ্মা সেতুর চেয়ে বেশি টাকা খরচ হয়েছে। তারপরও কিছু দুর্নীতিবাজ ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোডের্র কিছু কর্মকর্তারা আজ এ অবস্থা!

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ওড়িষ্যা উপকূল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে সুস্পষ্ট আকারে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছে। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এতে সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সুস্পষ্ট লঘুচাপ ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারের স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে চলাচলের জন্য বলা হয়েছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী তানজির সাইফ আহমেদ বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সৈকতে ডায়বেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত বর্ষা মৌসুমে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। এতে প্রাথমিকভাবে সৈকতের মাদ্রাসা পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্টের কিছু অংশ জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙনরোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে স্থায়ী কিভাবে সৈকত ভাঙন রোধ করা যায় তা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুনঃ  বিশ্ব ইজতেমা নিয়ে অনিশ্চয়তা

বৃহস্পতিবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্যুরিষ্ট পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয়েছে এ পরিস্থিতিতে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ফুটবল খেলা সম্পূর্ণ নিষেধ। শৃঙ্খল ও স্বাচ্ছন্দ্যময় সৈকত উপহার দিতে ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। যে কোনো প্রয়োজনে ট্যুরিস্ট পুলিশের সহায়তা নিন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান জানান, জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড আপাততে সৈকতের লাবণী পয়েন্টের কিছু অংশে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙনরোধ করা হচ্ছে। গত ১২ আগষ্ট পূর্ণিমার জোয়ারে সাগর আরও উত্তাল হতে পারে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড একসঙ্গে কাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন