পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন বা লবণাক্ত বনাঞ্চল সুন্দরবন। বিশ্বের প্রাকৃতিক এই বিস্ময় বন স্থান পেয়েছে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায়। বিশ্বখ্যাত এই বন সংরক্ষণে আইন করা হলেও তা মানা হচ্ছে না। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যত্রতত্র গড়ে তোলা হচ্ছে বরফকল। যা বিশ্ব ঐতিহ্যের এই বনের প্রতিবেশকে ঝুঁকিতে ফেলছে। এ ধরনের কারখানা স্থাপনের ফলে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিকৃত ও বিনষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।
সূত্রমতে, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে দেশের ১৩টি অঞ্চলকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন (ইসিএ) হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেই ঘোষণায় সুন্দরবন অঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ধরনের মিল বা কারখানা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। প্রজ্ঞাপনে বিশেষভাবে বলা হয়, বনের মাটি, পানি, বায়ু দূষণসহ শব্দ দূষণ সৃষ্টি করে এমন কোনো শিল্প বা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না।
তবে সরকারের এমন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় অবৈধভাবে বরফকল তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে উপজেলার বংশিপুর থেকে মুন্সীগঞ্জ যেতে মুনছুর সরদার গ্যারেজ নামক স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ বরফকল।
সরজমিনে জানা গেছে, কয়েকজন মিলে পুঁজি ভাগাভাগির মাধ্যমে বরফকল গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন বংশিপুর সরদার লেদের মালিক শেখ শাহীনুর রহমান ও কালীগঞ্জ উপজেলার মনিরুল ইসলাম। তাদের দুজনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন পাটকেলঘাটা পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের লাইনম্যান আব্দুস সবুর। তাদের যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে অতি মুনাফার বরফকল।
স্থানীয়রা জানান, প্রথমে শাহীনুর রহমানের উদ্যোগে স্থাপন করা হয় বংশিপুর বরফকল। কল চালু হওয়ার পর বিদ্যুতের ওভারলোডের কারণে দফায় দফায় বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার বিকল হতে থাকে। সে সময়ে শ্যামনগর পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের লাইনম্যান হিসেবে আব্দুস সবুর তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসেন। বরফকলের অতি মুনাফার লোভ পেয়ে বসলে বরফকলে পুঁজি বিনিয়োগ করেন সবুর। এতে অবিচ্ছ্ন্নিভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ পেতে থাকে তাদের হাত দিয়ে গড়ে ওঠা অবৈধ বরফকলগুলো।
এভাব যৌথ উদ্যোগে নওয়াবেকি এলাকাতেও পর পর দুটি বরফকল তৈরি করা হয়। তবে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী বনের মধ্যে এভাবে পরিবেশ-প্রতিবেশ বিনষ্টকারী বরফকল একের পর এক তৈরি হলেও নজরেই আসেনি পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাতক্ষীরা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলছেন, সুন্দরবন এলাকায় অবৈধ কারখানা তৈরি করলে তাদের বিরুদ্ধ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে বন এলাকায় বরফকল তৈরির জন্য পল্লীবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের ঘাড়ে দায় চাপিয়ে সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, তারা সংযোগ না দিলে তো কারখানা গড়ে উঠতে পারতো না।
জানতে চাইলে পল্লীবিদুতের শ্যামনগরের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সালাউদ্দীন বলেন, এগুলো পরিবেশ অধিদপ্তর দেখবে। আমরা সংযোগ যেমন দিতে পারি আবার সংযোগ বিছিন্নও করতে পারি। পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অভিযোগ থাকলে তারা জানালে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অবৈধ বরফকলের বিষয়ে জানতে চাইলে এসবের মূল উদ্যোক্তা শাহীনুর রহমান বন্ধ করার বদলে বরফকল চালাতে বরং সহযোগিতা চেয়ে বসেন। তিনি বলেন, অনেক টাকা-পয়সা খরচ করে মিলগুলো গড়ে তুলেছি। এখানে মুনাফা তো অনেক বেশি। আপনারা সহযোগিতা করেন। যদিও পরে প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে ও পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যানের পুঁজি বিনিয়োগ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি হঠাৎ ফোন কেটে দেন।
আনন্দবাজার/শহক