শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষে বঙ্গবন্ধুকে বিভ্রান্তের চেষ্টা করা হয়েছে

চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষে বঙ্গবন্ধুকে বিভ্রান্তের চেষ্টা করা হয়েছে

বাংলাদেশে ১৯৭৪ সালের সেপ্টেম্বরে সরকারিভাবে দুর্ভিক্ষ ঘোষণা করা হয়েছিল। এতে ৩০ হাজার লোকের মৃত্যুর কথা সরকারিভাবে নিশ্চিত করা হয়। তবে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে মতভেদ আছে। বেশির ভাগের মত হচ্ছে মৃতের সংখ্যা ১০ লাখের বেশি। সেই ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সে সময় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান খুবই সতর্ক ছিলেন। ওই বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই বঙ্গবন্ধু নিয়মিত খাদ্য সচিবের মাধ্যমে দেশের খাদ্যগুদামে চালের মজুত এবং কত চাল আনতে হবে তার হিসাব নেন। নগদ টাকা দিয়ে চাল কেনা হলো, কিন্তু আমেরিকা সেই জাহাজ আসতে দেয়নি। সেটা ঘুরিয়ে দিলো। চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ অনেকটা মনুষ্যসৃষ্টই বলতে হবে।

গতকাল সোমবার মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন’ এবং ‘বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব পদক-২০২২ প্রদান’ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। রাজধানী ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের ঘটনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আশপাশের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। আমাদের দেশের মানুষের বোধ হয় একটা চরিত্র আছে, সরকারে কেউ থাকলে তার আশপাশে যারা থাকে, তারা দেশের সার্বিক পরিস্থিতিটাকে খুব সুন্দরভাবে দেখাতে চেষ্টা করে।

সেই সময়ে সারাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে বঙ্গমাতার যোগাযোগ হতো জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দেশের কোথায় কী হচ্ছে তাও আমার মা জানতেন। মা আব্বাকে বললেন, চালের দাম কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে। আব্বা অফিসে এসে খবর নিলেন। অফিসে একজন জানালো, অত দাম না, এই দাম। আব্বা মাকে বললেন, আমি তো ওদের খবর নিতে বললাম, ওরা বললো এত কম। একটা অল্প দাম বলা হলো। তখন মা আব্বাকে বললেন, তোমাকে ঠিক তথ্য দেয়নি। তোমাকে টাকা দিচ্ছি, যে বলেছে তাকে বলিও আমাকে এক মণ চাল কিনে দিতে।

আরও পড়ুনঃ  ৩১ মে থেকে হজযাত্রা শুরু হবে

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সত্যিই টাকা দিলেন। কিন্তু ওই দামে আর চাল পাচ্ছে না। তখন মা আব্বাকে বললেন, এরা সবসময় তোমাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তুমি এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। অর্থাৎ রাষ্ট্র চালাচ্ছেন আমার বাবা, কিন্তু পাশে থেকেও ছোট ছোট জিনিসগুলো আমার মা খেয়াল করছেন। তারপর পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে চালের দাম কমে এসেছিল। ১০ টাকা কেজির চাল ৩ টাকায় নামিয়ে এনেছিলেন।

মা বঙ্গমাতার সহযোগিতায় বাবা বঙ্গবন্ধু মনে-প্রাণে দেশের জন্য কাজ করতে পেরেছিলেন বলে জানান তাদের কন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও আমার মা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো দিয়েছেন। সেটাই আমাদের স্বাধীনতা অর্জনে সব থেকে সহায়ক হয়েছে। ৬ দফা বাদ দিয়ে যদি আট দফায় চলে যেতো আওয়ামী লীগ, তাহলে এই দেশে কখনও মানুষের মুক্তি আসতো না।

বঙ্গমাতার মতো জীবন সঙ্গী বঙ্গবন্ধুর জন্য সৌভাগ্য বলে উল্লেখ করে মেয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই সঙ্গে আমার দাদা-দাদির কথাও বলবো। যে বাবা-মা বড় ছেলে কলকাতায় হোস্টেলে রেখে পড়াচ্ছেন। আকাঙ্ক্ষা থাকতে পারতো বড় ছেলে টাকা কামাই করে তাদের দেবেন। কিন্তু উল্টো তারা টাকা দিতেন এবং আমার মাও নিজের খরচের টাকা দিয়ে দিতেন। আব্বা এ রকম জীবন সাথী ও বাবা-মা পেয়েছিলেন বলেই আমাদের দেশের সংগ্রামে সাফল্য অর্জন করা এবং স্বাধীনতা অর্জন সহজ হয়েছিল।

মা বেগম মুজিব সংসার গুছিয়ে রাখতেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি কাজেই নিয়ম মেনে চলতেন। সেখানে তাঁর মধ্যে কোনও হতাশা দেখেনি। যখন যেখানে যে অবস্থায় থাকতেন সেভাবে তিনি চলতেন এবং আমাদেরও তা শিখিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  ১২-১৩ অক্টোবর সারাদেশে পণ্য পরিবহন ধর্মঘট

১৯৬৩ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরামর্শে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের বাড়ি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের নামে বঙ্গবন্ধু হেবা দলিলের মাধ্যমে লিখে দেন বলে জানান তাদের কন্যা শেখ হাসিনা। সে সময় তাদের বিয়ের কাবিন নামা থেকে বঙ্গমাতার জন্ম তারিখ জানা যায় বলে জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সেই থেকে মায়ের জন্মদিন আমরা খুব ঘরোয়াভাবেই পালন করতাম।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় বঙ্গমাতা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের নবনির্মিত ১০তলা ভবন উদ্বোধন করেন। মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূলপ্রবদ্ধ পাঠ করেন কথা সাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক। আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান চেমন আরা তৈয়ব। স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন