শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
তেলের মূল্যবৃদ্ধি-

কৃষিকাজ চালানো কঠিন

কৃষিকাজ চালানো কঠিন
  • কৃষকের ফাঁসির রায়
  • কৃষকের ফসলের দাম বাড়ে না
  • বাজারে আসছে না পাইকাররা

সার, কীটনাশকের পর লিটারে ৩৫ টাকা ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধিতে চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। বর্ষা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় সেচ দিয়ে আমন ধান চাষ করছেন তারা। এ অবস্থায় ডিজেলের দাম বাড়ায় কৃষকরা লোকসানের শঙ্কা করছেন। তারা বলছেন, দফায় দফায় কৃষি উপকরণের দাম বাড়লেও উৎপাদিত ফসলে মিলছে না কাক্সিক্ষত দর।

একলাফে অনেকটা দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়া কৃষকরা বলেন,  তেলের দাম এত বেশি থাকলে আমাদের পক্ষে কৃষি কাজ করা সম্ভব না। কৃষি কাজ চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। দুদিন আগে তেল আনলাম ৮২ টাকায়, আজ আনলাম ১১৬ টাকায়। তাহলে আমরা কৃষকরা কিভাবে বাঁচব। আমরা কিভাবে ফসল উৎপাদন করব।

কদিন আগে হঠাৎ করেই সারের দাম বৃদ্ধি এর উপর আবার ডিজেলের দাম বৃদ্ধি যেনো মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সার-ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন খরচ দাঁড়াবে প্রায় দ্বিগুণ। আবার দাম দিয়েও মিলছে না চাহিদামাফিক সার দাবি কৃষকদের। আর তাই ফসল উৎপাদনে লাভের হিসেবে খুব বেশি আশাবাদী হতে পারছেন না কৃষকরা।

এ ব্যাপারে একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির এই বাজারে সকল পণ্যের মূল্য উর্ধ্বগতি। এরমধ্যে এবছর সেচ পাম্প ব্যবহার করে চাষ করতে হচ্ছে। ফলে তেল ও বিদ্যুৎ খরচ লাগছে অতিরিক্ত হিসেবে।  এরপর আবার সার ও তেলের দাম বাড়লো।  এভাবে যদি সব কিছুর দাম বাড়ে তাহলে কৃষক চাষ করা বাদ দিয়ে দিবে। কারণ সব কিছুর দাম বাড়ে কিন্তু কৃষকের উৎপাদিত ফসলের দাম বাড়ে না। এই আবাদে যে পরিমাণ খরচ হচ্ছে, এতে করে ফসলের দাম যদি বেশি না পাওয়া যায় তাহলে অনেক কৃষক ঋণে জর্জরিত হয়ে যাবে। 

আরও পড়ুনঃ  আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসে আমালের মানববন্ধন 

মহাদেবপুর উপজেলার দেওয়ানপুর গ্রামের কৃষক আনিসুর রহমান বলেন, সার ও তেলের মূল্যবৃদ্ধি আমাদের কাছে ফাঁসির রায়ের সমতুল্য। কারণ কৃষির প্রধান উপকরণ হচ্ছে এই দুটা পণ্য আর সেই পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি মানে আমাদের কাছে ফাঁসির রায়ের কোন অংশের কম নয়। তিনি আরো জানান, ডিজেলের দাম বাড়ার কারণে কৃষি এখন কঠিন অবস্থায় পড়ে গেছে। সেচের পেছনে আরও ৫০ শতাংশ খরচ বৃদ্ধি পাবে, এমনিতেই কৃষকের মূলধনের সংকট, তার ওপর হঠাৎ জ্বালানি তেলের একসঙ্গে এত বেশি দাম বাড়ার ধাক্কা সামলানো তাদের জন্য কষ্টসাধ্য। তেলের দাম বাড়ার কারণে চলতি মূলধনের সঙ্গে আরও মূলধন যোগ করতে হবে, বাড়তি বিনিয়োগের বোঝা টানা তাদের জন্য অনেকটাই অসম্ভব।

কৃষকরা জানান, আগে শ্যালোমেশিনে এক ঘণ্টা সেচ দিতে ১২০ টাকা লাগলেও এখন এর পেছনে ব্যয় হবে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। নিশ্চিত ভাবে এই দাম বাড়ার বড় একটা প্রভাব পড়বে উৎপাদন ব্যয়ে। শেষমেশ চালের বাজারে গিয়ে ঠেকবে এর প্রভাব।

এবছর ধানের উৎপাদনে খরচ বাড়বে বলছে কৃষি বিভাগ। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মনজুরে মাওলা জানান, যেহেতু মৌসুমে তুলনামূলক কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। ফলে গভীর নলকূপের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে কৃষকদের। যেহেতু গভীর নলকূপ ব্যবহার করতে হচ্ছে এজন্য সেঁচ খরচ বাড়বে উৎপাদনে।

এই মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব শুধু কৃষিতেই নয় পড়বে যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও।  বাস, ট্রাক, ভ্যানের ভাড়া, লঞ্চসহ নৌযানের ভাড়াও বাড়বে। সবমিলিয়ে পরোক্ষ প্রভাব পড়তে চলেছে একাধিক খাতে। যে সব পণ্য পরিবহণের মাধ্যমে বাজারে আসে, সেগুলিরও দাম বাড়বে। ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আরোও এক দফা বাড়বে বলছেন বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুনঃ  কৃষি যন্ত্রপাতি রফতানির শীর্ষে বগুড়া

নওগাঁয় উৎপাদিত ফসল মাঠ থেকে আসে পাইকারি বাজারে সেখান থেকে জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। জেলার পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন যে বাজারে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা আসতেন সেই বাজারে নেই কোন পাইকার। আড়তদারদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে পরিবহনখাতের কোন গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না যদিও দু একটি পাওয়া যায় তাদের ভাড়া দেগুন ফলে কোন পাইকার বাজারে ফসল ক্রয় করছে না। ফলে উৎপাদিত ফসল নিয়ে বিপাকে পারেছেন কৃষকরা।

বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রেজাউল করিম জানান, চাহিদা মাফিক সার পাচ্ছেন না। যোগাযোগ ব্যবস্থার অযুহাতে সময় মত সার দিচ্ছে না বিএডিসি। তবে সব সার নয় কিছু সারের ঘাটতি রয়েছে। আমরা আশা করছি এটি খুব দ্রুত সমাধান হবে। তিনি আরো বলেন, গত জুলাই মাসে ৬ হাজার ৩২৭ মেট্রিকটন বরাদ্দের বিপরিতে মিলছে ৪ হাজার মেট্রিকটন ইউরিয়া সার। আর গেলো জুন এবং জুলাই মাসে এমওপি’র ঘাটতি রয়েছে ২৫শ মেট্রিকটন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন