শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ড্রামের ময়লা তেল বোতলে বাজারাজাত

ড্রামের ময়লা তেল বোতলে বাজারাজাত

ঠাকুরগাঁওয়ে একটি কথিত কারখানায় ড্রামের ময়লা তেল বোতলে ভরে বিক্রি করা হচ্ছে। সদর উপজেলার রহিমানপুর কৃষ্ণপুর গ্রামে গত এক মাস যাবৎ চলছে এ কার্যক্রম।

গত শনিবার বিকাল সাড়ে ৫ টার ওই কারখানায় সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাহির থেকে দরজা বন্ধ। শুধু গ্রীল গেট হালকা ফাঁকা। কারখানাতে নেই কোনো শব্দ। বাহিরে একজনের অনুমতি নিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখা গেল চার জন নারী বোতলের তেল ভরছেন। দুজন ছেলে তেল প্যাকেট করছেন আর একজন মহিলা ও একজন পুরুষ সাদা বোতলে কোম্পানীর লেবেল আঠা দিয়ে বোতলে লাগাচ্ছেন।

দেখা যায় ময়লাযুক্ত ড্রামের ময়লা তেল একটি প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে তেল পরিশুদ্ধ করণ স্বয়ংক্রীয় মেশিন ছাড়া স্টীলের নল দিয়ে পানি বাহিত টেপের মাধ্যমে বোতলে ভরছেন নারী শ্রমিকরা। চারদিকে নোংরা পরিবেশ। মেঝেতে তেল পরে হয়েছে সেঁতসেঁতে। যে লেবেল বোতলের গায়ে লাগানো হচ্ছে তা আবার বিএসটিআইয়ের লগো সংযুক্ত করা হয়েছে।

কারখানার মালিকরে কাছে জানতে চাইলে মালিক উপস্থিত থেকেও নিজের পরিচয় গোপন করেন। মালিক ডাক্তারের কাছে আছে তিনি আসছেন বলে কালক্ষেপন করে যত্রতত্র ফোন করেন। এরই মধ্যে তিনি যে মালিক আশরাফুল ইসলাম তা নিশ্চিৎ হওয়া গেছে।

এই কারখানা সরকারের অনুমোদন আছে কিনা? বিএসটিআইয়ের অনুমোদন আছে কিনা? এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর দিতে রাজি নন মালিক আশরাফুল ইসলাম।

এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করেন বিএসটিআইয়ের কোনো অনুমোদন তিনি পাননি। পরিবেশের ছাড়পত্রসহ আনুসাঙ্গিক কোনো কাগজপত্র তিনি দেখাতে পারেননি। তিনি আরও বলেন, গত দেড় মাস আগে প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়েছে এখনও সব পক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি এও বলেন, সারাদেশে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই অনুমোদনহীন চলছে আমারটা চললে সমস্যা কোথায়? এর পর আর কোন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তাৎক্ষনিক মোটরসাইকেল নিয়ে স্থান ত্যাগ করে চলে যান তিনি।

আরও পড়ুনঃ  বর্ষার আগমনে নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত বেড়ার কারিগররা

তেল বোতলজাত যারা করছেন এমন কোন শ্রমিকই কথা বলতে রাজি হননি। তবে নিজের নাম না বললেও একজন নারী বলেন, সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তিনি কাজ করে ২০০ টাকা পান। এতে তার শ্রমের মূল্য না পোষালেও অভাবের সম্মুখিন কাজ করেন।

ফাইজান হাবিব বলেন, আমি একদিন রাত ১০টার দিকে তেলের গাড়ি দেখে থামাই। তখন জিজ্ঞাসা করি এসব ড্রামে কি আর কোথায় যাচ্ছে। তারা বলেন আশরাফুলের সয়াবিনের কারখানায় যাবে। আমি তাদের ছেড়ে দিয়ে ভাবি কারখানাতে তেল যাবে কেন? তারানতো তেল উৎপাদন করে বাহিরে পাঠাবে। তখনি আমার সন্দেহ হয়। গোপনে এসব খোলা তেল তারা বোতলজাত করছে।

স্থানীয় যুবক ফারহান বলেন, এভাবে সরকারকে অবগতি না জানিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা অন্যায়। সেই সাথে খোলা নোংরা তেল স্বয়ংক্রীয় মেশিনে পরিশুদ্ধ না করে বোতলে করে বিক্রি ভোক্তার সাথে ধোঁকা। অনতিবিলম্বে সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ।

এবিষয়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মোঃ সামসুজ্জামান বলেন, যদি সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোন কারখানা চলে থাকে তবে সেটি অবৈধ। আমরা খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন