শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তেলের আগুন কৃষিতে

তেলের আগুন কৃষিতে

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সারাদেশের দেশের ন্যায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ডিজেলের দাম লিটারে ৩৪ টাকা, অকটেনের দাম লিটারে ৪৬ টাকা আর পেট্রলের দাম লিটারে ৪৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন মূল্যে এখন এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে ১১৪ টাকা লাগছে। এক লিটার অকটেনের জন্য দিতে হচ্ছে ১৩৫ টাকা। আর প্রতি লিটার পেট্রলের দাম গুনতে ১৩০ টাকা।

জ্বালানি তেলের হটাৎ মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। জ্বালানি তেলের উর্ধ্বগতিতে  জনজীবনে দেখা দিয়েছে নাভিশ্বাস। হঠাৎ জ্বালানি তেলের দামের উর্ধ্বগতির কারণে প্রভাব পড়েছে কৃষি খাতে । সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায় কৃষকরা জমিতে সেচ ও পাওয়ার টিলার দিয়ে জমিতে চাষ দিচ্ছেন । এসব পাওয়ার ট্রিলার ও সেচ যন্ত্রে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডিজেল। ডিজেলচালিত এসব যন্ত্র কৃষিতে ব্যাপক ব্যবহার হওয়ায় খরচ বেড়েছে কৃষকদের। উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় এখন বিআর ২২ ও ২৩ জাতের ধানের চারা রোপণ করছেন কৃষকরা। তারা জমিতে সেচের জন্য ডিজেলচালিত পানির পাম্প ব্যবহার করছেন। এসব পানির পাম্প দিয়ে সেচ দিতে তাদের ব্যয় বেড়েছে।  জমিতে সেচ দিতে দেখা যায় কৃষক আফজাল মিয়াকে । ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি জানান,’সারের দামের সাথে এখন বাড়লো ডিজেলের দাম । আমরা চাষ করে কিভাবে লাভবান হবো? এত দাম দিয়ে ডিজেল কিনে চাষাবাদ করে আমাদের লাভ হবে না’ ।

উপজেলার সহস্রাধিক কৃষক পাওয়ার ট্রিলার দিয়ে জমিতে চাষ দেন । এসব পাওয়ার ট্রিলারে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডিজেল। এতে ধান রোপনে নতুন করে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষকদের। অনেক কৃষকের নিজস্ব পাওয়ার ট্রিলার রয়েছে। তারা নিজের পাওয়ার ট্রিলার দিয়ে জমিতে চাষ দেন। ডিজেলের দাম বাড়ায় তাদের ধান চাষে ব্যয় বেড়েছে। আবার অনেকের নিজের পাওয়ার ট্রিলার না থাকায় ভাড়ায় পাওয়ার টিলার দিয়ে ধানের জমিতে চাষ দিচ্ছেন। উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের কৃষক জয়নাল আহমদ জানান, ‘ জমি চাষ দিতে এখন বেশি খরচ হচ্ছে। ডিজেলের দাম বাড়ায় এখন পাওয়ার ট্রিলারের মালিককে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। এতে আমাদের খরচ বেশি হচ্ছে। কৃষকদের বাঁচাতে সরকারের উচিত কৃষি খাতে উৎপাদন ব্যয় কমানো’। এছাড়াও গ্রামের অনেক জায়গায় ধান ভাঙানোর ডিজেলচালিত মেশিন ব্যবহার করা হয় ।ফলে ক্ষুদ্র আকারের চাষিরা ধান ভাঙাতে হিমশিম খাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । বিআর ২২ ধানের চারা ৯ শতক জমিতে রোপণ করেছেন কর্মধা ইউনিয়নের বাসিন্দা মাযহারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘এখন রোপণ করতে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। আবার ধান পাওয়ার পর ধান ভাঙানোতে ব্যয় বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এভাবে কৃষকরা বাঁচতে পারবে না’।

আরও পড়ুনঃ  ঘূর্ণিঝড় রিমাল: ২০ জেলায় ৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি

জ্বালানি তেলের হটাৎ মূল্যবৃদ্ধির ফলে এসব কৃষকদের অতিরিক্ত দামে ডিজেল কেনার কারণে বৃদ্ধি পেতে পারে ধানের দাম । কারণ ধান রোপণে কৃষকদের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। জ্বালানি তেলের দাম যদি দীর্ঘ সময় ধরে ঊর্ধ্বগতিতে থাকে তাহলে ধানের দাম না বাড়লে লোকসানে পড়বেন এসব প্রান্তিক চাষিরা। কৃষক রুবেল মিয়া বলেন,’ডিজেলের দাম বাড়ায় এখন আমাদের অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে। যদি বিক্রির সময় বেশি মূল্যে না পাই তাহলে কষ্ট করে কোনো লাভ হবে না’। ডিজেলের দাম বেশি হওয়াতে বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র চাষিরা । যাদের অল্প জমি রয়েছে তারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। তারা মনে করেন কৃষকদের কথা বিবেচনা করে ডিজেলের দাম হাতের নাগালেই রাখাই উচিত। ধানের দাম ও উৎপাদন খরচ মিলিয়ে তারা কতটুকু লাভবান হবেন সেই শঙ্কায় কৃষকদের দিন যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন