কুড়িগ্রামের উলিপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন সময়ে বৈদ্যুতিক পাখার ব্লেডের আঘাতে চোখ হারিয়েছেন ওই স্কুলের এক নারী সহকারি শিক্ষক। গত সোমবার দুপুরে উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের গোড়াই দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে মঙ্গলবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই শিক্ষকের ক্ষতিগ্রস্ত চোখে অপারেশন করা হয়। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ওই শিক্ষকের স্বামী জানান, ফ্যানের ব্লেডের আঘাতে ওই শিক্ষকের ডান চোখের কর্ণিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিনি ওই চোখ দিয়ে আর দেখতে পারবেন না।
আহত শিক্ষকের নাম শিরিনা আখতার (৪০)। তিনি জেলার চিলমারী উপজেলার শরিফেরহাট এলাকার বদরুল আলম খন্দকারের মেয়ে এবং কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার নাজিরা চৌধুরী পাড়া গ্রামের শেখ আলমগীর কবীর বাবলু’র স্ত্রী। ২০২০ সাল থেকে তিনি ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন।
গোড়াই দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মিলনী রানী রায় জানান, সোমবার দুপুরে শিক্ষক শিরিনা আখতার ৪র্থ শ্রেণির ক্লাস নিতে যান। কিছুক্ষণের মধ্যে হঠাৎ তার চিৎকার শুনে আমরাসহ আশপাশের লোকজন ক্লাস রুমে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি তার ডান চোখ দিয়ে রক্ত ঝড়ছে। তিনি শুধু চিৎকার করছেন। মাথার উপরের ফ্যানটি বাঁশ দিয়ে বাঁধা ছিল। একদিকের বাঁধন আলগা হয়ে বাঁশটি হেলে পড়লে চলন্ত ফ্যানের একটি ব্লেড সরাসরি তার ডান চোখে আঘাত হানে। পরে আহত শিক্ষিকাকে দ্রুত কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার চোখের অপারেশন করা হয়।
আহত শিক্ষকের স্বামী শেখ আলমগীর কবীর বাবলু জানান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. মুফাখ্খারুল ইসলাম মুকুল’র নেতৃত্বে চিকিৎসকদের একটি দল মঙ্গলবার সকাল ১১টা থেকে দুই ঘন্টাব্যাপী তার চোখের অপারেশন করেন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন আঘাতপ্রাপ্ত চোখের কর্ণিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়ায় ওই চোখ দিয়ে তার দেখার সম্ভাবনা নেই। তিনি আরও বলেন, আমার স্ত্রীকে এখনও তার চোখ নষ্ট হওয়ার খবর জানানো হয়নি। সে শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক অসুস্থ্য। আমি তার জন্য সবার দোয়া চাই।
গোড়াই দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামিমা ইয়াসমিন বলেন, আমাদের স্কুল ঘরটি অপেক্ষাকৃত নিচু হওয়ায় আকস্মিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আমরা মর্মাহত।
এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাদিরউজ্জামানকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিপিইও) শহীদুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আনন্দবাজারকে বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজন। এজন্য আমরা মর্মাহত। আমরা তাঁর দ্রুত সুস্থ্যতা কামনা করছি। ভুক্তভোগী শিক্ষক লিখিত আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ তার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করবে।