শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বুড়িমারী স্থলবন্দর

বন্দরে আমদানি বাণিজ্যে অনীহা

বন্দরে আমদানি বাণিজ্যে অনীহা

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশন (কাস্টমস্) বন্দর টাকার বিপরীতে দফায় দফায় ডলারের দাম বৃদ্ধি ও মূল্য অস্থিতিশীলতার কারণে রাজস্ব আয় কমতে শুরু করেছে। এতে ভাটা পড়েছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। এ অবস্থায় কোনো সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী ভারত থেকে মালামাল আমদানি করছেন না। গুটিকয়েক ব্যবসায়ী ভারত থেকে গম, ভুট্টা, পাথর আমদানি করতে দেখা গেছে।

এদিকে ভারত থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাংলাদেশ ফিরে আসা সৈয়দপুরের বাসিন্দার দেলোয়ার হোসেন জানান, ভারতের টাকার মান খুবই কমে গেছে। বাংলাদেশি ১০০ টাকা দিলে ভারতে মাত্র ৭৫ টাকা প্রদান করেন। এতে মেয়ের চিকিৎসায় অনেকগুণ বেড়ে গেছে। ভারতের ১০ দিন থাকার পর আজ মেয়েকে নিয়ে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ফিরলাম।

এদিকে টাকার বিপরীতে দফায় দফায় ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। ডলারের মূল্য স্থিতিশীল না হওয়ায় ভারত থেকে পণ্য আমদানি করতে সাহস পাচ্ছেন না বুড়িমারী স্থলবন্দরে ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বেশী করে গম, ভুট্টা, পাথর আমদানি করলেই লোকসানের মুখে পড়ছেন তারা। লোকসানের মুখে পড়ার শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দরের গুটিকয়েক ব্যবসায়ী গম, ভুট্টা পাথর আমদানি করতে দেখা গেছে।

পাশাপাশি কাস্টমস, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীদের দাবি বুড়িমারী স্থলবন্দরের সক্ষমতা ও আয়তন কম, দেশের প্রয়োজনে শুল্কমুক্ত সুবিধায় খাদ্যশস্য আমদানি ও করোনাভাইরাসের প্রভাবে রাজস্ব আয় কমেছে।

সরেজমিনে বুড়িমারী স্থলবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, বুড়িমারী স্থলবন্দর ইয়ার্ডে ভারতীয় ট্রাক থেকে গম, ভুট্টা, পাথর খালাস করে বাংলাদেশি ট্রাকে উঠানো হচ্ছে। কিছু মালবাহী ভারতীয় ট্রাক বুড়িমারী স্থলবন্দরে নির্দিষ্ট ব্যবসায়ীদের গোডাউনের মালামাল আনলোড করতে দেখা গেছে। এদিকে ভারত থেকে ট্রাক বাংলাদেশ কম প্রবেশ করায় অনেক শ্রমিকে অলস সময় পার করতে দেখা গেছে।

আরও পড়ুনঃ  আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘আমফান’

স্থলবন্দর সূত্র জানায়, বুড়িমারী স্থলবন্দরে কাটা পাথরের মূল্য প্রতি সেপ্টি ৬০ থেকে ৬৬ টাকা, গম প্রতিমণ ১৪৮০টাকা, ভুট্টা প্রতিমণ ১১শত থেকে ১২শত টাকা। প্রতি ১ ডলার বাংলাদেশ ১০৯টাকা, বাংলাদেশের ১শত টাকায় ভারতীয় রুপি ৭৫ টাকা।

জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের (কাস্টমস্) রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ১৩৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। আয় হয়েছে ৯১ কোটি ৯২ লাখ ২১ হাজার টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৫ কোটি ৯০ লাখ ৭৯ হাজার টাকা কম আয় হয়েছে। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১১৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। আয় হয়েছে ১১১ কোটি ১১ লাখ ৩১ হাজার টাকা। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২ কোটি ৬৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা কম আদায় হয়েছে। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে এ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০৪ কোটি ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আদায় হয়েছে ৫৬ কোটি ৭২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ওই অর্থবছরেও রাজস্ব কম আদায় হয়েছে ৪৮ কোটি ৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।

বুড়িমারী শুল্ক স্টেশন কাস্টমস সূত্র জানায়, কাস্টমস, এক্সাইজও ভ্যাট কমিশনারেট রংপুর বিভাগের অধীনে বুড়িমারী স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের রেকর্ড প্রবৃদ্ধি ৯৫.৮৯% অর্জিত হয়। এ শুল্ক স্টেশনে রাজস্ব আদায়ের ইতিহাসে এটি অতীতের চেয়ে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।

অপরদিকে বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় ৫৬ কোটি ১০ লাখ টাকা। আয় হয়েছে ৫৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। রাজস্ব কম আয় হয়েছে ৫১ লাখ টাকা। ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আয় করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা আয় করে তাঁরা। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ৫৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। আয় হয়েছে ৪৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। 

আরও পড়ুনঃ  করছাড়ের সুবিধা পেতে শর্তারোপ

বুড়িমারী স্থলবন্দরে বসে থাকা একজন শ্রমিক জানান, বুড়িমারী বন্দরে আগের মত আর কাজ কাম নাই। ভারত থেকে ট্রাক আসেনা তাই বসেই দিন পার করছি। পরিবারকে নিয়ে কি খাব সেই চিন্তায় আছি। আগের চেয়ে কাজ কম কমে গেছে।

বুড়িমারী স্থলবন্দরে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী বকুল হোসেন বলেন, ডলারের মূল্য স্থিতিশীল না হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা শঙ্কামুক্ত নয়। ডলারের মূল্য স্থিতিশীল হলে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পণ্য আমদানি করে আবারও ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করবে।

বুড়িমারী স্থলবন্দরে সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী ইমদাদুল হক বলেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আমরা মালামালের এলসি ফেরত নিচ্ছি। কারণ বেশি দামে মাল কিনে বাংলাদেশে এনে লোকসানের মুখে পড়তে হবে। এতে অনেকেই ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। ডলারের মূল্য কমলে আবারও ব্যবসা শুরু করবেন ব্যবসায়ীরা।

বুড়িমারী স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহকারি পরিচালক (ট্রাফিক) রুহুল আমীন বলেন, ‘স্থলবন্দর থেকে গাড়ি প্রবেশ, অবস্থান, পণ্য রাখা, গোডাউন/শেড-ইয়ার্ড, যাত্রীগমণ, ওয়েমেন্ট প্রভৃতি হতে ফি/চার্জ আদায় হতে রাজস্ব আয় হয়ে থাকে। পণ্য ও গাড়ী কম আসা-যাওয়া করলে আমাদের ট্যারিফ কম আয় হয়। বুড়িমারী স্থলবন্দর সম্প্রসারিত করা হলে রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশন কাস্টমস্ সহকারী কমিশনার (এসি) জে এম আলী আহসান বলেন, দফায় দফায় ডলারের দাম বৃদ্ধিতে বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানি করছে না। ভারত থেকে পণ্য আমদানি করলেও লোকসানের মুখে পড়ছে ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে পাথর, ভুট্টা, গম  প্রবেশ করছে বাংলাদেশ।

আরও পড়ুনঃ  ‘ঢাকায় ৬০ শতাংশ পুরুষ নারীর নির্যাতনের শিকার’

তিনি আরও জানান, ‘বুড়িমারী স্থলবন্দরের সক্ষমতা কম, শুল্কমুক্ত সুবিধায় ভুটান হতে পণ্য আমদানি, খাদ্যশস্য আমদানিতে শুল্ক কম। এতে রাজস্ব কমে আসছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন