ছড়া পার হয়ে আবার পায়ে হেঁটে পাহাড় উঠা-নামা করে বাড়িতে যাওয়া-আসা করেন পাহাড়ি ত্রিপুরা মানুষরা। তার উপর খাগড়াছড়ি শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দুরে উত্তর মহালছড়া ত্রিপুরাপাড়া। উত্তর মহালছড়া ও দক্ষিণ মহালছড়া এলাকায় যেতে মহালছড়া নামের ছড়ার ওপর কালভার্ট গত বছর বর্ষা মৌসুমে ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে কালভার্টটি ধসে পড়ে যায়। এক বছরেও নতুন করে কালভার্ট নির্মাণ করা হয়নি।
পাড়ার পাঁচশ পরিবার থেকে প্রতি পরিবার ২০, ৫০ ১০০ টাকা এভাবে ৩০ হাজার টাকা তোলে এক বছর আগে ধসে পড়া কালভার্টের ওপর ৩০ হাজার টাকা ব্যয়ে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে পারাপার করছেন উত্তর মহালছড়া, দক্ষিণ মহালছড়া, দেওয়ানপাড়া, বিজয়কৃষ্ণপাড়ার মানুষরা।
উত্তর মহালছড়া এলাকার বাসিন্দা তনি ত্রিপুরা বলেন, গত বছর ভারি বৃষ্টিতে পাহাড়ি ঢলে কালভার্টটি ধসে পড়ে যায়। এক বছর যাবৎ সরকারের পক্ষ থেকে নির্মাণের কোনো উদ্যোগ নেই। তাই আমরা এলাকার মানুষরা মিলে টাকা তোলে ধসে পড়া কালভার্টের উপর বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে কোনো রকমে পারাপার করছে গ্রামবাসিরা। সাঁকো র্দীঘ স্থায়ী নয়। এ বর্ষা ভেঙে যেতে পারে। বেশি কষ্ট পাচ্ছে গ্রামের মানুষরা। ভোগান্তির শেষ নেই।
সাঁকো তৈরি উদ্যোক্তা সতিষময় ত্রিপুরা বলেন, ৫শ’ পরিবারের বেশি মানুষ পারাপার এ স্থান দিয়ে। পাঁচশ পরিবার থেকে টাকা তোলে গ্রামের মানুষরা বাঁশের সাঁকো তৈরি করেন। এক বছর ধরে দূরের রান্তা ব্যবহার করে যাতায়াত করেছে।
সতিষময় ত্রিপুরা বলেন, আগে কালভার্ট দিয়ে পিকাআপ, চাঁদের গাড়ি পর্যন্ত গ্রামে গাড়ি মালামাল নিয়ে যেত। গ্রামে এখন এক বস্তা চালের বস্তা নিয়ে যেতে পারে না। শিশুরা স্কুলে নিয়মিত যেতে পারে না এমন অবস্থা। পাঁচ গ্রামের মানুষদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, ধসে পড়া কালভার্টের ওপর স্থানীয় মানুষরা গত ২২ জুন ৩০ হাজার টাকা খরচ করে সাঁকো তৈরি করেছে। সকল বয়সিরা এখন পারাপার করে প্রযোজনীয় কাজ করছেন। কালভার্ট ধসে পড়া ওই পারে তিনটি গরু ও মুরগির কামার রয়েছে।
গোপালকৃঞ্চ ত্রিপুরা বলেন, গত বছর বর্ষা মৌসুমে ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে কালভার্টটি ধসে পড়ে যায়। এক বছর হয়েছে ছড়ার উপর কালভার্ট পড়ে আছে। নতুন করে কালভার্ট নির্মাণের উদ্যোগ নেই। আগে সিএনজি ও অটোরিক্সা মোটরসাইকেল পাড়ায় যাওয়া-আসা করত। মানুষরা হেঁটে মালামাল পাড়ায় নিয়ে যেতে হয়।
ঠাকুরছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রদীপ ত্রিপুরা জানায়, কালভার্ট ভেঙ্গে পড়ে থাকায়। আমরা নিয়মিত স্কুলে যেতে পারিনি। পাড়ার মানুষরা মিলে সাঁকো তৈরি করেছে। সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতে পারছি।
গোলাবাড়ি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড মেম্বার কুবলেশ্বর ত্রিপুরা বলেন, মানুষের পারাপারের সমস্যা হচ্ছে। চেয়ারম্যান প্রকল্প দিয়েছে। দ্রুত কিছু না কিছু করতে হবে। অতি শিগগিরই চেয়ারম্যানকে প্রদেক্ষেপ নিতে বলি।
গোলাবাড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান উল্লাস ত্রিপুরা বলেন, শুনেছি স্থানীয় মানুষরা মিলে সাঁকো তৈরি করে পারাপার করছেন। পাড়ার মানুষরা কষ্ট পেলেও কিছু করার নেই। এক বছর হয়েছে ভেঙ্গে গেছে। চেষ্টা করছি দ্রুত একটি কালর্ভাট নির্মাণে। তিনি বলেন, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রাণালয় এবং এলজিইডিতে আবেদন করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা পরিষদের ভারপাপ্ত চেয়ারম্যান নিউসা মর্গ বলেন, উত্তর মহালছড়া এলাকার কালভার্টটি বিষয় নিয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। দেখছি কী করা যায়। সামনে এডিবির প্রকল্পের আওতায় আনা যায় কী না চেষ্টা করব। তাছাড়া এলজিইডির সাথে আলাপ করে দেখব।