শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভূতের বাড়ি সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতাল

ভূতের বাড়ি সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতাল

এক সময়ের রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারি আর যাত্রীদের চিকিৎসা সেবার ভরসা নীলফামারী সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতালটি এখন জনমানবহীন ভূতুড়ে বাড়ির মতো। পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, সারি সারি শয্যা থাকলেও, নেই চিকিৎসক আর রোগী। প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেই রেলওয়ে হাসপাতালটিতে। ব্যবহার না হওয়ায় বিকলের পথে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সব যন্ত্রপাতি। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে হাসপাতালটির চিকিৎসাসেবা। ৮২ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন রোগী থাকে মাত্র ১ থেকে ২ জন। অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে যখন ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশী রোগীর চাপ, তখন এ হাসপাতাল পুরোটাই ফাকা।

জানা যায়, এ হাসপাতালে চিকিৎসক থাকার কথা ৭ জন। তবে রয়েছেন মাত্র ১ জন। তিনিই আবার হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। অফিস ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি তিনিই দিচ্ছেন চিকিৎসা সেবাও। রেলওয়ের এ হাসপাতালটিতে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, রয়েছে ওষুধের স্বল্পতা। নার্স, সিস্টার, ফার্মাসিস্টসহ অন্য পদগুলোর অধিকাংশই খালি। মূল্যবান যন্ত্রপাতিগুলো পরে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। এতে পুরোপুরি বন্ধ পরীক্ষা নিরীক্ষাও। এতে মিলছে না কাঙিক্ষত সেবা। এতে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানা সংস্লিষ্ট প্রায় ৫ হাজার পরিবার। সৈয়দপুর রেলওয়ের অফিস স্টাফ মমিনুল ইসলাম জানায়, রেলওয়েতে যোগ দেওয়ার পর দেখেছি সেখানে প্রতিদিন নিম্নে ২০০ থেকে ৩০০ রোগী আসত চিকিৎসা নিতে, ডাক্তার ছিল ৫ জন, আন্তঃ বিভাগে প্রায় ৪০ থেকে ৬০ জন রোগী থাকত। নিউরো ডাক্তার ছিল ৩ জন। ডাক্তার না থাকায় করোনার পর থেকে রুগীর কমে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  নাটোরে ওয়ালটনের উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ

সেবা প্রার্থী রাব্বি ইসলাম বলেন, রেলওয়ের সব থেকে বড় হাসপাতাল এটি। এখানে সেবার মান নাই কারণ রেলে প্রায় ৫ হাজার পরিবারের সেবাতো একটি ডাক্তার দিয়ে দেওয়া সম্ভব না। এছাড়াও বাইরে থেকেও মানুষ সেবা নিতে আসে। রেলওয়ে স্টাফ মোতাহারা বেগম বলেন, রেলের হাসপাতাল, আমরা রেলে চাকরি করি। তবে, এখানে নাই তো মহিলা ডাক্তার। শুধু একটা ডাক্তার। মহিলা ডাক্তার না থাকায় আমাদের বাইরে যাইতে হয়। এদিকে লালমনিরহাটের রেলওয়ে হাসপাতাল ও সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতাল, দুই হাসপাতালের প্রশাসনিক দায়িত্ব আছেন একজন ডাক্তারই। দুই হাসপাতালে একই সঙ্গে প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকায় আশানুরূপ সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না জানিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে সৈয়দপুরের বিভাগীয় মেডিকেল অফিসার  ডা. আনিছুল হক বলেন, সৈয়দপুর রেলওয়ে হাসপাতালটি ৮২ সজ্জার। এখানে আমাদের মোট ডাক্তারের থাকার কথা ৭ জন। মাস দুয়েক আগে আমাকে একজন ডাক্তার দিয়েছিলো সেও ট্রেনিং এ গেছে। এখন একাই ৭ জনের দায়িত্ব দেখতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, মজার বিষয় হলো আমি লালমনিরহাটের রেলওেয়ে হাসপাতালের ও অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি। সেখানেও কোনো ডাক্তার নাই। ১০ জন ডাক্তার থাকার কথা ১০ জনের মধ্যে আমি একা। সব মিলিয়ে ১৭ জন ডাক্তারের কাজ আমি একা করছি। একদিকে আমাকে প্রশাসনিক কাজ করতে হয়, অন্যদিকে রোগীকে সেবা দিতে হয়। এতে রোগী আসলে অপেক্ষা করতে হয়। সেই সঙ্গে এখানে এ্যাম্বুলেন্স নাই এটাও বড় ধরনের সমস্যা।

এ বিষয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সুজিত কুমার রায় মুঠোফোনে জানান, চিকিৎসক নিয়োগে বিধি তৈরির কাজ করছে মন্ত্রনালয়। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন