শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অস্থির চালের বাজার

অস্থির চালের বাজার

আমদানির পরও দেশের সর্ববৃহৎ চাল উৎপাদনকারি জেলা নওগাঁয় পাইকারি ও খুচরা বাজারে বেড়েছে চালের দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে দাম বেড়েছে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত। চালের ভরা মৌসুমেও দেশের বাজারে চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের কম শুল্কে চার দফায় ৯ লাখ ১০ হাজার টন চাল আমদানির সুযোগ দিয়েছে সরকার। ইতিমধ্যে ভারত থেকে ১২ হাজার ২২৫ মেট্রিক টন চাল আমদানিও করা হয়েছে। তবুও বাজারে চালের দাম না কমে উল্টো বাড়তে শুরু করেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে পাইকারিতে মোটা চাল ৫০ কেজির বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। মিনিকেটের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ১৫০ টাকা পর্যন্ত। খুচরা বাজারে কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে প্রায় সব ধরনের চালের দাম।

আমদানিকারকরা বলছেন, ডলারের উচ্চমূল্য এবং ভারতে চালের দাম বাড়তি থাকার কারণে চাল আমদানিতে খরচ বেড়ে গেছে। আমদানিকৃত চালের সব খরচ হিসাব করে দেখা গেছে, দেশীয় বাজারের চালের তুলনায় ২ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেশি খরচ পড়ে গেছে। এ কারণে অনেক আমদানিকারকই চাল আমদানিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

ইতিমধ্যে ভারত থেকে ৩০০ মেট্রিক টন মোটা চাল ও ২০০ মেট্রিক টন আতব চাল আমদানি করেছে মেসার্স ঘোষ ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক দীনেশ ঘোষ জানান, ডলারের দাম বাড়ার কারণে যাঁরা চাল আমদানি করছেন, সবাই ক্ষতির মুখে পড়ছেন। প্রতি কেজি চালে দুই থেকে আড়াই টাকার মতো লোকসান দিয়ে বিক্রি করতে হচ্ছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি, ডলারের দাম স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত আর চাল আমদানি করব না। এ ব্যবসায়ী আরও জানান, দেশের বাজারে চালের সংকটের কারণে সরকার শুল্ক কমিয়ে আমদানির অনুমতি দিয়েছিল। এখন ডলারের দাম বাড়ার কারণে সাহস পাচ্ছে না আমদানিকারকরা। তবে যেসব প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে আমদানি করে চাল নিয়ে এসেছে, তারা সবাই ক্ষতির মুখে পড়ছে।

আরও পড়ুনঃ  গাজীপুরে ভার্চুয়াল আদালতে ৩৪৪ কিশোর কিশোরীর জামিন

আমদানি অনুমতি পাওয়ার পরও আপাতত চাল আমদানি করতে চাচ্ছেন না মেসার্স সুমন এন্ড ব্রাদার্স এর সত্যাধিকারী সুমন। তিনি বলেন, ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী বলে আপাতত চাল আমদানি করতে চাচ্ছি না। ইতিমধ্যে যারা আমদানি করেছেন তারা সবাই ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাই ডলারের মূল্য স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত চাল আমদানি করতে চাচ্ছি না।

জেলা চালকল মালিক গ্রুপ এর সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, আমরা আশা করেছিলাম, বাজারে আমদানি চাল এলে দাম কিছুটা কমবে। তবে, এখন চিত্র উল্টো। আমদানিকারকরা বেশি দামে চাল বাজারে ছাড়ছেন, এ কারণেই আমাদের উৎপাদিত চালের দাম আবার বাড়ছে। তিনি বলেন, মিলগেটে প্রতি ৫০ কেজির বস্তায় ৫০ থেকে ১শ ৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। পাইকারিতে এখন মোটা চাল বি-২৮ ও পাইজাম ৫০ কেজির বস্তা দুই হাজার ৩৫০ থেকে দুই হাজার ৪২০ টাকা, চিকন চাল মিনিকেট বস্তা তিন হাজার থেকে তিন হাজার ২২০ টাকা এবং নাজিরশাইল বস্তা তিন হাজার ২৩০ থেকে তিন হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

নওগাঁ চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম সরকার বলেন, বাজারে মোটা চালের চেয়ে চিকন চালের দাম বেশি বেড়েছে। খুচরায় প্রতি কেজি মিনিকেট চাল দুই টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৬৯ টাকা, নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭১ টাকা পর্যন্ত। মোটা চাল বি-২৮ ও পাইজাম কেজিতে ২ টাকা পর্যন্ত বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা। এ ব্যবসায়ী বলেন, আমদানি চালের দাম বেশি হওয়ায় বাজারে ভারতের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকা, একই মানের মিনিকেট দেশের বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। একই চালের দাম দুই ধরনের হওয়ায় দেশি চালের দাম বাড়ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন