শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শঙ্কা-উৎকণ্ঠায় পাটচাষিরা

শঙ্কা-উৎকণ্ঠায় পাটচাষিরা

প্রচণ্ড খরার ক্ষেতেই শুকিয়ে যাচ্ছে পাট

রাজবাড়ীতে প্রচণ্ড খরায় ক্ষেতেই শুকিয়ে মরে যাচ্ছে পাট। পানির অভাবে পাট পঁচাতে জাগ দিতে না পেরে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা। খালে বিলে পানি না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পাট চাষিরা। বর্ষায় ভরা মৌসুমেও খাল-বিলে পানি না থাকায় জলাশয়, ডোবা, পুকুরে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এতে স্বাভাবিক খরচের চেয়ে বেশি খরচ হওয়াসহ পাটের গুণগত মান কমছে। পাটে কালো রং ধারন করেছে। সব মিলিয়ে চলতি বছর রাজবাড়ীর পাটচাষিরা লোকসানের আশংকায় রয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার ৫ উপজেলায় ৪৯ হাজার ১২২ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর এক হাজার হেক্টর জমিতে বেশি পাটের আবাদ হয়েছে। রাজবাড়ীর পাটের চাহিদা রয়েছে সারা দেশে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পানি না থাকায় কৃষকরাই চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। জেলার নদী, মাছ চাষের পুকুর, খাল, বিল, কোথাও পর্যাপ্ত পানি না থাকায় পাট জাগ দিতে পারছে না তারা। কোনো উপায় না পেয়ে কৃষকরা পাটকেটে ক্ষেতেই ফেলে রাখছেন। অনেকে বন্যার পানির আশায় পাট না কেটে রেখে দিচ্ছেন।

আবার কেউ কেউ পর্যাপ্ত পানি না পেয়ে নিচু জায়গায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে জাগ দিচ্ছেন। তবে পাটের ফলন ভালো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে পাটের আঁশ আর সোনালি না থেকে কালো রঙের ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। এতে পাটের বাজারমূল্য অনেক কম হবে বলে আশংকা কৃষকদের।

সরেজমিনে রাজবাড়ীর জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ জমির পাট কাটা শুরু হয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ার কারণে মাঠে পানি জমেনি। জমি থেকে নদী বা খালের দূরত্ব অনেক দূর। যে কারণে সেখানে পাট নেয়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। অনেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে ঘোড়ার গাড়ি, নছিমন ও ভ্যানে বোঝাই করে নদী বা খালে নিয়ে ফেলছে। তবে কিছু কিছু জমির পাট কেটে মাথায় করে খালে, বাড়ির পুকুরে জাগ দিচ্ছেন কৃষকরা। জমি থেকে অনেক দূরে পাট নিয়ে জাগ দেওয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ঔষধ বিতরণ

বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ইউনিয়নরে সাবের আলী নামে এক কৃষক জানান, এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম, আষাঢ় মাস শেষ হয়ে গেছে। এখনও কোথাও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই। বানের পানির আশায় আছি। খালে সামান্য বৃষ্টির পানি জমছে। সেখানে পাট জাগে ফেলতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে আঁশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

সদর উপজেলা বানীবহ ইউনিয়নের মিঠু সরদার নামের এক কৃষক জানান, পাট চাষে কোনো লাভ নেই। অনেক খরচে জমি প্রস্তুত করা, বীজ বোপন, সেচ দেওয়া, সার দেয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাট ধোয়া পর্যন্ত যে খরচ হয়, হিসাব করলে কৃষকদের লোকসান।

পরিমল নামে এক কৃষক বলেন, চলতি বছর বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম, আষাঢ় মাস শেষ হয়ে গেছে এখনো খালে বিলে কোথায়ও পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নেই, বন্যার পানির আশায় আছি। খালে সামান্য বৃষ্টির পানি জমছে সেখানে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। কম পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের আঁশ কালো হয় বলে তা কম দামে বিক্রি করতে হয়। পাটের ফলন এবার ভালো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে আঁশ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

পাট চাষি আবুল হোসেন বলেন, এ বছর রাজবাড়ীতে পাটের স্বাভাবিক ফলন হয়েছে। বাজার দর ভালো আছে। কিন্তু পানি না থাকার কারণে পাট কাটা সম্ভব হচ্ছে না। জমি থেকে বিভিন্ন পুকুরে পাট জাগ দেওয়ার কারণ পুকুরের মাছ মারা যাচ্ছে। এ বছর রাজবাড়ীতে (২২ শতাংশ) একপাখি জমিতে ৬ থেকে ৮ মণ পর্যন্ত ফলনের আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  চৌগাছায় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি সংস্কার করছে সেনাসদস্যরা

জেলা পাট অধিদপ্তরের পরিদর্শক মো হরুন অর রশিদ জানান, বর্তমানে পাট পচানোর আধুনিক কোনো ব্যবস্থা হাতে নেই। স্লুইচগেটের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান হতে পারে।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক এস এম শহীদ নূর আকবর জানান, খালে বিলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় কৃষকরা পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কিছুটা সমস্যায় পড়েছেন। পাট চাষে একটা উপকারিতা আছে, পাটের যে পাতা জমিতে পড়ে সে পাতা পচে জৈব সার তৈরি হয়। ফলে জমির উর্বরতা বেড়ে যায়।পরে যে কোন ফসল করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। পাট কাটা দেরী হওয়ার কারণে বোরো আবাদ নিয়ে এখন কৃষকেরা বিড়ম্বনায় পড়ছেন। তিনি আরো বলেন, জমি থেকে অনেক দূরে বহন করে নিয়ে পাট জাগে ফেলতে হচ্ছে বলে কৃষকদের পাট উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। পাটের ভালো দাম না পেলে লোকশান গুনতে হবে কৃষকদের।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন