শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যায় ভাসছে মরুর দেশ

বন্যায় ভাসছে মরুর দেশ

 আমিরাতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

  • সাতদিনে ৭০-এর বেশি সতর্কতা জারি

মধ্যপ্রাচ্যর উপসাগরীয় দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত মোকাবিলা করছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার। গত কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির ফলে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয়েছে দেশটিকে। সাধারণত উত্তপ্ত আবহাওয়ার মধ্যপ্রাচ্যর দেশগুলোতে বৃষ্টিপাত তুলনামূলক বেশ কম হয়ে থাকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড তৈরি হয়েছে। দেশটির ন্যাশনাল সেন্টার অফ মেটিওরোলজি জানায়, গত ২৭ বছরের মধ্যে গ্রীষ্মকালে সর্বোচ্চ পরিমাণে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

কর্তৃপক্ষ অস্থিতিশীল আবহাওয়ার কারণে দেশটিতে জরুরি সতর্কতা জারি করেছে বাসিন্দাদের উপকূলীয় অঞ্চলগুল এবং বাঁধ থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বর্তমান আবহাওয়ার বন্যার শুরু থেকে, ন্যাশনাল সেন্টার অফ মেটিওরোলজি (এনসিএম) গত ২৩ জুলাই থেকে ৭০টিরও বেশি সতর্কতা জারি করেছে।

প্লাবিত অঞ্চলগুলোর মধ্য বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শারজাহ, ফুজাইরাহ ও রাস আল খাইমাহ প্রদেশসমূহ। ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে দেশটির জরুরি সেবা ও দুর্যোগ ব্যবস্থানপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়মিত উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ, সিভিল ডিপেন্স ও সেনাবাহিনীর পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবীরা।

সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ইতোমধ্যে প্লাবিত অঞ্চলগুলোতে নৌকা দিয়ে বাসিন্দাদের উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় খাবার ও ঔষধ পর্যাপ্ত পরিমাণ সরবরাহের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, বন্যায় প্রাকৃতিক ক্ষতি হলেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির সংবাদ পাওয়া যায়নি। তারা বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার ও নিষ্প্রয়োজনে ঘর থেকে বের না হওয়ার আহবান জানান।

আরও পড়ুনঃ  চসিক নির্বাচন ভোট নাকি রণক্ষেত্র! দুইজন নিহত

দেশটির তথ্যমন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তথ্যচিত্র ও ভিডিও ফুটেজসমূহে দেখা যায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ও পার্কিং এর গাড়িগুলো ডুবে আছে। বন্যার স্রোতে অনেক গাড়ি পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও মসজিদ, বসতবাড়িসমুহ (ভিলা) পানিতে ডুবে আছে। আমিরাতের সড়ক বিভাগ প্রবল বৃষ্টির প্রভাবে সড়ক দূর্ঘটনা এড়াতে জরুরি পরিস্থিতি জারির পাশাপাশি গাড়ি চালকদের বাড়িতে থাকতে বা বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে নির্দেশ দিয়েছে।

ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা হিসেবে বর্ণনা করেছে দেশটির ফুজাইরাহ প্রদেশের বাসিন্দারা। তারা জানান, আমরা এই প্রথম এমন ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি। সাধারণ বৃষ্টিপাত অতটা প্রভাব না পড়লেও মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় এমনটা হয়েছে। আমরা দ্রুতই আগের মতো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরে যাবো বলে আশা করছি।

ফুজাইরাহ আবহাওয়া দপ্তর জানায়, সেখানকার বন্দর স্টেশনে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২৫৫.২ মিলিমিটার পানির উচ্চতার রেকর্ড করা হয়েছে, যা জুলাই মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সর্বোচ্চ। অবিরাম বৃষ্টি এবং বন্যার ফলে শারজাহ, ফুজাইরাহ এবং রাস আল খাইমাহ প্রদেশের বেশ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, তবে বিকল্প সড়কে সাবধানে যাতায়াতের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার।

এরইমধ্য ফুজাইরার ক্রাউন প্রিন্স শেখ মোহাম্মদ বিন হামাদ বিন মোহাম্মদ আল শারকি দেশটির ফুজাইরাহ এর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। এছাড়াও দেশটির শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান এবং উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাখতুম আল নাহিয়ান পরিদর্শন শেষে বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় মোকাবিলা ও উদ্ধার কার্যক্রমে জোর অবস্থান এবং প্রয়োজনে জরুরি বাজেট বাজেট ঘোষণা করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন