বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্নীতি বাংলাদেশের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে

ঐতিহাসিকভাবে দুর্নীতি বাংলাদেশের সংস্কৃতির একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং এর ব্যাপ্তি সর্বক্ষেত্রে যা একজন ব্যক্তির জন্ম হতেই শুরু হয়। হাসপাতাল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রের সকল স্তরেই বিশেষ করে সরকারের সকল প্রতিষ্ঠানই দুর্নীতিগ্রস্থ। এই পরিস্থিতিতে সকলকে সমন্বিতভাবে উদ্যোগ নিতে হবে এবং নিজেকে দুর্নীতিমুক্ত ঘোষণা করে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে শরিক হতে হবে।

সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত এক আঞ্চলিক আলোচনা সভায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের উদ্যোক্তারা এসব কথা বলেন। ব্যবসার ক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের প্রতিনিয়ত সম্মুখীন হওয়া দুর্নীতি এবং এই দুর্নীতি প্রতিরোধে একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম তৈরির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ (সিআইপিই)- এর সহায়তায় আয়োজিত এই আলোচনা সভাটি আজ মঙ্গলবার রংপুরের আরডিআরএস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। রংপুরের বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতের প্রতিনিধিরা এতে অংশগ্রহণ করেন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে উদ্যোক্তারা বলেন, যেকোনো ধরনের ব্যবসার প্রথম থেকেই একজন উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের সম্মুখীন হতে হয় যা তার ব্যবসাকে সচল করার ক্ষেত্রে একটি বড় বাঁধা।

তারা বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের লোন দিতে অনাগ্রহী এবং এ নিয়ে সরকারের প্রণিত আইন ব্যাংকগুলো মানছে না। উদ্যোক্তারা বলেন, একটি ব্যবসায়ের শুরুতে ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন লাইসেন্স নিতে হয় যা অনেকেই জানেন না এবং এ ধরনের তথ্যাবলি সরবরাহে সরকারী অধিদপ্তরগুলো সাহায্য করার পরিবর্তে নিয়ম দেখিয়ে অনিয়ম করে থাকে। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী নারী উদ্যোক্তারা বলেন, সামাজিক পরিস্থিতির কারনে বাংলাদেশের নারী ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে নারীদের কথা বলার জায়গা এখনো সংকুচিত।

আরও পড়ুনঃ  বঙ্গবন্ধু আগামী প্রজন্মের অনুপ্রেরণার উৎস : ইউনেস্কো

উপস্থিতি বক্তারা বলেন, ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে স্বজনপ্রীতির ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায় এবং এসকল সংগঠনগুলো ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংরক্ষনে উদাসীন। বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান গুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারী শিল্পগোষ্ঠীর উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রায়স বিভিন্ন বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অনেকে উল্লেখ করেন। ব্যবসায়ীরা আরো বলেন, সরকারের সকল পর্যায়ে দুর্নীতি এমনভাবে বিস্তৃত হয়েছে যে, যার কাছে দুর্নীতির অভিযোগ করা হবে বা বিচার চাওয়া হবে তিনি নিজেই দুর্নীতিগ্রস্থ।

উপস্থিত উদ্যোক্তাগণ মনে করেন প্রায় দেখা যায় ক্ষুদ্র ও মাঝারী পর্যায়ের ট্রেনিংগুলো ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হয় যা তৃণমূল পর্যায়েও শুরু করা উচিত। দুর্নীতি প্রতিরোধে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা ব্যক্তির সামাজিকীকরণে গুরুত্ব দেন এবং ধর্মীয় অনুভুতি জোরদার করার কথা বলেন। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারী পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের সমস্যা সমাধানে সরকারী এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে আলোচনার ক্ষেত্র বাড়ানো উচিত বলে অনেকে মনে করেন। উপস্থিত ব্যবসায়ীগনের মধ্যে অনেকেই ভ্যাট-ট্যাক্স আইন সংশোধনের উপর জোর দেন। ব্যাংক ঋনের সমস্যার কথা মাথায় রেখে উপস্থিত অনেকে, ক্ষুদ্র ও মাঝারী পর্যায়ের ব্যবসায়ীদের জন্য আলাদা ব্যাংক করারও দাবি করেন।

উপস্থিত বক্তারা দুর্নীতি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মের গুরুত্বের কথা বলেন, তারা মনে করেন এ ধরনের প্লাটফর্ম স্থানীয় পর্যায়ের সংগঠনগুলোর কার্যক্রমকে আর শক্তিশালী করবে। সর্বোপরি দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে, প্রথতেই দুর্নীতির কারণগুলো উৎঘাটন করা প্রয়োজনীয় বলে আলোচনা সভায় বক্তারা মন্তব্য করেন।

আনন্দবাজার/টি এস পি

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন