শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অতিরিক্ত ব্যয়ে কমালেই ‘পদ্মা সেতু’

অতিরিক্ত ব্যয়ে কমালেই ‘পদ্মা সেতু’
  • ৩১ প্রকল্পের অতিরিক্ত ব্যয় বৃদ্ধি ২৯৪৭১ কোটি টাকা
  • পদ্মা সেতুর মোট ব্যয় ৩০১৯৩ কোটি টাকা

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে মেয়াদ ও সময় বৃদ্ধি একটি নিয়মিত কাজে পরিণত হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধুমাত্র ৩১টি প্রকল্প সংশোধনের ফলে অতিরিক্ত ব্যয় বেড়েছে ২৯ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। পদ্মা ব্রিজে যে টাকা লেগেছে প্রায় তার সমান। কারণ পদ্মাসেতুর মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা। বারবার সংশোধন ও সময় মতো প্রকল্প বাস্তবায়ন না করার ফলেই এই টাকা বেড়েছে বলে প্রবন্ধ উপস্থাপনে দাবি করেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। তাছাড়া দেশে অভিজ্ঞ প্রকল্প পরিচালক তৈরি করা হয়নি বলেও আলোচনায় ওঠে আসে। ঢাকায় থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রকল্পে দায়িত্ব পালন নিয়েও প্রশ্ন ওঠেছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেল ‘ইমপ্লিমেন্টেশন অব পাবলিক ইনফ্রাস্টাক্চার প্রজেক্ট ইন বাংলাদেশ অ্যানশিওরিং গুড ভ্যালু ফর মানি’ শীর্ষক সংলাপে এসব বক্তব্য ওঠে আসে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় সংলাপে অংশ নেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, সভায় পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির অন এস্টিমেটেসের চেয়ারম্যান উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ, সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান প্রমূখ। সিপিডি ও দ্যা এশিয়ান ফাউন্ডেশন সংলাপের আয়োজন করে।

প্রবন্ধ উপস্থাপনে সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে দেখি বার বার প্রকল্প সংশোধন হয় এর ফলে সময় বৃদ্ধি করা হয়। সময় বৃদ্ধি মানেই ব্যয় বৃদ্ধি। আমরা মেগা প্রকল্প ও ছোট খাটো প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। ২০২২-২৩ সালের যে বাজেট উপস্থাপিত হয়েছে। সেখানে ১৩৫৬টি প্রকল্প বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে টেকনিক্যাল অ্যাসিসটেন্স এটা বাদ দিলে ১২৫০টি প্রকল্প থাকে। এগুলো সুশানের সঙ্গে সময়মতো সাশ্রয়ীভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গল হবে।

আরও পড়ুনঃ  পৌরসভা উপনির্বাচনে মেয়র পদে তিন জনের মনোনয়ন দাখিল

তাছাড়া এসডিজি বাস্তাবায়নের সাথেও ৭২ শতাংশ অবকাঠামো কাজ জড়িত আছে। তাই একটি কাঠামোর মাধ্যমে অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। উন্নত দেশগুলোও ওএডিসি কাঠামোর মাধ্যমে কাজ করে থাকে। যেখানে ১০ মূল পিলার ও ৪৭টি সূচক নিশ্চিত করার মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তাবায়ন করা হয়। প্রকল্প মনিটরিং করা সরকারি সংস্থা আইএমইডির সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রতি জোর দেওয়া হয়। সংস্থাটির ৩৩৮টি পদের মধ্যে ১২৩টি পদই খালি রয়েছে। তাই বর্তমান সময়ের সাথে প্রকল্পের আকার যেভাবে বেড়েছে সেভাবে মনিটরিং কার্যক্রমের সক্ষমতা বৃদ্ধির কথা বলা হয়।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হচ্ছেন প্রকল্প পরিচালক। কিন্তু দেখা যায় পঞ্চগড়ের কোনো প্রকল্পের পরিচালক ঢাকায় থাকছেন, এটা জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজের এলাকায় কেউ থাকতে চাচ্ছেন না। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারিকে পাওয়া যায় না; তাদের নাটাই ঢাকায়, কিন্তু সুতা কাটা যাচ্ছে না।

প্রশাসনের অনেক বিধি অপ্রয়োজনীয়। ব্রিটিশ, পাকিস্তানি ও সামরিক শাসকেরা এসব করেছেন, যার এখন বাস্তবতা নেই। কিন্তু অনেক দুষ্ট আমলা এসব বিধান চাতুরির সঙ্গে কাজে লাগাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ আছে এসব বদলানোর, তা সত্ত্বেও এসব পরিবর্তন করা যাচ্ছে না, নানা প্রতিবন্ধকতা এসে হাজির হয়। তবে আইনকে আইন দিয়ে প্রতিস্থাপন করতে হবে। আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি। অবকাঠামোকে দেশের প্রাণ বলে উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অবকাঠামো আমাদের মূল লক্ষ্য।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে সরকারের পিপিপি প্রজেক্টে প্রাইভেট সেক্টারের প্রতিনিধিত্ব নাই। জাতীয় অবকাঠামো রোডম্যাপ প্রস্তুত করার আহ্বান জানান তিনি। যারা সময়মতো কাজ করে না তারাই পরে আবার ভালো প্রকল্প পায় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

আরও পড়ুনঃ  করোনা মোকাবিলায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে একসঙ্গে লড়তে হবে : প্রধানমন্ত্রী

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জের ড. সামরুর রিয়াজ বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে দেশে ৬০৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রতিবছর ২৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে হবে। তবে আমাদের দেশে খুব দ্রুত সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। তাছাড়া সঠিক তথ্য ছাড়া প্রকল্পের হিসাব নিকাশ করা হয়। ফলে কর্ম পরিকল্পনা ও কেনাকাটায় দুর্বলতা থেকে যায়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটির অন এস্টিমেটেসের চেয়ারম্যান উপাধ্যক্ষ মো. আব্দুস শহীদ বলেন, সরকারি গাড়ি থাকার পরও প্রকল্পের শুরুতেই প্রকল্প পরিচালক একটি জিপ গাড়ি কিনেন। সঙ্গে হোন্ডও কিনেন। এগুলোকে চুরি বলব না, তবে আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেকেই দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন। প্রকল্প প্রণয়নের সময় প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই বা কস্ট-বেনিফিট অ্যানালাইসিস হচ্ছে না বলে আক্ষেপ করেন সংসদ সদস্য এনামুল হক। তিনি বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় মানুষের যাপিত জীবনের পরিবর্তনের বিষয়টি আমলে নেওয়া হচ্ছে না।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন