শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চায়না জালে মা-মাছ নিধন

চায়না জালে মা-মাছ নিধন

চায়না জালে নিধন হচ্ছে ডিমওয়ালা মাছ বর্ষার পানি পুরোপুরি না আসার আগেই টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার নদী-নালা, খাল-বিল ও মাঠ-ঘাট ছেয়ে গেছে ‘চায়না’ জালে। আর এসব জাল দিয়ে প্রাকৃতিক উৎসে ডিম দিতে আসা মা ও পোনা মাছ নিধন করছেন স্থানীয়রা। উপজেলার সর্বত্র স্বল্প পানিতে দেখা যাচ্ছে এই জাল।

জালের মালিকরা বলছেন, এমন কোনো মাছ নেই যা এই জালে ধরা পড়ে না। মৎস্য কার্যালয় বলছে, এই জাল সর্বনাশা। এটা বন্ধ করা হবে। বর্ষায় নতুন পানি এসেছে। এ সময়টা মিঠাপানির মাছের প্রজননকাল। কিন্তু নতুন পানিতে মা মাছ ডিম ছাড়ার আগেই আটকা পড়ছে ফাঁদে। প্রাকৃতিক উৎসে বেড়ে ওঠা বিভিন্ন প্রজাতির মাছের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে নিষিদ্ধ চায়না জালে। এ জালে মা ও পোনা থেকে শুরু করে ধরা পড়ছে সব ধরনের মাছ। ঘাটাইল উপজেলার সর্বত্র এ জাল ব্যবহার করছেন অসাধু মৎস্য শিকারিরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নদী উপজেলার গুণগ্রাম, লাউয়াগ্রাম, বানিয়াপাড়া, জামুরিয়া চানতারা, আন্দিপুর, শাহপুর গ্রামের নিচু বাইদগুলো ঘুরে সারি সারি চায়না জাল দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় যেখানেই একটু পানি জমেছে সেখানেই এই জাল পাতা হচ্ছে। আর অবাধে ডিমওয়ালা দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা হচ্ছে। জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস মাছের প্রজননকাল। চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরার কারণে নতুন পানিতে মা মাছ ডিম ছাড়তে পারছে না। যার ফলে প্রাকৃতিকভাবে মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। পোনা মাছও ধরা পড়ছে এই জালে। এভাবে অবাধে ডিমওয়ালা মাছ ও পোনা মাছ ধরলে মাছের অভাব দেখা দেবে।

আরও পড়ুনঃ  বাঁধ ভেঙে প্লাবিত ফেনীর ১৩ গ্রাম

স্থানীয়রা বলেন, পানিতে যদি মাছ থাকে তবে চায়না জালে তা ধরা পড়বে। লোহার রডের সঙ্গে পেঁচিয়ে বিশেষভাবে তৈরি বর্গাকৃতির এই ঘন জালটি মাছের জন্য সর্বনাশা ফাঁদ।জানা যায়, চায়না দুয়ারি হচ্ছে মাছ ধরার এক ধরনের ফাঁদ।

তবে কাঠামো আকৃতির চারপাশে চায়না জাল দিয়ে এই ফাঁদ তৈরি করা হয়। এটি ৫২ হাত থেকে ৭০ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়। এটি একটি বিশেষ ধরনের চায়না জাল। আর জালটি মাছের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই জালে যদি মাছের ডিম প্রবেশ করে তাহলে সেই ডিমও আটকা পড়ে। এছাড়া চায়না দুয়ারি নদীর পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি করে। এই জালের ছিদ্র ছোট হওয়ায় ছোট বড় কোনো মাছ বের হওয়ার সুযোগ পায় না। ফলে মাছের বংশ বিস্তারে বিঘ্ন ঘটে।

ফতের পাড়া গ্রামের আয়নাল চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরে বাজারে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তার ঝুড়িতে ছোট পোনা থেকে শুরু করে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি লম্বা টাকি মাছও দেখা যায়। এসব মাছের অধিকাংশই ডিমওয়ালা। ডিমওয়ালা মাছ ধরা ঠিক কি না জানতে চাইলে আয়নাল বলেন, আমরা গরিব মানুষ। সংসার চালানোর জন্য মাছ ধরি। ভালো-মন্দ বুঝি না। স্থানীয়রা বলেন, কিছু বেকার মানুষ পরিস্থিতিতে মানুষ কর্মহীন হওয়ায় এসব মাছ ধরা আরো বেড়েছে। আগে যেসব লোক অন্য কাজকর্ম করে ব্যস্ত সময় পার করতেন, এখন তারা অনেকেই এসব মাছ ধরছেন।

বানিয়াপাড়া গ্রামের রফিক আলী দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করেন। মাছ কখন ডিম ছাড়ে এটি তিনি ভালো করে খেয়াল রাখেন। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে যে মাছ ধরতে হয় না তা তিনি মেনে চলেন। হায়দর আলীকে চায় না জাল সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করলে তিনি বলেন, যারা প্রকৃতপক্ষে মাছের কারবার করেন কিংবা মাছ ধরা যাদের বংশগত পেশা, তারা কখনো এই জাল দিয়ে মাছ ধরবেন না। শুধু মৌসুমি শিকারিরাই এমন সর্বনাশা কাজ করতে পারেন।

আরও পড়ুনঃ  চকরিয়ায় মাইক্রোবাস খাদে, একই পরিবারের নিহত ৬

স্থানীয় জেলেরা জানান, মানুষের মাঝে সচেতনা বৃদ্ধি ও চায়না জাল দিয়ে মাছ ধরা নিরুৎসাহিত করতে পারলেই দেশীয় মাছের প্রজনন রক্ষা করা সম্ভব। বাজারেও দেদার বিক্রি হচ্ছে শোল, টাকি ও গজারের পোনা। মাছের পোনা খেতে সুস্বাদু বলে সবারই এ পোনা মাছের প্রতি আকর্ষণ বেশি। প্রশাসন ও মৎস্য কর্মকর্তার সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমেই সম্ভব মা মাছ ধরা থেকে তাদের নিরুৎসাহিত করা। মা মাছ এসব চায়না জাল দিয়ে নিধন করলে দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলীন হয়ে যাবে।

উপজেলার হামিদপুর বাজার হলো ঘাটাইল ও পাশের কালিহাতী উপজেলা চায়না জাল বিক্রির একমাত্র বাজার। বাজারের দশ-বারোটি দোকানে এ জাল বিক্রি করা হয়। একজন জাল বিক্রেতা তিনি জানান, বর্তমানে চায়না জালের খুব চাহিদা। প্রতি ফুট জাল প্রায় ষাট টাকা দরে বিক্রি হয়। একজন ক্রেতা কমপক্ষে চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ফুট জাল ক্রয় করেন।

এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা খাদিজা খাতুন বলেন, চায়নাসহ সব ধরনের কারেন্ট জাল নিষিদ্ধ। চায়না জাল তৈরি হয়েছিল সাতক্ষীরা অঞ্চলে ঘের থেকে চিংড়ি আহরণের জন্য। কিন্তু এটি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এ জালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন