শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লিখব আবার নতুন ইতিহাস

লিখব আবার নতুন ইতিহাস
  • আনন্দের দিনে ঘৃণা-বিদ্বেষ নয়
  • যতবারই হত্যা কর, জন্মাব আবার, দারুণ সূর্য হব

বাংলাদেশের অহংকার, গর্ব আর আত্মমর্যাদার প্রতীক স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন শেষে জনতার উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি যেকোনো ত্যাগ করতে প্রস্তুত। নিঃস্ব আমি, রিক্ত আমি, দেওয়ার কিছু নেই। আছে শুধু ভালোবাসা, দিয়ে গেলাম তাই’। গতকাল শনিবার দুপুরে মাদারীপুরের শিবচরে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

এসময় সরকারপ্রধান আনন্দের দিনে ঘৃণা প্রকাশ না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজকের এই আনন্দের দিনে কারও প্রতি ঘৃণা নয়, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয়। শুধু দেশবাসীর প্রতি আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। আপনারা পাশে ছিলেন বলেই আমি সাহস পেয়েছি, এই অসম্ভবকে সম্ভব করতে পেরেছি। আর পরপার থেকে আমাকে সাহস জুগিয়েছেন আমার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসুন, পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের এই ঐতিহাসিক দিনে যে যার অবস্থান থেকে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করার শপথ নিই। বাঙালি বীরের জাতি। বাঙালির ইতিহাসের প্রতিটি বাঁক রঞ্জিত হয়েছে ত্যাগ-তিতীক্ষা আর রক্ত ধারায়। কিন্তু বাঙালি আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। যতবারই হত্যা কর, জন্মাব আবার, দারুণ সূর্য হব, লিখব নতুন ইতিহাস।

এর আগে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন শেষে বেলা ১২টা ৫৩ মিনিটে শিবচরের সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে ওঠেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ ও মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য নূর-ই-আলম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের।

আরও পড়ুনঃ  ভারতীয় ১৬ জেলেসহ ট্রলার আটক করেছে কোস্টগার্ড

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাবা-মা-ভাই হারিয়ে পেয়েছি আপনাদের। আপনাদের মাঝেই আমি ফিরে পেয়েছি আমার বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। আপনাদের পাশেই আমি আছি, আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। আপনাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি যেকোনও ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত, এই ওয়াদা আমি দিয়ে গেলাম। তিনি বলেন, যারা পদ্মা সেতু নির্মাণে বাধা দিয়েছিল, তাদের একটা জবাব আমরা দিতে পেরেছি। তাদের উপযুক্ত একটা আমরা এই পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দিতে পারলাম যে- না, বাংলাদেশ পারে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী করোনা মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। পদ্মা সেতু করতে গিয়ে নিজের পরিবারের অনেক সদস্য অপমান সহ্য করতে হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে আলহামদুলিল্লাহ, আমরা সেই পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। আর আপনাদের কষ্ট করতে হবে না। এই খরস্রোতা পদ্মা নদী পার হতে গিয়ে আর কাউকে সন্তান হারাতে হবে না, বাবা-মাকে, ভাইবোনকে হারাতে হবে না। আজকে সেখানে আপনারা নির্বিঘ্নে চলতে পারবেন। সেই ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি।

সমাবেশে যোগ দেওয়ার আগে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ওপারে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে ১২টা ৩৬ মিনিটে সেখানে বানানো অপর একটি ফলক মঞ্চে যান তিনি। সেখানে দ্বিতীয় দফায় মোনাজাতে অংশ নেন। জাজিরা প্রান্তে সেতুর মোড়ক উন্মোচনের সময় প্রধানমন্ত্রীর একপাশে তার অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এবং অপর পাশে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, চিফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী, সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

আরও পড়ুনঃ  অকারণে বাইরে বেরুলে জেল-জরিমানা

এর আগে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সমাবেশস্থলে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিথিকে মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সেতুর টোল প্লাজার কিছুটা আগে এক পাশে অস্থায়ী প্যান্ডেলে আয়োজন করা হয় সমাবেশের। এতে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

সমাবেশে ভাষণ শেষে স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, উদ্বোধনী খাম, সিলমোহর ও ১০০ টাকার স্মারক নোট উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর গাড়িবহর নিয়ে ১১টা ৫৫ মিনিটে টোল প্লাজায় টোল প্রদান করেন তিনি। ১১টা ৫০ মিনিটে মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১১টা ৫৯ মিনিটে সেতুর ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মাধ্যমেই খুললো পদ্মা সেতুর দুয়ার।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন