শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বপ্ন সত্যি কতটা

পদ্মা সেতুর ঋণ শোধে ২০৫৭ সাল
  • কতটা বদলাবে সাধারণের ভাগ্য

সব গণনা অতিক্রান্ত করে ২৫ জুন উদ্বোধন হলো সর্বনাশা পদ্মার বুকে নির্মিত স্বপ্নের সেতু। হিসাবে বলা হচ্ছে, দেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে এক দশমিক ২৩ শতাংশ অবদান রাখবে এ সেতু। আর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। পদ্মা সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ২১টি জেলা উপকৃত হবে।

তবে পদ্মা সেতুর আরও সুফল পেতে দক্ষিণাঞ্চলে পোশাক ও পর্যটনসহ নানা খাতে বিনিয়োগ জরুরি বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। কতটা সুফল আসবে এ সেতু থেকে তা নিয়ে অনেক বিশ্লেষণ হলেও এবার বাস্তবতা দেখার পালা। ফেরির তুলনায় দেড়গুণ টোল দিয়ে প্রান্তিক চাষি বা ব্যবসায়ীরা কতটা সুবিধা আদায় করতে পারবেন সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

সেতুতে পারাপারের জন্য টোল হার ঘোষণা করেছে সরকার। সেতু চালু হলেও সীমিত আকারে ফেরিও চলাচল করবে। তবে ফেরির টোলও কিছুটা বাড়বে। সেতু পার হতে মোটর সাইকেলের জন্য টোল দিতে হবে ১০০ টাকা আর কার ও জিপের জন্য ৭৫০ টাকা। মাঝারি বাসের টোল দু’হাজার টাকা, বড় বাসের জন্য ২,৪০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১,৩০০ টাকা ও মিনিবাসের জন্য ১,৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।

ছোট ট্রাকের জন্য (৫ টন পর্যন্ত) ১,৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৫ থেকে ৮ টন) ২,১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ থেকে ১১ টন) ২,৮০০ টাকা, বড় ট্রাক (তিন এক্সেল পর্যন্ত) ৫,৫০০ টাকা ও টেইলারের জন্য ৬,০০০ টাকা টোল দিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  বেনাপোল কাস্টমের হয়রানির প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন

পদ্মা সেতুর বর্তমান যে টোলের হার নির্ধারণ করা হয়েছে, আগামী ১৫ বছর এভাবেই আদায় করা হবে। প্রতি ১৫ বছর পরপর ১০ শতাংশ বাড়ানো হবে। শুরুতে পদ্মা সেতুতে দিনে আট হাজার গাড়ি চলাচল করবে বলে ধারণা করছে সেতু বিভাগ। আস্তে আস্তে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। ৩৫ বছর পর দিনে যানবাহনের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশে বর্তমানে যে ফেরির যে টোল হার রয়েছে, তার ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে মন্ত্রণালয়।বর্তমানে শিমুলিয়া ঘাট অথবা পাটুরিয়া ঘাট থেকে ফেরিতে করে পার হতে একটি কার বা জিপকে ৫০০ টাকা টোল দিতে হয়। নতুন টোল হার নির্ধারিত হলে সেখানে ৫৯০ অথবা ৬০০ টাকা হতে পারে।

ফলে পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের অর্থনীতিতে যে, ১.৬ শতাংশ জিডিপি বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে তার সুবিধা অনেকটা ‘টোল’-এ হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। টোল আদায় হলেও তা অর্থনীতিতে যুক্ত হবে কিন্তু এ টোল দিয়ে প্রান্তীক মানুষজন ব্যয় কমাতে নাকি সময় হ্রাসে গুরুত্ব দিবে সেটা সময়ই বলে দিবে।

এ সেতু দিয়ে বরিশাল থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগতে পারে মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা। কারণ, ৬ কিলোমিটারের পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে মাত্র ১০ থেকে ১২ মিনিটেই পৌঁছানো যাবে মাওয়া প্রান্তে। তেমনই খুলনা, যশোর থেকেই চার, সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যেই রাজধানীতে পৌঁছানো যাবে। জাজিরা প্রান্ত থেকে বরিশাল যেতে বড়জোর ২ ঘণ্টা সময় লাগবে। এছাড়া খুলনা যাওয়া যাবে ৩ ঘণ্টায়, আর ফরিদপুর যেতে সময় লাগবে ৫০ মিনিট।

আরও পড়ুনঃ  একদিনে মৃত্যু ২৬, শনাক্ত ১৫৪৪ জন

পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলায় শুরু হয়েছে মহাকর্মযজ্ঞ। কারণ, সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল শুরু হলে বেড়ে যাবে এই বন্দরের কর্মব্যস্ততা। গতি আসবে আমদানি-রপ্তানি কাজে। বন্দরের আশপাশে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা। এতে চাপ বাড়বে বন্দরের। ফলে আমদানি-রপ্তানিতে গতি সঞ্চার হবে। বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান লাভবান হবে। তবে প্রান্তীক মানুষের বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তাদের কাছে সময় কমানোর চেয়ে টাকা বাচাঁনো বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিনা তা সময়ই বলে দিবে।

এই সেতু চালু হলে যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হতে পারে বলেও শঙ্কা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেতুটি উদ্বোধনের কয়েক বছরের মধ্যে ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েতে যানবাহনের সংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, অন্যদিকে এক্সপ্রেসওয়ের সংক্ষিপ্ত রুটের কারণে ঢাকা-আরিচা রুট ৪০ শতাংশ আকর্ষণ হারাবে।

ধারাণা করা হচ্ছে, এর ফলে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মসৃণ যাত্রার পর অভ্যন্তরীণ যানবাহনগুলো রাজধানীর দুটি প্রবেশপথ- যাত্রাবাড়ী ও বাবুবাজারে আটকে থাকবে। যার ফলে এই রুটে ভ্রমণে অতিরিক্ত সময় লেগে যাবে। ফলে ঢাকার যানজটে নতুন ভোগান্তিও দেখা দিতে পারে।

টোলের বাধা পেরিয়ে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ায় প্রান্তিক মানুষজন কতটা সেতুর সুফল নিতে পারবে সেটা দেখার অপেক্ষা এবার। তাছাছা ঢাকার যানজট কমিয়ে নতুন করে যে কয়েক হাজার যানবাহন রাজধানীতে প্রবশে করবে সেটা সামাল দেয়াও একটি চ্যালেঞ্জ। সবকিছু ছাপিয়ে বিনিয়োগকারীরা শিল্প-প্রতিষ্ঠান গড়তে কটতা এগিয়ে আসে সেটার ওপরও নির্ভর করছে অর্থনৈতিক অগ্রগতি। যমুনা সেতু হওয়ার আগেও ব্যাপক উন্নয়নের কথা বলা হলেও আদতে সে অনুযায়ী বাস্তবতা মিলেনি।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন