শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বন্যার থাবা

আর্থিক সংকটে হাজারো পরিবার

আর্থিক সংকটে হাজারো পরিবার
  • ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খামারিরা
  • ঘুরে দাঁড়ানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতির এখনো অবনতি রয়েছে। তবে ধীরে ধীরে পানি কমতে শুরু করেছে। বন্যায় আক্রান্ত হয়ে উপজেলার ভূকশিমইল, কাদিপুর, জয়চন্ডি, বরমচাল, ভাটেরা, রাউৎগাও, ব্রাম্মণবাজার ও কুলাউড়া পৌরসভার হাজার হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছেন। তবে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছেন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষেরা। এসব পরিবার এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে থাকলেও তাদের পরবর্তী দিনযাপন নিয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় আছেন। তাছাড়া এখন তারা অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছেন। এসব পরিবারের তেমন সঞ্চয় নেই। অনেকের জমানো সঞ্চয় এখন শেষ হয়ে গেছে। আবার অনেকেই শূন্য হাতে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন। অর্থ সংকটে এসব পরিবার এখন ত্রাণের দিকে চেয়ে আছেন। আবার অনেক আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণের সংকট রয়েছে। শূন্য হাতের এসব বন্যা কবলিত মানুষের দুর্গতি এখানেই শেষ না। তাঁরা পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ফিরতে হবে নিজের বসতভিটায়। বন্যার পানিতে তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বেশিরভাগ বাড়ির নিচের অংশ পানির স্রোতের কারণে ভেঙে গেছে। অনেক টিনশেডের ঘরের নিচের মাটি সরে গিয়ে ঘরের অবস্থা শোচনীয় হয়ে গেছে। অনেক জায়গায় পানির স্রোতের কারণে ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বন্যার এ সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্যোগ-দুর্দশা হলেও বন্যা পরবর্তী এসব মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষের এ অবস্থা কাটিয়ে ওঠা অনেকটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। বন্যা চলাকালীন সময়ে আশ্রয়কেন্দ্রে যেসব পরিবার অবস্থান করছে তারা মানসিকভাবে বেশ দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত মিনা বেগম জানান, এখন অনেকে ত্রান দেওয়ায় খেতে পারছি। তবে, পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ঘর মেরামত করতে হবে। মেরামতের জন্য হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্থ নেই।

আরও পড়ুনঃ  পশ্চিম পাগলায় বন্যার্তদে মাঝে খাদ্যসমাগ্রী বিতরণ

বন্যা পরবর্তী সময়ে আক্রান্ত এলাকার ঘরবাড়ি মেরামত করতে এসব দরিদ্র পরিবার ব্যাপক অর্থ সংকটে পড়বেন বলে মনে করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য জসিম আহমদ। তিনি জানান, আমার এলাকার বেশিরভাগ পরিবার নিতান্তই দরিদ্র। তারা এখন আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। তবে, বন্যা পরবর্তী সময়ে তাদের ঘরবাড়ি মেরামত ও ঘুরে দাঁড়ানো সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের হবে।

আশ্রয় কেন্দ্রের অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা দেরিতে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছিল। তারা শুধুমাত্র পরনের কাপড় ও জরুরি কাগজপত্র নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠতে পেরেছিল। পানি দ্রুত বাড়ার কারণে সময়ের অভাবে তারা অনেক তৈজসপত্র রক্ষা করতে পারেনি। বাড়ি ফিরে এগুলো পাওয়া যাবে কিনা এখন অনেকেরই সন্দেহ রয়েছে। নতুন করে এসব কেনা এ পরিবারসমূহের জন্য বড় ধরনের অর্থ সংকট তৈরি করবে।

অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে হুমকিতে রয়েছে বন্যায় আক্রান্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া। তারা স্বাভাবিকভাবেই ঘুরে দাঁড়াতে হলে তাদের সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থানরত শিক্ষার্থী অর্পিতা রানী জানান, পানিতে আমাদের ঘর তলিয়ে গেছে। আমার বাবার তেমন আয় নেই। এখন আমার পড়ালেখা কিভাবে চলবে তা বুঝে উঠতে পারছি না। এসব পরিবারের ঘুরে দাঁড়ানোর পর লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নেওয়াটা তাদের জন্য আরো বেশি দুশ্চিন্তার কারণ এখন।

বন্যা আক্রান্ত এলাকায় ডুবে গেছে শত শত পুকুর। এছাড়াও অনেকটা ফিশারি ডুবে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে চাষ করা মাছ। আক্রান্ত এসব পুকুরের খামারিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। উপজেলার জয়চন্ডী ইউনিয়নের কবির মিয়ার পুকুর বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। তিনি জানান, এ পুকুরে মাছ চাষ করতাম। বন্যার পানি সব মাছ নিয়ে গেছে। বন্যায় আমার মাছ চাষে অনেকটা ক্ষতি হয়ে গেছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু মাসুদ জানান, বন্যার পানিতে অনেক পুকুর তলিয়ে গেছে। মৎস্য খামারিদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর আমরা পুরো তথ্যসংগ্রহ করতে পারব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী জানান, পানি নামার পর ঘরবাড়ি মেরামত করতে বন্যায় আক্রান্ত মানুষদের সহযোগিতা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহের পাশে থাকবে প্রশাসন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন