শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
নিম্নমান-অদক্ষতা

শ্রেণিকার্যক্রমে মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী বিকল

শ্রেণিকার্যক্রমে মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী বিকল

চরফ্যাসনে ১৬৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ এবং মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী দেয়া হলেও শ্রেণিকার্যক্রমে এগুলোর কোনো ব্যবহার নেই। শিক্ষকদের এসব সামগ্রী ব্যবহারে উপযোগী করে গড়ে তুলতে না পারা, সহায়ক উপকরণের অভাব এবং সরবরাহের পরপরই উপকরণগুলো বিকল হয়ে যাওয়ার  কারণে এগুলোর ব্যবহার করা যাচ্ছে না বলে শিক্ষকদের তরফ থেকে বলা হয়েছে। বিকল হয়ে পড়ে থাকা এসব উপকরণ সংস্কারের উদ্যোগ না থাকায় সেগুলো বিদ্যালয় ছেড়ে প্রধান শিক্ষকদের ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে চরফ্যাসনের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকার্যক্রম বাস্তবেরমুখ দেখেনি। 

উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা জায়, বৃহত্তর এ উপজেলায় ২১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সবগুলো বিদ্যালয় বিদ্যুৎসুবিধার আওতায় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের মধ্যে ২০১০ থেকে ২০১৮ সনের মধ্যে ৭১টি বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী এবং ৯৬টি বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র ল্যাপটপ দেয়া হলেও ৪৬টি বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়ার কোনো উপকরণ দেয়া হয়নি। এসব উপকরণের পাশাপাশি গত একযুগে উপজেলার মাত্র ৫২জন শিক্ষককে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহারের বিষয়ে ১৫দিন করে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।  ফলে প্রশিক্ষিত শিক্ষক নেই এমন বিদ্যালয়গুলো মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী পেলেও এর ব্যবহার করতে পারছে না। আবার কিছু বিদ্যালয়ে শিক্ষক মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেলেও মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী পায়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সহকারি শিক্ষক জানান, ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণের ৩ বছর পর তার বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া উপকরণ পেয়েছে। দীর্ঘ এ সময়ে তিনি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত ব্যবহার বিধি ভুলেই গেছেন। অভিযোগ আছে, নিম্নমানের কারণে সরবরাহের পরপর বেশির ভাগ উপকরণ বিকল হয়ে গেছে। পাশাপাশি ব্যবহার বিষয়ে শিক্ষকদের দক্ষতা না থাকায় দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকার কারণেও এসব উপকরণ কার্যকারিতা হারিয়েছে। ফলে এসব মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী শিশুদের কোনো উপকারে আসেনি।

আরও পড়ুনঃ  উত্তরপত্র পেয়ে শিক্ষার্থীরা জানলো পরীক্ষা স্থগিত

প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চরফ্যাসনে ২০১০ সনে ৩টি বিদ্যালয়, ২০১৪ সনে ৪টি বিদ্যালয়, ২০১৫ সনে ২টি বিদ্যালয়, ২০১৬ সনে ৪৩টি বিদ্যালয় এবং ২০১৭ সনে ২৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ ও মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও ২০১৭ সনে ৪৭টি বিদ্যালয় এবং ২০১৮ সনে ৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শুধুমাত্র ল্যাপটপ বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৭-২০১৮ সনে ৯৬টি বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ দেয়া হলেও মাল্টিমিডিয়া দেয়া হয়নি। ফলে এই বিদ্যালয়গুলো শুধুমাত্র ল্যাপটপ দিয়ে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকার্যক্রমের উদ্যোগ নিতে পারেনি।

চরফ্যাসন মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন জানান, বিভিন্ন সময়ে তার বিদ্যালয়ে ৩ সেট ল্যাপটপ ও একটি প্রজেক্টর দেয়া হয়েছে। এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত তিনজন শিক্ষাক আছে। তবে, কয়েক মাস মাল্টিমিডিয়া সামগ্রীগুলো সচল থাকলেও এখন সবগুলো বিকল হয়ে আছে। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে কোনো সমাধান পাইনি এখনও ।

দুলারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা ইয়াসমিন বলেছেন, ২০১০ সনে তার বিদ্যালয়ে ১টি ল্যাপটপ এবং ২টি প্রজেক্টর পেলেও সবগুলো এখন বিকল অবস্থায় আছে। তিনি ২০১৭ সনে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদানের দিন থেকেই এগুলো বিকল পেয়েছেন। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসকে জানান হয়েছে। তবে, কার্যকর কোনো উদ্যোগ এখনো নেয়া হয়নি। এ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।

এওয়াজপুর ২নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান বলেছেন, তার বিদ্যালয়ে ২টি ল্যাপটপ ও একটি প্রজেক্টর দেয়া হয়েছে। এবং কম্পিউটার বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক থাকলেও মাল্টিমিডিয়া সামগ্রীগুলো বিকল থাকায় কোনো কার্যক্রম করা যচ্ছেনা।

আরও পড়ুনঃ  জমি নিয়ে বিরোধের জেরে জবি শিক্ষার্থীকে মারধর

উপজেলা শিক্ষা অফিসার অহিদুল ইসলাম বলেছেন, তিনি ২০২১ সনের ডিসেম্বরে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে করোনাকালে সবকিছু এলোমেলো ছিল। এজন্য মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী বিকল থাকার বিষয়টি কোনো বিদ্যালয় থেকেই যথাযথভাবে অবহিত করা হয়নি। বিদ্যালয়গুলো থেকে লিখিত তথ্য পেলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন