শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছেই

বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি
  • ভেসে গেছে ৬৭৬১০ মৎস্য খামার
  • খামারিদের ক্ষতি ১৬১ কোটি টাকা
  • ডুবেছে ৫৬ হাজার একর জমির আউশ

বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ের কুড়িগ্রাম ও তিস্তাপাড়ের নীলফামারী সবচেয়ে বেশি দুর্গত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বন্যার কারণে নষ্ট হয়েছে হাজার হাজার একর জমির আউশ ধান। মৎস্য চাষিদের স্বপ্নও ভেসেছে এ বন্যায়। সবমিলিয়ে ঘর-বাড়ি ছেড়ে মানুষ আশ্রয় নিয়েছে আশ্রয়কেন্দ্রে। যারা সেখানে যেতে পারেননি তাদের ঠাঁই হয়েছে ঘরের চালে কিংবা অন্য কোথাও। মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে প্রায় প্রতিটি পরিবার। সবমিলিয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে এসব অঞ্চলের মানুষের।

প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, বন্যার প্রভাবে কুড়িগ্রাম ও নীলফামারীতে ৫৬ হাজার একর জমির আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে। অস্বাভাবিক বৃষ্টির কারণে সিলেটে ২২ হাজার হেক্টর জমির ক্ষতি হয়েছে। আর সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ মিলে প্রায় ২৮ হাজার হেক্টর জমির আউশ ধান নষ্ট হয়েছে। কুড়িগ্রাম, নীলফামারী এলাকায় ৫৬ হাজার একর জমির ক্ষতি হচ্ছে। পানি ক্রমেই সমতল ভূমিতে আসছে। আরও নামলে (পানি) ক্ষতি আরও বাড়বে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট বন্যায় কিশোরগঞ্জ জেলার ৫০০টি মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ফলে খামারিদের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা। প্রতিদিনই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।

বিভিন্ন সূত্রমতে, বন্যায় দেশের পাঁচ বিভাগের ১৫টি জেলার ও ৯৩টি উপজেলার ৬৭ হাজার ৬১০টি মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। যার পরিমাণ ১৬ হাজার ৫৮২ টন। এতে খামারিদের ক্ষতি হয়েছে ১৬০ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এছাড়াও অবকাঠামো ক্ষতি হয়েছে ৯ কোটি ৯১ লাখ টাকার। মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, দেশের পাঁচটি বিভাগের সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, টাঙ্গাইল,ময়মনসিংহ,কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মানিকগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ফেনী জেলা ও চট্টগ্রাম জেলা বন্যার পানিতে মাছের খামার ভেসে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  ‘লকডাউন’ বাড়লো ৫ মে পর্যন্ত

মৎস্য অধিদপ্তরের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সুনামগঞ্জ জেলায়। এ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত খামার ৮ হাজার ৬৬৫টি। খামারিদের আর্থিক ক্ষতি ৫২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। এছাড়া সিলেটে ২৫ হাজার ২৪০ খামারির ৩০ হাজার ২৫৫ খামার ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৭০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

হবিগঞ্জে এক হাজার ৩৪৮ খামারে এক হাজার ৭৮ খামারির ক্ষতি হয়েছে ১৭ কোটি এক লাখ টাকা ও মৌলভীবাজার এলাকার ২১০ খামারির ২৭০টি খামার ভেসে ক্ষতি হয়েছে ১৬ কোটি এক লাখ টাকা। এছাড়া কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ের খামারিদের বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ৭টি উপজেলার মৎস্য খামারিদের বন্যার পানিতে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার ইটনা, মিঠামইন, আষ্টগ্রাম, নিকলী, তাড়াইল, বাজিতপুর, ও ভৈরবে বন্যার পানিতে মাছের খামার ভেসে গেছে। মাছ ও অবকাঠামো গত ক্ষতিসহ জেলায় খামারিদের প্রায় ৩ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে।

অষ্টগ্রাম সদর উপজেলার চেয়ারম্যান সৈয়দ ফাইয়াজ হাসান জানান, আমার ডিএফএসএস বহুমুখী ফার্মটি বন্যায় তলিয়ে গেছে। এখান থেকে প্রায় ৪ লাখ টাকার মাছও চলে গেছে। সব মিলিয়ে আমার এ খামারের ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

ইটনা উপজেলার এনায়েত, কবির, তাপশ রায়, শামীম হোসেন ও শানু মিয়ার পুকুর তলিয়ে গেছে। এ চারজনের পুকুর থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ চলে গেছে। ইটনার নূরু মিয়ার মাছের খামার এখন পর্যন্ত তলিয়ে না গেলেও কয়েক লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে। পাড়ে জাল দিয়ে মাছ আটকে রাখার চেষ্টা করছেন। যে কোনো মুহূর্তে তলিয়ে যেতে পারে তার মাছের খামার।

আরও পড়ুনঃ  সিলেটে বাড়ছে বন্যার পানি, ঘরবন্দি সাড়ে ৬ লাখ মানুষ

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন