শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সড়কে চলতে প্রাণ হাতে

ধনবাড়ীর সড়ক মরণফাঁদে পরিণত

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার পাইস্কা ইউনিয়নের ভাতকুড়া গ্রামের জনগুরুত্বপূর্ণ এলজিইডির সড়কটি সংস্কার না হওয়াতে উপজেলাবাসী হতাশ। সড়কটি ভাঙে নদী গর্ভে চলে গিয়ে সরু হয়ে গেছে। পথচারীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করে। দিনের বেলায় যাওয়া-আসা করলেও রাতে বন্ধ। সড়কটি সংস্কারের নামে বছরের পর বছর কাল ক্ষেপণ করছে কর্তৃপক্ষ। উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষের এবারও ভাষ্য- শিগগিরই সড়কটি সংস্কার হবে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পানি উন্নয়ন বোর্ড বৈরান নদী খননে এক পাশের মাটি অন্য পাশে নিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণের বাঁধ নির্মাণে এ দুরবস্থা। সড়কটি ধরে ৩০ হাজার লোক উপজেলা সদরে যাওয়া-আসা করে। সড়কে অটো-ভ্যান চললেও কোন জরুরি সেবার গাড়ি চলে না। সড়কে গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনা হয়। সড়ক সংস্কার না করায় এখন শনির দশাতে পরিণত হয়েছে অভিযোগ তাদের। এবার দ্রুত সংস্কার না করলে একেবারেই যোগাযোগ বিচ্ছন্ন হয়ে যাবে বলে জানান তারা।

সরেজমিনে গত রবিবার গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার পাইস্কা ইউনিয়নের পাইস্কা পুরাতন বাজার হয়ে সড়কটি ভাতকুড়া গ্রাম হয়ে চলে গেছে মুশুদ্দি, বদ্রিভদ্র ও বীরতারা ইউনিয়নে। সড়ক ঘেঁষেই বৈরান নদী। সড়ক ভেঙে নদী গর্ভে চলে গিয়ে সরু পথে পরিণত হয়েছে। ওই পথেই ধীর গতিতে চলাচল করেছে বিভিন্ন অটোরিকশা-ভ্যান, মোটরসাইকেল স্কুল-কলেজ শিক্ষার্থী, কৃষক, কর্মজীবি, শ্রমজীবিসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ। বিপরীত দিক থেকে গাড়ি এলে পার হতে সময় লাগছে।

ওই ইউনিয়নগুলো কৃষি প্রধান। মুশুদ্দি ইউনিয়নটি নিরাপদ সবজি চাষে দেশের ১০টি মডেল গ্রামের একটি। দিনভর কৃষকরা বাজারে সবজি নিয়ে আসছে এই সড়ক। সড়কের বিভিন্ন ভাঙা অংশে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ধরে রাখার চেষ্টা করছে এলাকাবাসী। ভারী বৃষ্টিতে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে ভাঙা স্থানে। নদীর ওপারে করা হয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। বাঁধের উপর ওই এলাকার কৃষকরা সবজি চাষ করেছে। এ পাড়ের লোকজন রয়েছে মহাবিপাকে।

আরও পড়ুনঃ  মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ায় উদ্যোগ নিতে হবে সমন্বিতভাবে

এলাকার কৃষক আমির হোসেন বলেন, তিন বছর আগে সড়কটি ভাঙা শুরু হয়। বৃষ্টি হলেই তীব্র আকার ধারণ করে। বিষয়টি জনপ্রিতিনিধি ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষরা দেখলেও গুরুত্ব নেই। দিনে চলাচল হলেও রাতে বন্ধ থাকে।

অপর কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, ‘সড়কটি ধরে উপজেলা সদরে যেতে সহজ হয় সবার। উৎপাদিৎ কৃষিপণ্য নিয়ে সবাই যাওয়া-আসা করে। বিপল্প সড়কে যেতে বেশি খরচ হয়। এবার সংস্কার না করলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

স্কুল শিক্ষার্থী লিমন আহমেদ বলেন, যাওয়া-আসার সময় খুবই ভয়ে লাগে। আমার এক বন্ধু বাইসাইকেলে যাওয়ার সময় নদীতে পড়ে আহত হয়েছিল। আমরা অনেক কষ্টে আছি। কলেজ শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামান বলেন, এখন সড়কটি মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে পথচারীদের জন্য। দ্রুত সংস্কারের দাবি জানাই।

অটো চালাক বাশার উদ্দিন বলেন, ঠিকভাবে গাড়ি চালতে পারি না। সড়ক ভাঙার কারণে যাত্রীরা কম যাওয়া-আসা করেন। আমরা শ্রমজীবি মানুষ। ভেঙে যাওয়ায় স্থানে এলাকাবাসী, অটো-ভ্যান চালকেরা টাকা-পায়সা উঠিয়ে মেরামত করে।

ইস্পিঞ্জারপুর এলাকার মৎস্য চাষি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা সদরে যেতে এই সড়কে সহজ হয়। মাছের খাবারের বস্তাগুলো ভ্যান চালকেরা নিয়ে আসতে চায় না। ভাড়াও বেশি লাগে। কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া জরুরি।

এ বিষয়ে পাইস্কা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বাবুলের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও ওই সড়কে যাওয়া-আসা করি। মহা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়িয়েছে এটি। বিষয়টি স্থানীয় এমপি কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক এমপিকে জানিয়েছি।

আরও পড়ুনঃ  প্রকল্পে দুর্নীতি হলে চাকরিচ্যুতি: কৃষিমন্ত্রী

উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) প্রকৌশলী জয়নাল আবেদীন সাগর বলেন, সড়কটি সংস্কারে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে গেছেন। প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই সংস্কার করা হবে।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন