শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বন্যায় ভাসছে দেশ---

খাদ্য-বিশুদ্ধ পানির সংকট

খাদ্য-বিশুদ্ধ পানির সংকট

মধ্যাঞ্চলে বন্যার অবনতি, খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম

উজান থেকে আসা পানি ও টানা চারদিনের বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের জেলাগুলোসহ সারাদেশই বন্যায় ভাসছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। বাড়িঘরে ঢুকেছে বন্যার পানি। অনেক স্থানে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বৈদ্যুতিক খুঁটি তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন-

মৌলভীবাজার জেলায় পাহাড়ি ঢল আর ভারী বর্ষণের ফলে জেলার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এতে ৭ উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ আছেন পানিবন্দি। এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কুলাউড়া ও জুড়ী উপজেলায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ ঘোষণা করেছে আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ।

এমন অবস্থায় বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন কর্তৃক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। গত শনিবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অর্ণব মালাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সদর উপজেলায় খলিলপুর, মনুমুখ, আখাইলকুড়া, কনকপুর, কামালপুর, চাঁদনীঘাট ইউনিয়নের আংশিক অংশ প্লাবিত হয়েছে। কুলাউড়ার সদরসহ ভূকশিমইল, ভাটেরা, জয়চন্ডী, ব্রাহ্মণবাজার, কাদিপুর ইউনিয়নের বিস্তৃর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে, জেলার জুড়ী উপজেলায় গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় এ উপজেলাধীন ২৮ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এ সকল গ্রামের অধিকাংশ রাস্তা ঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় জনসাধারণের চলাচলে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও জায়ফরনগর ইউনিয়নের গৌরীপুর ও সাগরনাল ইউনিয়নের কাশিনগর গোয়ালবাড়ি পশ্চিম শিলুয়া গ্রামে জুড়ী নদীর বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয়দের সহযোগীতায় বাঁধ মেরামত কাজ চলছে।

বড়লেখা পৌর এলাকাসহ ১০ ইউনিয়ন, রাজনগরের ৪ ইউনিয়ন, শ্রীমঙ্গলের ৫ ইউনিয়ন এবং কমলগঞ্জ উপজেলায় অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর পাড় ভেঙে উপজেলার ৯ ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বন্যা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কুলাউড়া আঞ্চলিক বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ওসমান গণি জানান, বন্যার পানির বৃদ্ধি পাওয়ায় কুলাউড়া উপজেলার ইসলামগঞ্জ এবং জুড়ীর নার্সারি ফিডারের বিদ্যুৎ সরবরাহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যার পানি কমে গেলে বিদ্যুৎ পুনরায় চালু করা হবে।

মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, বন্যাদুর্গতদের সরকারি সহায়তা দেওয়া হবে। রোববার থেকে বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হবে।

জামালপুর প্রতিনিধি:

যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জামালপুরে বন্যা পারস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গতকাল রবিবার বিকাল ৩ টায় বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ইসলামপুর ও দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নসহ জেলার অন্যান্য উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ইসলামপুর উপজেলার পাথর্শী ইউনিয়নের আমতলী এলাকায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় সড়র পথ তলিয়ে গেছে। এছাড়াও একই উপজেলার চিনাডুলি ইউনিয়নের ডেররাই পেচ এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বাড়ি ঘরে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, বন্যার পানি প্রবেশ করায় বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে  ৪৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠদান স্থগিত রাখা হয়েছে। জামালপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক জাকিয়া সুলতানা বলেন, বন্যার পানিতে এ পর্যন্ত এক হাজার ৭১৮ হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে আমন বীজতলা ২৫ হেক্টর, আউশ ধান দুই’শ ১৫ হেক্টর, পাট তের’শ ২৬ হেক্টর, শাকসবজি এক’শ ২২ হেক্টর এবং মরিচ ৩০ হেক্টর।

শাহরিয়ার মিল্টন, শেরপুর:

দ্বিতীয় দফায় বন্যায় শেরপুরের ৫০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। মহারশি, সোমেশ্বরী, চেল্লাখালী ও ভোগাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শেরপুর সদর, ঝিনাইগাতী, শ্রীবরদী, নালিতাবাড়ী ও নকলার ১৬টি ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। 

বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে ঝিনাইগাতী সদর ইউনিয়নের ঝিনাইগাতী, রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, বনকালি, চতল ও আহম্মদনগর, ধানশাইল ইউনিয়নের ধানশাইল, বাগেরভিটা, কান্দুলী, বিলাসপুর ও মাদারপুর এবং কাংশা ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর চরণতলা, আয়নাপুর, কাংশাসহ অন্তত ২০টি নিম্নাঞ্চল গ্রাম। পাহাড়ি ঢলের তোড়ে মহারশি নদীর  বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। ঝিনাইগাতী-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের ওপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে ঢলের পানি। পানিতে তলিয়ে গেছে কাঁচা-পাকা বহু সড়ক, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রিজ-কালভার্ট। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। সেইসঙ্গে তলিয়ে গেছে আমন বীজতলা ও সদ্য রোপিত আউশ ধান ক্ষেত। এতে ওইসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রয়োজনের তুলনায় ত্রাণ তৎপরতা অপ্রতুল হওয়ায় কষ্টের সীমা নেই সাধারণ মানুষের।

আরও পড়ুনঃ  এপ্রিলে ঘর পাবে আরও ৫০ হাজার পরিবার

শনিবার সকালে ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে ডুবে নিখোঁজ দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরা হলেন ঝিনাইগাতী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বৈরাগীপাড়া গ্রামের মৃত নফজ উদ্দিনের ছেলে কৃষক আশরাফ আলী (৬০) এবং ধানশাইল ইউনিয়নের বাগেরভিটা গ্রামের শেখ কাদের আলীর ছেলে রাজমিস্ত্রি আবুল কালাম (৩৩)। এদিকে শুক্রবার (১৭ জুন) সন্ধ্যায় নালিতাবাড়ী উপজেলার নন্নী উত্তরবন্দ গ্রামে বন্যার পানিবন্দি ঘরে বিদ্যুতস্পৃষ্ট হয়ে  শিপন (১৪) নামে ৭ম শ্রেণির এক মাদ্রাসা ছাত্র নিহত হয়েছে। অপরদিকে ঝিনাইগাতীতে বন্যার পানিতে আটকে পড়া ছয়টি পরিবারের ২৬ জন সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে।

ঝিনাইগাতী সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহাদৎ হোসেন জানান, তার ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের রামেরকুড়া এলাকায় মহারশি নদীর বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে। হঠাৎ পাহাড়ি ঢলের পানি প্রবেশ করা ছয়টি পরিবার বাড়ি থেকে বের হতে পারেনি। ওই পরিবারগুলোতে বৃদ্ধ, গর্ভবতী নারী, শিশুসহ ২৬ জন সদস্য ছিল। দিনভর পানিতে আটকে থাকায় এবং পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই পরিবারগুলো অনেকটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদের নেতৃত্বে শুক্রবার বিকাল পাঁচটা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা, জনপ্রতিনিধি, স্কাউট সদস্য ও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা ওই পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেন।

এদিকে ঝিনাইগাতী উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ বিতরণ করেছেন জেলা প্রশাসক সাহেলা আক্তার। শনিবার (১৮ জুন) দুপুরে তিনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বন্যা কবলিত রামেরকুড়া, ভাটপাড়া, বনকালী এলাকা পরিদর্শন ও ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, মহারশি নদীতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখা হবে। পাশাপাশি দ্রুত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধগুলো মেরামত করা হবে।

ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ১৫ মেট্রিক টন খয়রাতি (জিআর) চাল ও ৪০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। আরো ২০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হবে।

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

হঠাৎ বন্যার প্রভাব পড়তে শুধু করেছে ফরিদপুরে। ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ফরিদপুরে পদ্মার পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ফরিদপুরের চর অধ্যুষিত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এতে ফরিদপুরের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। গত ৪৮ ঘন্টায় পদ্মানদীর পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। যদিও এখন তা বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির যে হার তাতে দু একদিনের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করার শংকা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।  বিপৎসীমার ১ মিটার নিচে দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হলেও আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের আইজুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার মাসুদ সরদার বলেন, গত ৭-৮ দিন ধরে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে, দুইদিন যাবৎ পদ্মার পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে কয়েকদিনের মধ্যে অনেক বাড়িতে পানি উঠে যাবে।

সরেজমিনে জানা যায়,  কাইমুদ্দিন ডাঙ্গী এলাকার বৃদ্ধা মজিরন বেগম  জানান, দুদিন ধইরা যেমন কইরা পানি বাইড়্যা বাইস্যা অ্যয়ে যাচ্চে তাতে বয়্যে (ভয়ে) আছি। কি থ্যাইকা কি অ্যয়ে (হয়ে) যায়। খুব ঝামেলায় আছি। ফরিদপুর জেলা সদরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান মুস্তাক বলেন, ২ থেকে ৩ দিন ধরে আমার ইউনিয়নে হু হু করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুদিনে প্রায় এক ফুটের অধিক পানি বেড়েছে। এ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ৫শ’ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বদামসহ অন্যন্য ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  জিডিপি প্রবৃদ্ধির হিসাব মিলছে না : সিপিডি

চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সাইফুল ইসলাম আজম জানান, হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের বাদাম খেত তলিয়ে গিয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে কয়েকদিনের মধ্যে বাদামের সাথে সাথে এ ইউনিয়নের পাট, সবজি ও তিল ক্ষেত তলিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের কমপক্ষে সাড়ে পাচশত মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, ফরিদপুরে হঠাৎ বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই ফরিদপুরের পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়ালখাঁর পানি বাড়ছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ৫৭ সেন্টিমিটার পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো জানান, ফরিদপুরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যদিও পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ১ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায় বলেন, ত্রাণ বিতরণের মতো বন্যা এখনও হয়নি। তবে, বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের ব্যপক প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে ফরিদপুরের ৯ টি উপজেলার ইউএনও-কে ৭টন করে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের ১৫০ টনের অধিক ত্রাণ মজুদ রয়েছে। আশা করি, বন্যা মোকাবেলায় তেমন কোনো সমস্যা হবেনা।

আব্দুল কাদের, কুড়িগ্রাম:

কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। এ পর্যন্ত পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় দুই লক্ষাধিক মানুষ। বানভাসী এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গোখাদ্য ও জ্বালানীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শনিবার সকালে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ১৩ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ২২ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে ৭ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে ২২ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

পানির তীব্র স্রোতে নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মরিয়াহাট এলাকার একটি বেড়িবাঁধের প্রায় ২০-২২ ফুট অংশ শুক্রবার ভেঙে যায় বলেও জানান তিনি।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার জানান, গত তিনদিনে অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কুড়িগ্রামের নয় উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের ১৫০টি গ্রামের প্রায় দুই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এবং ৬০টি পরিবারের বসতবাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তিনি বলেন, রৌমারী, উলিপুর ও কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির বেশি অবনতি হয়েছে।  প্রায় ৩ হাজার হেক্টর ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। বানভাসী এলাকায় শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও জ্বালানীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নদীভাঙন ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বানভাসী মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

এই পরিস্থিতিতে উপাজেলা প্রশাসন থেকে রৌমারীতে ৬ হাজার এবং সদর উপজেলায় প্রায় ৫০০ প্যাকেট শুকনো খাবার দুর্গতদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের এক হাজার দুইশ বাড়ি পানিতে ডুবে গেছে এবং প্রায় ৬ হাজার মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে বলে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান। তিনি বলেন, যাত্রাপুরে গত ৫ দিনে তিন হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। এছাড়া নদী ভাঙ্ন এবং পানির তোড়ে আরাজিপাড়া, রলাকাটা ও চর যাত্রাপুরের ৬০ পরিবার বাড়িঘর হারিয়েছে। কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম জানান, বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় জেলায় প্রায় ৬৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে আর একটি প্রতিষ্ঠান আশ্রয় কেন্দ্র হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, বন্যা পরিস্থিতিতে রৌমারী উপজেলায় ৪৪টি এবং কুড়িগ্রাম সদর উপজেলায় ১১টিসহ ৫৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাসেদুল হাসান বলেন, তারা দুর্গত এলাকা পরির্দশন করে এরই মধ্যে উদ্ধার ও শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম শুরু করেছেন। তাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদ রয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  প্রতিবন্ধীদের সহায়তায় শুল্কছাড়

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আব্দুর রশীদ বলেছেন, দ্বিতীয় দফা বন্যায় তলিয়ে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। পানি নেমে গেলে ক্ষয়-ক্ষতির হিসেব করে কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে, যাতে বন্যা পুনর্বাসন প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় তাদেরকে সহযোগিতা করা যায়।

সিভিল সার্জন ডা. মো. মনজুর এ মুর্শেদ সাংবাদিকদের জানান, বন্যা কবলিতদের চিকিৎসা সেবা দিতে ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম দুপুরে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ারচর ও রলাকাটা এলাকার বন্যাদুর্গত মানুষের খোঁজ-খবর নেন এবং ত্রাণ বিতরণ করেন।  তিনি বলেন, বন্যায় মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে নয় উপজেলার বন্যাদুর্গত মানুষের সহায়তার জন্য ২৯৫ মেট্রিকটন চাল, নগদ ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, এক হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার, শিশু খাদ্য ক্রয় বাবদ ১৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং গোখাদ্য ক্রয় বাবদ ১৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা জেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ দিয়ে তা উপজেলা পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা প্রস্তুত করে বিতরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ৮ লাখ টাকা এবং ৩০৮ মেট্রিকটন চাল মজুদ রয়েছে। আরও পাঁচ’শ মেট্রিকটন চাল, ১০ লাখ টাকা এবং ১০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার নতুন করে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ব ঢলে  তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে জেলার পাঁচ উপজেলার তিস্তার তীরবর্তী ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে  খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

গতকাল রবিবার সকাল ৬টায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে পানি ৫২.৭২ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২.৬০) যা বিপদসীমার ৫)১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিকেল তিনটায় তিস্তার পানি বিপদ সীমার ১০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

ধরলা নদী শিমুলবাড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ৯ সে. মি ওপরে রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে শনিবার রাত ১০টায় তিস্তার ব্যারাজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সে. মি ওপরে প্রবাহিত হয়। জানা যায়, তিস্তা ও ধরলার পানি বৃদ্ধি ও জেলার পাটগ্রামের দহগ্রাম, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী,দোয়ানী,ছয়আনী, সানিয়াজান ইউনিয়নের নিজ শেখ সুন্দর, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউপির রমনীগঞ্জ, সিঙ্গামারি ইউনিয়নের ধুবনী, সিন্দুর্না ইউপির পাটিকাপাড়া,হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি,আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী ও সদর উপজেলার ফলিমারীরচর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি প্রবেশ প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফকির পাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলার রহমান খোকন জানান, গত দুইদিন ধরে প্রায় ১শ’ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ সহায়তা পাওয়া হয়নি।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, উজানের ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে রবিবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার তীরবর্তী পরিবারগুলোকে নিরাপদ স্থানে যেতে বলা হয়েছে।

গত দুইদিন থেকে তিস্তার পানি ঘর বাড়িতে প্রবেশ করায় পরিবারগুলো রান্না করতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। অনেকেই উঁচু স্থানে চুলা জ্বালিয়ে কোনরকম  রান্না করে এক বেলা খেয়ে জীবন যাপন করছেন।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর  বলেন,  বন্যা কবলিত জেলার পাঁচ উপজেলায় ১৫০ মেঃ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার তা বিতরণ ও শেষ হয়েছে। বন্যা কবলিত যেসব এলাকা আছে সেগুলোতে শুকনো খাবার বিতরণের অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে গত শনিবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ, হাতীবান্ধা উপজেলার নির্মাণাধীন দোয়ানী গাইড বাঁধ ও তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস সহ গত আকস্মিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চলমান একাধিক কাজ পরিদর্শন করেছেন।

এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন রংপুর পওর সার্কেলের খুশি মোহন সরকার, রংপুর পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলি আহসান হাবীব, ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন