সিলেটে বন্যার পানি কোথাও এক থেকে দেড় ফুট বেড়েছে আবার কোথাও সমপরিমান কমেছে। এই বাড়া-কমার মধ্যে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সিলেটে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
সিলেটের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে আরও তিন-পাঁচদিন ভারি বৃষ্টি হবে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকারি আবহাওয়া অফিস। এখনও সিলেট বিভাগীয় শহরের সঙ্গে বন্ধ কোম্পানীগঞ্জ এবং গোয়াইনঘাট উপজেলা ও সুনামগঞ্জ জেলার সড়ক যোগাযোগ।
আজ রবিবার সিলেট মহানগর, জৈন্তাপুর, বিশ্বনাথ ও সিলেট সদর উপজেলায় বন্যার পানি কমেছে এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত। কিন্তু জকিগঞ্জ, কানাইঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় পানি বাড়ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয় এবং উপজেলাগুলোর স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়।
আজ রবিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সিলেট মহানগরের ঘাসিটুলা, কলাপাড়া, লামাপাড়া, নগরের শামীমাবাদ, কানিশাইল, মজুমদারপাড়া, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট, সুরমা আবাসিক এলাকা, আখালিয়া, শাহজালাল উপশহর, ওসমানী মেডিকেল রোড, সোবহানিঘাট, শাপলাবাগ ও এয়ারপোর্ট থানার চালিয়া, উপরপাড়া, গোয়াবাড়ি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার পানি কমেছে এক থেকে দেড় ফুট পর্যন্ত। কিন্তু পানি কমলেও এখনও বাসাবাড়িতে প্রচুর পানি রয়েছে।
নগরের ঘাসিটুলা এলাকার বাসিন্দা ইশতিয়াক আহমদ জানান, আজ বৃষ্টি কম হওয়ায় পানি এক থেকে দেড় ফুট কমেছে। তবে বাসাবাড়িতে এখনো এক থেকে দুই ফুট পর্যন্ত পানি আছে। বাবা-মা-বোনসহ আমাদের পরিবারের পাঁচ সদস্য এখনো ঘাসিটুলা ইউসেপ টেকনিক্যাল স্কুলে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রে আছি। কেন্দ্রের মানুষ খাবার সংকটে আছে। অনেকেই অভুক্ত।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম ঝলক জানান, লালাদিঘির পাড় এলাকায় আমার বাসাসহ, ভাতালিয়া, কুয়ারপাড়, বিলপার ও ইঙ্গুলাল রোডে পানি থইথই করছে। আজ প্রায় এক ফুট পানি কমেছে। তবে আমার বাসায় এখনো হাঁটুসমান পানি।
সিলেট সদর উপজেলার ১ নম্বর জালাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ওবায়দুল্লাহ ইসহাক জানান, আমার ইউনিয়নে প্রায় এক ফুট পানি কমেছে। বন্যায় এ ইউনিয়নের মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো ইউনিয়নের ৯৫ ভাগ এলাকা পানির নিচে। বন্যাদুর্গতদের সহায়তায় সরকারের পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে সিলেটের জকিগঞ্জে বন্যার পানি বেড়েছে বলে জানা যায়। জকিগঞ্জ উপজেলার কাজলসার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোস্তাক আহমদ জানিয়েছেন, কুশিয়ারা নদীর অমলসীদ পয়েন্টে পানি আজও বেড়েছে। এ কারণে বেশ কয়েকটি ডাইক ভেঙে পানি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় ঢুকছে। ক্রমেই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এ অবস্থায় বন্যাদুর্গত লোকজনের মধ্যে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারিভাবে পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর আহ্বান জানান তিনি।
জকিগঞ্জ উপজেলার স্থানীয় সাংবাদিক এনামুল হক মুন্না বলেন, জকিগঞ্জের বীরশ্রী ইউনিয়নের পীরনগর গ্রামে কুশিয়ারা নদীর তীররক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভয়াবহ বন্যায় রারাই গ্রামে কুশিয়ারা নদীর বেড়িবাঁধে ভেঙে তলিয়ে গেছে রারাই, ফলাহাট, পাঠাবচক, ইলাবাজ, ভরণ, শীতলজুরা, হাইলইসলামপুর, আনারসিসহ অনেক গ্রাম।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ চৌধুরী জানান, আজ সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খুব কম পরিমাণে বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুপুর ২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া বৃষ্টির পরিমাণ খুবই কম ছিল। তবে সন্ধ্যায় কিছু সময়ে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আগামীকাল থেকে আকাশে মেঘের পরিমাণ কমে আসবে। বৃষ্টিপাতও কমে হবে।
আনন্দবাজার/টি এস পি