শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যায় সিলেট ও নেত্রকোনায় পানি বন্দি লাখো মানুষ

টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। তলিয়ে গেছে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক। বাড়িঘরে ঢুকেছে বন্যার পানি। অনেক স্থানে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র ও বৈদ্যুতিক খুঁটি তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বন্যার পানি ইতোমধ্যেই সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে প্রবেশ করেছে। এতে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশ ও বিদেশের বিমান যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করায় সিলেটে বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে কাজ শুরু করছে সেনাবাহিনী।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আনোয়ার সাদাত বলেন, বানভাসি মানুষকে উদ্ধার করা আমাদের প্রথম চ্যালেঞ্জ। যেভাবে পানি বাড়ছে তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। বন্যাকবলিত অঞ্চলে আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধার করতে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে।

অন্যদিকে, টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নেত্রকোণার হাওর এলাকাসহ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার কয়েকটি উপজেলার অন্তত লক্ষাধিক মানুষ। বসতঘরে পানি ঢুকে পড়ায় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে অনেকে গবাদিপশু নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে ছুটছেন।

পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণের ফলে জেলার প্রধান নদ-নদী সোমেশ্বরী, কংস, মগড়া, উব্দাখালী ও ধনুসহ হাওরগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুর পর্যন্ত জেলার কলমাকান্দা উপজেলার ডাকবাংলা পয়েন্টে উব্দাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৬১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলেন জানান পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় পরিমাপক মোবারক হোসেন।

আরও পড়ুনঃ  টিসিবির জন্য তেল-ডাল

গত ২৪ ঘণ্টায় কলমাকান্দায় ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এতে কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদ, নয়াপাড়া, মুক্তিচর, বিশরপাশা, বাউশাম, হরিপুর চকবাজার, আনন্দপুর, বরুয়াকোনা, রংছাতি ও বড়খাঁপন কাঁচা ও পাকা সড়ক প্লাবিত হয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার দুর্গাপুর উপজেলা সদরসহ কুল্লাগড়া, গাওকান্দিয়া ইউনিয়নে বাড়িঘর, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এ দুই উপজেলার সঙ্গে প্রায় সবকটি ইউনিয়নের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের জৈনপুর, ভাটাপাড়া, রঘুরামপুর, ফাগুয়া, হানবীর, বড়পাইকুড়া, গজধার, পশুখালী, হরিপুর, আজমপুর, নোওয়াগাঁও, ধুলিয়া ও উদয়পুরসহ বেশ কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে জেলার বারহাট্টা উপজেলার অনেক এলাকাও। এছাড়া প্লাবিত হয়েছে বিভিন্ন রাস্তাঘাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। অতিবর্ষণের ফলে নতুন কিছু এলাকা প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি জেলার কমপক্ষে তিন সহস্রাধিক পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিস বলেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে বন্যা কবলিত প্রতিটি উপজেলায় ২০ মেট্রিক টন করে চাল ও নগদ দুই লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণসহ ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন