শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পটল চাষে ভাগ্যবদল

পটল চাষে ভাগ্যবদল

গাইবান্ধায় সব ধরনের সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম পটল। কৃষকরা ক্ষেত পরিচর্যা ও পটল তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনুকূল আবহাওয়ায় ভালো ফলনের পাশাপাশি বাজার দর ভালো পাওয়ায় খুশি চাষিরা।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চৈত্র, বৈশাখ মাস থেকে পটল উঠানো শুরু হয়। অনুকূল আবহওয়ায় চলতি মৌসুমে পটলের ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি বাজার দর ভালো পাওয়ায় লাভবান হয়েছেন চাষিরা। প্রতি কেজি খুচরা বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা । গাইবান্ধা জেলা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ী, গোবিন্দগঞ্জ, সাঘাটাসহ সাত উপজেলার অনেক জমিতে পটল চাষ হয়েছে। কার্তিক মাসে জমিতে মাচা করে লাগানো পটলের সারিসারি ক্ষেত দেখলে কৃষকসহ সকলের মন ভরে ওঠে। মাচায় মাচায় ঝুলছে কৃষকের স্বপ্ন। রাস্তার দুপাশে যতো দুর চোখ যায় পটলসহ সাথী ফসলের ক্ষেত। শুধু পটল নয় একই মাচায় ঝুলছে চিচিংঙ্গা, ধুন্দল, করলাসহ নানা জাতের সাথী ফসল। এসব এলাকায় হাট বসে কয়েক জায়গায়। হাট থেকে পাইকাররা ট্রাক ভর্তি করে কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন হাঁট বাজারে।

গাইবান্ধা সদর উপজেলার ঘাগোয় ইউনিয়েনের পটল চাষি আজগার আলী বলেন, ধান কিংবা অন্য ফসলে ঝামেলা বেশি। তাই এবার মাচায় যে পটলের চাষ শুরু করছি। প্রথম অবস্থায় ২০ হাজার টাকার পটল বিক্রি করেছি তারপরেও আরও অন্তত ৬০ হাজার টাকার পটল বিক্রি করতে পারবো মনে করি। তাতে খরচ বাদ দিয়ে আমার লাভ হবে অন্তত ৬০ হাজার টাকা।

সদর উপজেলার কৃষক হামিদ মিয়া বলেন, আমার ৪ বিঘা ভাতি জমি আছে। তাতেই আমি সব মৌসুমে ধানের ফলন ফলাই। কিন্তু লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হতো। কৃষি বিভাগের পরামর্শে এক বিঘা জমিতে পটল চাষ শুরু করি। তাতে করে আমার বাজারে কাঁচা বাজারের জন্য বাজার যেতে হতো না। এখন সেই জমি থেকে প্রতি সপ্তাহে আমি নদর টাকা পাই। তাই দিয়ে আমার ছেলে মেয়ের শিক্ষা খরচসহ সংসারে যাবোতি খরচ মিটায়ে যেতো। এখন শুধু আমার পারিবারে জন্য যে কয় মণ ধান লাগে তার জন্য ধানের আবাদ করি। তাছাড়া সব জমিতে এখন সবজি আবাদ শুরু করেছি। এখন আর দেনা করে সংসার চলাতে হয়না। এখন আমার হাতে নগদ টাকা থাকে সবসময়।

আরও পড়ুনঃ  সারাদেশে কোয়ারেন্টাইন সম্পন্ন করেছে ৪২৭১২ জন

সদর উপজেলার গিদারীর পটল চাষি আজাদ মিয়া বলেন, তিনি এবার তার ৩ বিঘা জমিতে পটল চাষ করেছেন। পটল চাষে ঝামেলামুক্ত এবং অল্প খরচেই হয় বলে এ আবাদ বেশ লাভজনক। পটল মানেই নগদ টাকার আবাদ। লাভের অংশ বেশি হওয়ায় প্রতিবছরই কৃষকদের মাধ্যে পটল চাষের আগ্রহ বাড়ছে। আতিমাত্রায় বৃষ্টি বা বন্যা না হওয়ায় অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে পটল আবাদ হয়েছে। এক বিঘার জমি থেকে সপ্তাহে ৫ থেকে ৭ মণ পর্যন্ত পটলের উৎপাদন হচ্ছে। এছাড়াও পটলের মধ্য আদা, কাচা মরিচ, হলুদ, আদা, মুখিকচু আবাদ করছেন তারা। বিক্রি করেও নিজের চলে যায়।

পুরাতন বাজারে পটল ব্যাপারী হাসান মিয়া বলেন, ঢাকা থেকে পটল কিনতে আসে অনেকে। হাটবারে পটল কিনে রাতেই নিয়ে যাবেন। উৎপাদনের শুরুতেই বাজারে প্রতিমণ পাটল এক হাজার থেকে ১২শ’ টাকায় বিক্রি হলেও এখনো তা ১ হাজার থেকে হাজার পঞ্চশ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আমরা কম লাভে আড়তে বিক্রি করি। কাঁচামালের ব্যবসা ভালো মন্দ দুই আছে। সে কারণে প্রতিদিন কিনি প্রতিদিন বেচি।

গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বেলাল হোসেন জানান, এবার জেলায় ৪৮১ হেক্টর পটলের চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলন ২০ মেট্রিক টন। সরকার এ সবজির ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করলে পারলে এ চাষ আগামীতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন চাষিরা।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন