শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাহাড়ে ‘রক্তে ভেজা গৌরবগাঁথা’ মঞ্চায়ন

পাহাড়ে ‘রক্তে ভেজা গৌরবগাঁথা’ মঞ্চায়ন

সন্ধ্যায় বিদ্যুতের নানা রঙের আলো ঝলমল করছে। নাটকের মুর্হুত চোখ চলমল করছে শিল্পীদের। কিছুক্ষণ পর পর ভয়ংকর শব্দ। এটি রক্তে ভেজা গৌরবগাঁধা নাটকের মঞ্চায়নের গল্প। মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, শরণার্থী জীবন ও পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর সে সময়ের ভাবনা উঠে খাগড়াছড়িতে মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার গল্প নিয়ে মঞ্চ নাটক রক্তে ভেজা গৌরবগাঁথা। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় খাগড়াছড়ি সদরের বিসিক শিল্পনগরীতে নাটকটি মঞ্চায়িত হয়।

মুজিব জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে পরিবেশ থিয়েটারের এ নাটকে ফুটিয়ে তোলা হয় গণহত্যা, শরণার্থী জীবন ও যুদ্ধকালীন সময়ে খাগড়াছড়ির পার্বত্য অঞ্চলের পরিস্থিতি। নাটকের রচয়িতা ও নির্দেশক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের প্রভাষক সুবীর মহাজন।

নাটক উদ্বোধন করেন প্রধান অতিথি ছিলেন ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী।

খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রæ চৌধুরী অপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস, খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, খাগড়াছড়ি বিজিবি সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম ত্রিপুরা ও খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে সারাদেশে সংগঠিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির লক্ষ্যে সাংস্কৃতিক কর্মকাÐের মাধ্যমে কাজ করছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী। পরিবেশ থিয়েটারের মাধ্যমে দেশজুড়ে ঘটে যাওয়া এসব গণহত্যার গল্প তুলে আনার কাজ করছেন শিল্পী, সংগঠক ও কলাকুশলীরা।

আরও পড়ুনঃ  এক্সপ্রেসওয়েতে আরও ৩টি বুথ চালু

এরই ধারাবাহিকতায় খাগড়াছড়ির মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা, শরণার্থী জীবন ও পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর সে সময়ের ভাবনা উঠে আসে রক্তে ভেজা গৌরবগাঁথা নাটকে। মুক্তিযুদ্ধে খাগড়াছড়ির মানুষের ত্যাগ, অবদান ও ভূমিকা নিয়ে নানা চরিত্রে অভিনয় করেন জেলা শিল্পকলা একাডেমীর রেপার্টরি নাট্যদলের শিল্পীরা।

তৎকালীন মং সার্কেল টিফ মংপ্রæ সাইনের মানিকছড়ির রাজ বাড়িতে শরণার্থী ও মুক্তিকামী মানুষের জন্য রাজ তহবিল বিলিয়ে দেয়ার গল্পের মধ্যে ফুটে উঠেছে পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর মুক্তিযুদ্ধে অবদানের গল্প। এসব চরিত্রে কাজের সুযোগ পেয়ে খুশি তরুণ প্রজন্মের শিল্পীরা।

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে হলেও এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন সুশীল সমাজ। পাহাড়ের মানুষের সে সময়ে পাক-বাহিনী নিয়ে উৎকণ্ঠা, গণহত্যাসহ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এ অঞ্চলের পরিস্থিতি কিছুটা হলে পরিবেশ থিয়েটারের আদলে উপস্থাপনের চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস আগামী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণের জন্য এমন উদ্যোগ সহায়ক হবে বলছেন নাটকের রচয়িতা ও নির্দেশক।

শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ নাটকের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রাম ছাড়াও ১৯৪৭ এর দেশ ভাগ, ৫২র’ ভাষা আন্দোলন ও ছয় দফা আন্দোলনসহ মুক্তিযুদ্ধের নানা অজানা তথ্য ফুটিয়ে তোলেন শিল্পীরা। মঞ্চ নাটকটি উপভোগ করতে বিসিক শিল্পনগরী মাঠ শতশত মানুষ ভিড় জমায়।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন