শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মশারি শিল্পে বড় বাণিজ্য

আনন্দবাজার
মশারি শিল্পে বড় বাণিজ্য

মশার উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় কদর বেড়েছে মশারীর। তাই ব্যস্ত সময় পার করছে রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌর এলাকার মশারী শিল্পীরা। এবার প্রায় ২০ কোটি টাকার মশারী বিক্রি-বাট্রার আশা করছেন তাঁতীরা। রূপগঞ্জের কাঞ্চন মশারী পল্লীর তৈরি মশারীর সারাদেশে রয়েছে বিশেষ সুখ্যাতি। এই সুবাদে রূপগঞ্জের মশারী ছড়িয়ে পড়েছে সবখানে। রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। মশারী পল্ল¬ী ঘিরে গড়ে উঠেছে প্রচুর মশারী তৈরির কারখানা। অনেকেই এ ব্যবসা করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন। কর্মসংস্থান হয়েছে অনেক মানুষের।

জানা  যায়, ১৯৬৪ সাল থেকে রূপগঞ্জে মশারী তৈরি শুরু হয়। রূপগঞ্জের কাঞ্চন এলাকায় তাঁতিরা কাপড় বোনা ছেড়ে জড়িয়ে পড়েন মশারী তৈরিতে। আর এ মশারীর এখন সারাদেশে কদর। দেশের সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে মশারী। রূপগঞ্জে প্রথম মশারী উৎপাদন শুরুহয় কাঞ্চনের রানীপুরা এলাকায়। এরপর ধীরে ধীরে কেন্দুয়া, কলাতলী, কালাদী, চৌধুরীপাড়া, পেরাব, ভুলতা, গোলাকান্দাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে মশারী তৈরির কারিগররা। নারায়ণগঞ্জ একসময় বাংলাদেশের সুতা বিক্রয়ের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তাঁতীরা এখান থেকে সুতা কিনে নৌকাযোগে নিজ নিজ এলাকায় নিয়ে তৈরি করতেন মশারী। আধুনিক ছোঁয়ায় সেই তাঁতের মশারী এখন প্রায় বিলুপ্ত। স্থানীয় তাঁতীরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন নেট মশারী তৈরি করছেন।         

মশারী শিল্পীদের কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে রূপগঞ্জে প্রায় দেড় শতাধিক মশারী উৎপাদনের কারখানা রয়েছে। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ লাখ পিস মশারী তৈরির কাপড় উৎপাদন করে মশারী তৈরি করছে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়। গত অর্থবছরে রূপগঞ্জের ভুলতা-গাউছিয়া এলাকা থেকে প্রায় ১৪ কোটি টাকার মশারী ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতি

সরেজমিনে রূপগঞ্জের মশারী তৈরির কারখানাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এবার মশার উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় তাদের রমরমা অবস্থা। দিন-রাত শ্রমিকরা কাজ করে মশারী তৈরির নেট কাপড় তৈরি করছেন। এসব কাপড় স্থানীয় কারিগরদের দিয়ে ৩ হাত, ৪ হাত, ৫ হাতসহ বিভিন্ন সাইজের মশারী তৈরি করে তাদের গোডাউনে গুদামজাত করছেন। একসময় রূপগঞ্জে মশারীর তাঁতীরা নরসিংদী, শেখেরচর, ঢাকার সদরঘাট, বরিশাল, ফরিদপুর, খুলনায় মশারী বিক্রি করলেও রূপগঞ্জে মশারী শিল্প কারখানা বাড়তে থাকায় রূপগঞ্জেই তৈরি হয় মশারীর বাজার। ভুলতা গাউছিয়া মার্কেটে মশারী ব্যবসায়ীরা ৬শ’ দোকান নিয়ে তৈরি করেছেন মশারীর হাট। প্রতি মঙ্গলবারের পাশাপাশি সপ্তাহের প্রতিদিনই এখান থেকে ট্রাক বোঝাই করে ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে মশারী সরবরাহ করছেন।

কথা হয় এসআর নিটিং-এর মালিক আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, মশার উৎপাত বেড়ে যাওয়ায় এবার মশারীর কদর বেড়েছে। মাজেদা নিটিং-এর মালিক নজরুল ইসলাম জানান, একসময় সুতার মশারী তৈরি হতো। এখন নেটের মশারী তৈরি হয়। প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার মশারী দেশের বিভিন্ন এলাকাসহ দেশের বাইরে যায়। থ্রি-স্টার মিলের মালিক আবদুল করিম জানান, রূপগঞ্জের  মশারী গাউছিয়া মার্কেট থেকে রপ্তানি হচ্ছে। লাভও হচ্ছে প্রচুর। প্রতি বছর রূপগঞ্জ থেকে প্রায় ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকার মশারী বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন