শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ওরা খাবার হোটেল থেকে বিতাড়িত

আনন্দবাজার
ওরা খাবার হোটেল থেকে বিতাড়িত

হরিজন হওয়ায় বৈষম্য

  • হোটেল বন্ধে দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

যে মানুষগুলো ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে শ্রী বৃদ্ধি করছেন শহরের। নিজ হাতে পুরো শহরকে পরম মমতায় শ্রীমান করে রাখলেও সেই মানুষগুলোই আজীবন অধিকার বঞ্চিত। হোটেল মালিকরা খাবার খেতে হোটেলে প্রবেশ করতে দেয় না। ঠাঁই হয় না তাদের বিশাল এ শহরের কোনো স্থানে। শহরের বিশাল অট্টালিকার মাঝে ঢাঁকা পড়ে থাকে তাদের অধিকার, স্বপ্ন, বাসস্থান আর বুকে চেপে রাখা কষ্ট গুলো।

এমন ঘটনা ঘটেছে নাটোরের গুরুদাসপুরে। গত ৩১ মে মঙ্গলবার হরিজন সম্রদায়ের যুবকরা গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা বরাবর এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। যার কারণে হোটেল মালিক সমিতি ১ জুন বুধবার থেকে বন্ধ রেখেছেন তাদের হোটেল। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন ভ্রম্যমাণ মানুষসহ হাটে আসা লোকজন।

“মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভুতি কি মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু” ভুপেন হাজারিকার শত বছরের এ পুরাতন গানটাই গুনগুন করে গাইছিলেন নাটোরের গুরুদাসপুরের হরিজন সম্প্রদায়ের নারী শ্রমিক জুলি বাঁশফোর।

তিনি জানান, বাসাবিহীন ককিল পাখিরা যেমন ওদের মিষ্টি সুরে গান গেয়ে মাতোয়ারা করে রাখে গোটা প্রকৃতিকে। তেমনি জুলিরাও পুরো শহরটাকে পরিস্কার পরিচ্চন্ন করে রাখেন আপন মহিমায়। অথচ আজীবন তারা অধিকার বঞ্চিত।

সরেজমিনে গুরুদাসপুর পৌরসভার হরিজন পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, পৌর সভার বাহিরে সামান্য একটু জায়গার উপরে ২৪ টি পরিবারের মোট ১৪৪ জন সদস্য ঠাসাঠাসি করে বসবাস করছেন। ওই সম্প্রদায়ের নারী শ্রমিক বেলী বাঁশফোর(৪২) জানান, ১০ ফুট বাই ১৪ ফুটের ছোট্ট একটি জরাজীর্ণ ঘরে স্বামী জিতেন বাঁশফোর(৪৮) ও দুই ছেলে বিপ্লব (২০) স্ত্রী মিনা (১৮) ৬ মাসের নাতি জোসেফ এবং ছোট ছেলে অন্তর(১১) এবং দুই মেয়ে পুঁজা ও পূর্ণিমাসহ ৮ জন একত্রে বসবাস করছেন একই ঘরে। এক পরিবার খাটের ওপর, আরেক পরিবার নিচে, আর ঘরের সঙ্গে নামকাওয়াস্তে যে বারান্দা, সেখানে ঘুমায় জিতেন বাঁশফোর ও স্ত্রী বেলীরানী।

আরও পড়ুনঃ  নাসার আবহাওয়া বিজ্ঞানী হলেন শাবিপ্রবির ফাহাদ

ওই পল্লীরই বাসিন্দা স্বদেশ বাঁশফোরের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে রোজী মোজাম্মেল মহিলা অনার্স কলেজের ছাত্রী অনিতা(২১) বলেন, আমাদের অধিকার বলে কিছু নেই। অন্য সমাজের কাছেও নেই। আমরা সব অধিকার থেকে বঞ্চিত। তথা কথিত ‘সভ্য মানুষ’রা আমাদের অধিকার হরণ করে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে ভালো নেই নাটোরের গুরুদাসপুরের হরিজন পল্লীর মানুষগুলো।

বাংলাদেশ হরিজন যুব উন্নয়ন পরিষদের কেন্দ্রী কমিটিরি আহবায়ক রাজেস বাঁশফোর জানান, উপজেলা প্রশাসন থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি পর্যন্ত সবাইকে বিষয়টি লিখিত এবং মৌখিকভাবে অবগত করা হয়েছে। তার পরেও হোটেল মালিকরা হোটেল বন্ধ রেখেছেন। যা সরাসরি বাংলাদেশ সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে চপেটাঘাত করার শামীল। এর সুষ্ঠু সমাধান দরকার। অন্যথায় আমাদের সম্প্রদায় বসে থাকবে না।

এ ব্যাপারে হোটেল মালিকরা কথা বলতে রাজি হননি। হোটেলে খেতে আসা বেশ কয়েকজন জানান, ব্যবসায়ী ব্যস্ততার কারণে সকালে নাস্তা ও দুপুরের খাবার হোটেলেই খেয়ে থাকি। তবে, হঠাৎ করে হোটেল বন্ধ থাকায় কলা-রুটি খেয়ে আছি। এতে আমাদের সমস্যা হচ্ছে।

গুরুদাসপুর উপাজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা তমাল হোসেন জানান, হরিজন সম্প্রদায়ের পরিচ্ছন্ন কর্মীদের মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। মাসিক আইন শৃঙ্খলা মিটিংয়ে বিষয়টি উত্থাপন হয়েছে। জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, সুশিল সমাজ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সকলের সহযোগিতায় বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চলছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন