শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শেরপুর জমিদার বাড়ির কথা

শেরপুর জমিদার বাড়ির কথা

এক সময় শেরপুর ছিল জমিদার অধ্যুষিত অঞ্চল। শের আলী গাজী ছিলেন শেরপুর পরগনার শেষ মুসলিম জমিদার। খ্রিষ্টিয় অষ্টাদশ শতাব্দীর সূচনায় দশকাহনীয়া বাজু’র জায়গীরদার হন গাজী বংশের শের আলী গাজী। এ খ্যাতিমান শাসক ২১ বছরকাল তার শাসনকার্য পরিচালনা করেন। কিংবদন্তী খ্যাত এ শাসকের নামেই জেলার নামকরণ করা হয় শেরপুর। নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁর বিচারে শের আলীর গাজীর জমিদারি বাতিল করে রামনাথ চোধুরীকে শেরপুর পরগনার জমিদারি দেয়া হয়। তিনি ছিলেন শেরপুর পরগনার প্রথম হিন্দু জমিদার। তার উত্তরসূরিরাই পরবর্তীতে ছিলেন শেরপুর পরগনার জমিদার। ১৭৯০ সালে ময়মনসিংহের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর ডব্লিউ রাটন শেরপুরের এ জমিদারদের সঙ্গে দশসনা বন্দোবস্ত সম্পাদন করেন। পরবর্তীতে স্টিফেন বায়ার্ডের সঙ্গে তাদের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হয়।

১৮২০ সালে  শেরপুরের চৌধুরীদের ষোল আনী জমিদারি প্রথমে নয়আনী ও সাত আনীতে ভাগ হয়। পরে সাতআনী বিভক্ত হয় তিন আনী,পনে তিনআনী, আড়াইআনী বড় বাড়ী, আড়াই আনী ছোট বাড়ী ও দেড় আনী বাড়ীতে । আজ নেই জমিদার, নেই তাদের জমিদারি। আছে শুধু কিছু স্মৃতি চিহ্ন। সংরক্ষনের অভাবে সেগুলোও নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে।

নয় আনী বাড়ী : এ বাড়ীর সন্তানরা শিক্ষিত ছিলেন। অনেকে ছিলেন অনারারী  ম্যাজিস্ট্রেট। বিচার কার্য করা এ বাড়ীর সন্তানদের ছিল শখ। হয়তো স্থান মহাত্মেই আজ এ বাড়িতে শেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। এ বাড়ীর সর্বশেষ কৃতি জমিদার কিরণ রায় চৌধুরী। তিনি বীনাপাণি ফুটবল টিম ও বীনাপাণি পাঠাগার প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করেন।

আরও পড়ুনঃ  ঝালকাঠিতে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতার সংবাদ সম্মেলন

তিন আনী বাড়ী : এ বাড়ীর খ্যাতিমান জমিদার ছিলেন রাধা বল্লব চৌধুরী। তিনি ছিলেন বিদ্যান, বিদ্যানুরাগী এবং পরম নিষ্ঠাবান বৈষ্ণব। তার ছোট ভাই বিএল চৌধুরী (বানোয়ারী লাল চৌধুরী) উচ্চ শিক্ষার জন্য বিলেত যান। তিনিই শেরপুর শহরের প্রথম বিলেত ফেরত ব্যক্তি। সেই তিন আনী বাড়ীতে আজ শেরপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ (স্থাপিত : ১৯৬৪ সাল)।

 পনে তিনআনী বাড়ী : এ বাড়ীর সর্বশেষ প্রখ্যাত জমিদার ছিলেন জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরী ও সত্যেন্দ্র মোহন চৌধুরী। জ্ঞানেন্দ্র মোহন চৌধুরী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট । তিনি চিরকুমার ছিলেন। সত্যেন্দ্র মোহন চৌধুরী ছিলেন বি.এ , বি.এস.সি। তারা দুই ভাই ছিলেন বিলাসী ও সৌখিন। বিভিন্ন দেশ থেকে গাছপালা এনে তার বাগান করেছিলেন। এদের বৃক্ষ প্রীতি ছিল প্রচুর। স্থান মহাত্মে এ বাড়ীটি বর্তমানে কৃষি প্রশিক্ষন ইনস্টিটিউট (স্থাপিত : ১৯৫৭ সাল)। এরা রং মহল তৈরি করে যাদুঘরের অভাব দুূর করেছিলেন। এখানে ছিল সোনার তাল গাছ।

আড়াই আনী বড় বাড়ী : এ বাড়ীর সর্বশেষ জমিদার ছিলেন গোপাল দাস চৌধুরী। তিনি গোবিন্দ কুমার চৌধুরীর পোষ্য পুত্র ছিলেন। তিনি কলকাতা থেকে এম.এ , এল.এল.বি পাস করেন। গোপাল দাস চৌধুরী ১৯১৯ সালে বড় দীঘি খনন, জি.কে. স্কুল বিল্ডিং নির্মাণ ও শ্রী শ্রী রঘুনাথ জিউর মন্দির তাজের নমুনায় তৈরি করেন। হয়তো তার বিদ্যানুরাগের মহাত্মে এ বাড়ীটি বর্তমানে শেরপুর সরকারী মহিলা কলেজ (স্থাপিত : ১৯৭২ সাল)। এদের  ফুলের বাগান বাড়ীটি বর্তমানে শেরপুর নিউমার্কেট। জমিদারদের কর্মচারিদের থাকার জন্য একটি মেস বাড়ি ছিল। এখানে বর্তমানে সাব রেজিষ্টারী অফিস ও এএসপি অফিস।

আরও পড়ুনঃ  জয়পুরহাটে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সমাবেশ

আড়াই আনী ছোট বাড়ী : এ বাড়ীর সর্বশেষ জমিদার ছিলেন সতীন্দ্র কুমার চৌধুরী। তিনি ছিলেন পোষ্য পুত্র। তিনি ভোজন বিলাসী ছিলেন। লোকজনদের খাওয়ানো ছিল তার শখ। ভরা পেটে যত গোল্লা খাবে তত টাকা পাবে … এরুপ বাজী ধরে তিনি লোক খাওয়াতেন। এদের বাগান বাড়ীটি বর্তমানে বাগান বাড়ী নামেই পরিচিত। বর্তমানে এখানে বেশ কিছু ভূমিহীন লোক বসবাস করছেন ।

দেড় আনী বাড়ী : শৈলেন্দ্র কুমার চৌধুরী, বি.এ ছিলেন এ বাড়ির সর্বশেষ জমিদার । তিনি ১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত শেরপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন সামন্তবাদী নেতা। পরে কলকাতা গিয়েও কংগ্রেসের নেতৃত্ব দেন। এ বাড়ির সন্তানরা ছিলেন সংগীত প্রিয়। কৃষ্ণ কুমারী চৌধুরী ছিলেন বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রখ্যাত এস্রাজ বাদক। এ বাড়িটি এখন কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের  হোস্টেলের দক্ষিনে জীবন চক্রবর্তী বাড়ী হিসেবে পরিচিত।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন