শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বালুর বাঁধে পুকুর চুরি

রাউতারা রিং বাঁধ

রাউতারা রিং বাঁধ

স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি

কৃষকদের ধান রক্ষার জন্য প্রায় ৩৪ বছর ধরে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ড্রেজারের মাধ্যমে নদী থেকে তোলা বালু দিয়ে তৈরি করা হয় অস্থায়ী রাউতারা রিং বাঁধ। তিন জেলার হাজার হাজার হেক্টর জমির ধান রক্ষায় প্রতি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড এ বাঁধে কোটি কোটি ব্যয় করে থাকে। সেই সাথে চলে পুকুর চুরি। অথচ একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করলে প্রতি বছর সরকারের এতো পরিমাণ টাকা জলে যেত না।

নির্মিত এ রিং বাঁধে বরাবরই রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। বাঁধে যে পরিমান মাটি ও বালি ফালানোর কথা তা বাঁধে ফালানো হয় না কোনো বছরই। প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকায় বাঁধ নির্মাণে চলে নানা অনিয়ম দুর্নীতি। বাঁধ নির্মাণের নামে বছরের পর বছর ধরে চলছে সরকারি টাকার হরিলুট। এটা যেন অনেকের বাৎসরিক আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেন দেখার কেউ নেই।

জানা যায়, পোতাজিয়া ইউনিয়নের রাউতারা সøুইস গেটের পশ্চিম পাশে ১ হাজার ২৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এ বাঁধ নির্মাণে চলতি বছর ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। স্থানীয় কৃষকদের ধান রক্ষার নামে বালু দিয়ে অস্থায়ী এ বাঁধ নির্মাণ ও ভাঙার কাজ চলছে বছরের পর বছর। যদিও প্রতি বছরই বাঁধটি নির্মাণের এক থেকে দেড় মাসের মাথায় মাছ আহরণ ও নৌকা চালানোর সুবিধার জন্য অদৃশ্য শক্তির ইশারায় কেটে দেয় স্থানীয় মৎস্য শিকারি ও নৌযান শ্রমিকরা। এভাবে বছরের পর বছর ধরে বাঁধটি ভাঙা ও গড়ার কাজ চলছে।

আরও পড়ুনঃ  চীনা কর্মী আটকে পড়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে শঙ্কা

জানা যায়, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নাটোর তথা চলনবিলের হাজার হাজার হেক্টর কৃষি জমির ধান রক্ষার্থে একটি বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। যা ১৯৮০ সালে শেষ হয়। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বাঁধটি ১৯৮৮ সালে দেশব্যাপি ইতিহাসের ভয়াবহতম বন্যায় বাঘাবাড়ি-নিমাইচড়া অংশের রাউতারা সøুইস গেটের পশ্চিম পাশে ভেঙে যায়। সেই থেকে প্রতি বছর এ অঞ্চলের কৃষি জমির ধান রক্ষায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে এ স্থানে বালি দিয়ে রিং বাঁধ তৈরি করে। বাঁধটির নির্মাণ কাজ মার্চ মাসে শুরু হয় এবং বাঁধের স্থায়ীত্ব ২৮ জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। নির্মাণ শেষে বাঁধের এ অংশ ভেঙে না গেলেও প্রতি বছর জুন মাস শেষে মাছ আহরণ ও নৌকা চালানোর সুবিধার জন্য কেটেদেন মৎস্য শিকারি ও নৌযান শ্রমিকরা। এতে চোখের সামনে সরকারের কোটি টাকা জলে ভেসে যায়।

আর স্থানীয়রা বাঁধের পাইলিংয়ের বাঁশ, খুঁটি ও বালুর বস্তা লুট করে বিক্রি করে। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসন কঠোর নজরদারি করলে বাঁধটি সহজেই রক্ষা করা যায়।

এলাকাবাসী ও স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও পাবনাসহ চলনবিল এলাকার প্রায় ৬২ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়। অনেক সময় নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই বাঁধের কিছু অংশে ভাঙণের সৃষ্টি হয়। এতে আমাদের উৎপাদিত ধান অনেক সময় পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ধান কেটে ঘরে তোলা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। অনেক সময় ধান কাটা সম্ভব হয় না। প্রতি বছরই আমরা এ বাঁধ নিয়ে শঙ্কিত থাকি। এলাকাবাসী সেখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ও দুর্নীতি বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

আরও পড়ুনঃ  লোকসানের মুখে মাগুরার লিচু চাষিরা

এ বিষয়ে পোতাজিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর জাহান বাচ্চু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি এখানে একটি স্থায়ী বাঁধসহ এখানে একটা পাম্প হাউজ নির্মাণের আশুদৃষ্টি কামনা করেন।

সিরাজগঞ্জ জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী ইমতিয়াজ আহম্মেদের কাছে বালু দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাটি পাওয়া না যাওয়ার কারণে ড্রেজারকৃত বালু দিয়েই কাজ করা হয়। তিনি আরও জানান, স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য আমাদের উদ্ধতন কর্তৃপক্ষ এলাকাটি পরিদর্শন করে গেছে। এটা নিয়ে বৃহত্তর পরিকল্পনা করা হচ্ছে এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রায় ৬০০ কোটি টাকার প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।

অথচ একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হলে শাহজাদপুরসহ চলনবিলের এক ফসলি জমিতে ১২ মাসই বহুমাত্রিক ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এতে কৃষিনির্ভর এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হবে। যা জাতীয় অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী ও মজবুত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।

আনন্দবাজার/শহক

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন