শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিঘায় ফলন ৩০ মণ

বিঘায় ফলন ৩০ মণ
  • ধানের নতুন জাত

নীলফামারীর ডিমলায় সরকারি প্রনোদনার ব্রি-ধানের নতুন তিন জাতে ব্যাপক সাফল্য মিলেছে। দীর্ঘকাল ধরে এ উপজেলার বোরো উৎপাদনের সিংহভাগই আসছে ব্রি ধান ২৮ এবং ব্রি ধান ২৯ থেকে। দুই যুগের বেশি পুরনো এসব জাতগুলোর উৎপাদনক্ষমতা দিন দিন কমেই চলেছে। অন্যদিকে বাড়ছে নতুন নতুন রোগ-বালাইয়ের প্রকোপও। ফলে পুরনো এসব জাতের বিকল্প হিসেবে নতুন নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষের চেষ্টা চলছে প্রতিনিয়ত। এরমধ্যে এ বছর  সবচেয়ে আশা জাগানো নতুন জাত হিসেবে উঠে এসেছে ব্রি- ৭৪ জাতের ধান। ঝড়বৃষ্টিতে ব্রি ধান ২৮ হেলে পড়লেও নতুন ব্রি ধান ৭৪ হেলে পড়ে না। বিঘা(৩০শতক)প্রতি ফলন ২৫ মন।আগের জাতগুলো থেকে অনেক বেশি রোগ প্রতিরোধী।

এছাড়াও ব্রি ধান ৮৯ ও ব্রি ধান ৯২জাতগুলোর তুলনায় পরীক্ষামূলক প্রদর্শনীতে দারুণ ফলন দিয়েছে এবারের বোরো মৌসুমে। জানা গেছে, সদ্য সমাপ্ত বোরো মৌসুমে উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ ফলন দিয়েছে ব্রি ৯২। চাষিরা বিঘাপ্রতি ৩০ মণ ফলন পেয়েছেন উচ্চফলনশীল এ জাতটি থেকে। যেখানে প্রতি হেক্টরে আগের জনপ্রিয় জাত ব্রি ২৮ উৎপাদন হতো ৬ টন, সেখানে একই জমিতে ব্রি ৯২ চাষ করে ধানের ফলন পাওয়া গেছে সাড়ে ৭ টন পর্যন্ত।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বোরো মৌসুমে এ উপজেলায় ১১হাজার ১৮৫ হেক্টর জমিতে বোর ধানের চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে প্রনোদনার বীজে ব্রী-৭৪ জাত ৪৭৫ হেক্টর, ব্রী-৮৯ ও ৯২ জাতের ১৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  করোনা থেকে ২০২১ সালের আগে মুক্তি মিলবে না

উপজেলা কৃষি অফিসার সেকেন্দার আলী জানান, ব্রি ৯২ সহ কাছাকাছি কয়েকটি জাত সম্প্রসারণে বিনামূল্যে কৃষকদের মাঝে সরকারি বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে । কারণ আগের জাতগুলোর উৎপাদন কমে গেছে। রোগ-বালাই বেশি হচ্ছে।

তিনি বলেন, কয়েকটি নতুন জাতের প্রদর্শনী শেষ হয়েছে এ বছর। নতুন জাতগুলো ফলন বেশি বলে বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়ক।সে কারণেই ধানের এই নতুন জাতটিকে দ্রুত কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে কীভাবে দ্রুত এসব জাত কৃষকের মধ্যে পৌঁছানো এবং জনপ্রিয় করে তোলা যায়। বিআইডিসি নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থায় এসব বীজ উৎপাদন করবে, সেটাও কৃষকদের মধ্যে স্বল্পমূল্যে পৌঁছাবে।

এদিকে, ফলন বেশি হওয়াতে কৃষকরাও নতুন নতুন জাতের ধান চাষে ব্যাপক আগ্রহ দেখাচ্ছেন। জমদ্দির চৌপথি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম এ বছর প্রথম দুই বিঘা জমিতে ব্রি ৭৪ও ৯২ জাতের ধান চাষ করেছিলেন।

তিনি বলেন, এবার নতুন জাত চাষ করে বিঘাপ্রতি ৩০ মণ করে ফলন পেয়েছি। এর আগে ব্রি ২৮ আবাদ করে ১৬ থেকে ১৮ মণ ধান পেতাম। তাই প্রতিবারই বোরোধান আবাদ করে খরচ উঠিয়ে লাভ করা নিয়ে হতাশায় থাকতে হয়েছে। কিন্তু এবার নতুন ধানের ফলন খুব ভালো। বাজারের যে দর যাচ্ছে বিঘাপ্রতি কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা বাড়তি দাম পাওয়া যাবে।

ব্রি ৭৪, ৮৯ ও ৯২ জাত চাষ করেছেন এমন আরও কয়েকজন কৃষক জানিয়েছেন, এ ধানে সেচ ও পরিচর্যা কম লেগেছে। পাশাপাশি অন্য ধানের চেয়ে ফলন পেতে সময়ও লাগে কম। ব্রি ২৯ জাতের ধানের তুলনায় ১০ থেকে ১৪ দিন আগেই এ ধান পেকেছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন