রবিবার, ২২শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনবল সংকটে রেল

জনবল সংকটে রেল

জয়পুরহাট জেলার তিলকপুর রেল স্টেশন। সারাদিনে কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেন যায় চলাচল করে ওই লাইন দিয়ে। তবে দাঁড়ায় না। দিনে দুটি লোকাল ট্রেন দাঁড়ায়। তাও দুই নম্বর লাইন (সরাসরি) দিয়ে। স্টেশনে দাঁড়ানোর এক নম্বর লাইনটি বন্ধ। স্টেশনের কোনো কার্যক্রম নেই। অবকাঠামো সব কিছুই আছে। টিকিট রুম, স্টোর রুম আছে। কিন্তু সব বন্ধ। দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ দরজায় তালা ঝুলছে। অনেক তালায় জংও ধরেছে। খসে পড়ছে দালানের দরজা-জানালার কাঠ।

এক সময় যাত্রীদের পদচারনায় মুখোর থাকলেও এখন স্টেশনটিতে বসে নেশার আড্ডা বসে। স্থায়ীভাবে বসেছে অনেক দোকান। স্টেশন যেন বাজারে পরিণত হয়েছে। পাঁচ বছরের অধিক সময় ধরে এ স্টেশনটিতে কোনো জনবল নেই। জনবল সংকটের কারণে পশ্চিমাঞ্চল রেলের ৭০টি স্টেশন বন্ধ আছে। পাকশি রেল বিভাগে ৪৮টি এবং লালমনিরহাট বিভাগে ২২টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। দিনে দিনে এ সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। দীর্ঘদিন স্টেশনগুলো বন্ধ থাকায় রেলওয়ে একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে চুরি হয়ে যাচ্ছে বন্ধ থাকা স্টেশনগুলোর অবকাঠামো বিভিন্ন সরঞ্জাম। এতে ক্ষতির মুখে পড়ছে রেল।

রেলওয়ে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমাঞ্চল রেল দুই ভাগে বিভক্ত। একটি পাকশি রেল বিভাগ, অন্যটি লালমনিরহাট রেল বিভাগ। পাকশি রেল বিভাগের অধীনেই পরিবহন বিভাগেই মঞ্জুরি পদ এক হাজার ৩৪৫টি। এরমধ্যে কর্মরত আছে ৮০৭টি পদে। শূন্য আছে ৫৩৮টি। পাকশি বাণিজ্যিক বিভাগে মঞ্জুরিকৃত পদ এক হাজার ১১৮টি। এরমধ্যে কর্মরত পদ ৫০৮টি। শূন্য পদ ৬১০টি। পাকশি রেল বিভাগেই পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগ মিলে ১ হাজার ১৪৮টি পদ শূন্য আছে। লালমনিরহাট রেল বিভাগেরও একই সমস্যা।

আরও পড়ুনঃ  ঈদে যাত্রীসেবায় পিছিয়ে দেশ

এ বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য থাকায় দিনে দিনে সমস্যা বাড়ছে রেলওয়ের। জনবল কমে যাওয়ার কারণে একের পর এক স্টেশন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এসব স্টেশন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে স্থানীয় মানুষরা রেলের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অন্যদিকে, রেলওয়ে তাদের রাজস্ব হারাচ্ছে। শুধু তাই না, অনেক টাকা ব্যায়ে নির্মান করা যে সব স্টেশনগুলো বন্ধ আছে সেগুলোর অবকাঠামো বিভিন্ন সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে যার মতো রেলওয়ের জায়গা দখল করে নেয়ার অভিযোগও পাওয়া যায়। বন্ধ স্টেশনগুলোতে বসেছে দোকান।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, দেশে মোট ৪৬৬টি রেলস্টেশনের মধ্যে জনবলের অভাবে ১৩১টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। যার ফলে লাখ লাখ মানুষ রেলসেবা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। এর ফলে রেলওয়ে যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে তেমনি চুরি হয়ে যাচ্ছে বন্ধ স্টেশনগুলোর দরজা, জানালাসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম। অনেক জায়গায় স্টেশনগুলোর জানালা ও দরজাগুলো ভেঙে গেছে।

বাংলাদেশ পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার জানান, জনবল সংকটের কারণে পশ্চিম রেলের ৭০টি স্টেশন চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও পশ্চিম রেলের জনবল সংকটের কারণে রেলের খরচ ও সময় বাড়ছে।

জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার আরো জানান, জনবল সংকট দূর করার জন্য ইতোমধ্যে নানান পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ২৪৫ জন স্টেশন মাস্টার নেয়ার জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে। প্রক্রিয়া সারতে ৭ থেকে ৮ মাস লাগবে। ৭০টি স্টেশন একবারে চালু করা সম্ভব নয়। জনবলের ঘাটতি কমলে কিছু স্টেশন চালু করা সম্ভব হবে। জনবলের ঘাটতি যতো কমবে ততো বেশি বন্ধ স্টেশনগুলো চালু করা যাবে।

আরও পড়ুনঃ  বস্ত্র আইনের বিধিমালায় ভিন্নমত শিল্প মালিকদের

জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার জানান, স্টেশন বন্ধ থাকায় সমস্যা কিছুটা বেড়েছে। এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনের দৈর্ঘ্য বেড়ে গেছে। সে কারণে একটি ট্রেন অন্য ট্রেনকে ক্রস করতে সময় লাগে বেশি। এতে সময়ের অপচয় হয়।

আনন্দবাজার/শহক

সংবাদটি শেয়ার করুন