শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাগরে হুমকিতে জলজ-স্তন্যপায়ী প্রাণি

সাগরে হুমকিতে জলজ-স্তন্যপায়ী প্রাণি

চলতি বছর মোট ১০টি মৃত ডলফিন ও ১১টি কচ্ছপ কুয়াকাটার সৈকতে ভেসে আসে। এর মধ্যে দু’টি জীবিত কচ্ছপ উদ্ধার করে সমুদ্রে অবমুক্ত করা হয়েছে। কোনটার শরীরের আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। আবার কোনটার উপরিভাগের চামড়া উঠে গেছে। আবার কোনটা অর্ধগলিত। মৃত ডলফিন ও কচ্ছপগুলো যাতে গন্ধ না ছড়ায় সে জন্য মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে

কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সামুদ্রিক সম্পদ জলজ ও স্তন্যপায়ী প্রাণি এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। একের পর এক মারা যাচ্ছে জলজ স্তন্যপায়ী প্রাণি ডলফিন, শুশুক আর কচ্ছপ। গতকাল রবিবার সকালে জালে পেচানো অবস্থায় একটি জীবিত ডলফিন তীরে আসলেও পরে এটি মারা যায়। চলতি বছর এটি নিয়ে মোট ১০টি মৃত ডলফিন ও ১১ টি কচ্ছপ কুয়াকাটার সৈকতে ভেসে আসে। এর মধ্যে দু’টি জীবিত কচ্ছপ উদ্ধার করে সমুদ্রে অবমুক্ত করা হয়েছে। কোনটার শরীরের আঘাতে চিহ্ন রয়েছে। কোনটার উপরিভাগের চামড়া উঠে গেছে। আবার কোনটা অর্ধগলিত। মৃত ডলফিন ও কচ্ছপগুলো যাতে গন্ধ না ছড়ায় সে জন্য মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। এর আগে একাধিক মৃত প্রাণির শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলেও মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশকর্মীদের ধারণা, আবাসস্থলের চরম বিপত্তির কারণ, জেলেদের জালে আটকে পড়ে, ট্রলিং ফিসিং এর কারণে কিংবা জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে এসব বিরল প্রজাতির সামুদ্রিক সম্পদ মারা যেতে পারে।

ইউএসএইডি-এর অর্থায়নে পরিচালিত আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশ, ইকোফিশ-২ তথ্যমতে চলতি বছর এ পর্যন্ত কুয়াকাটা সৈকতে ১০টি মৃত ডলফিন ভেসে এসেছে। এর মধ্যে জানুয়ারি মাসে ১টি, ফেব্রুয়ারিতে ১টি, মার্চে ২টি, এপ্রিলে ২ টি ও চলতি মাসে ৪টি মৃত ডলফিন কুয়াকাটার সৈকতে ভেসে আসে। গত বছর সর্বমোট ১৮টি মৃত ডলফিন সৈকতে ভেসে এসেছে। এছাড়া চলতি বছর কুয়াকাটা সৈকতে ১১টি কচ্ছপ কুয়াকাটার সৈকতে ভেসে আসে। এপ্রিলে ৪টি মৃত ও একটি জীবিত, মার্চ মাসে ৪টি। সর্বশেষে মে মাসে দু’টি সামুদ্রিক কচ্ছপ ভেসে আসে। এর মধ্যে একটি মৃত, অপরটি জীবিত। মৃত কচ্ছপগুলোকে উদ্ধার করে মাটি চাপা দেয়া হয়েছে। আর জীবিত কচ্ছপ দু’টিকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে সমুদ্রে অবমুক্ত করা হয়েছে। এসব সামুদ্রিক প্রাণি একের পর এক মৃত অবস্থায় ভেসে আসার খবরে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদ ও সামুদ্রিক প্রাণি বিশেষজ্ঞরা।

আরও পড়ুনঃ  ভোলার দক্ষিণ আইচায় পুলিশের সাথে বন্ধুত্ব করে মাদক বিক্রি

একটি সূত্র জানায়, বঙ্গোপসাগরে জেলেদের ব্যবহার করা অবৈধ ট্রলিং জালে (ধ্বংসাত্মক বেহুন্দি জাল প্রকৃতির) সামুদ্রিক কচ্ছপ, ডলফিনসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণি আটকা পড়ে মারা যাচ্ছে। এ ছাড়া কচ্ছপ যখন ডিম পাড়ার জন্য বালিয়ারিতে চলে আসে, সে সময় হয়তো সমুদ্রে মাছ ধরারত জেলেদের জালে আটকা পড়ে, আবার ট্রলারের পাখায় কাটা পড়ে মারা যেতে পারে।

ব্লু-গার্ড সদস্য পান্না মিয়া বলেন, গত শনিবার সকাল আটটার দিকে পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটার গঙ্গামতি সৈকতের সানরাইজ পয়েন্টে জালে পেঁচানো অবস্থায় জীবিত সমুদ্রিক কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়েছে। এটির ওজন প্রায় ৪০ কেজি। সাগরে ভাটার টানে এটি বালুচরে আটকে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ জালে পেঁচানো থাকায় কচ্ছপটির পেটের নিচের অংশ, পাখা ও পায়ে কিছুটা ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া দু’দিন আগে ১৯ মে সকালে রাবনাবাদ চ্যানেলে আরো একটি ৩৫ কেজি ওজনের একটি মৃত কাচ্ছপ ভেসে আসে। এটিকে উদ্ধার করে মাটি চাপা দেয়া বলে তিনি জানিয়েছেন। কুয়াকাটা ডলফিন রক্ষা কমিটি টিম লিডার রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন, দিন দিন সামুদ্রিক বন্ধু প্রাণি ডলফিনের মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। এতে সামুদ্রিক পরিবেশের চরম ক্ষতি হচ্ছে। তবে ডলফিনের মৃত্যুর সঠিক কারন খুঁজে বের করে জীববৈচিত্র্য রক্ষা জরুরি হয়ে পড়েছে।

ইউ এস এইডি এর অর্থায়নে পরিচালিত আান্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ড ফিশ, ইকোফিশ-২ প্রকল্পের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, কুয়াকাটা সৈকতে একের পর এক মৃত ডলফিন, কচ্ছপ ভেসে আসছে তা নয়। এর আগের বছরগুলোতেও মৃত ডলফিন সৈকতে ভেসে আসছিল। এ নিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত বলে আসছি, এসব সামুদ্রিক প্রাণি কেন মারা যাচ্ছে, তার সঠিক কারণ খুঁজে বের করতে উদ্যোগ নেয়া দরকার বলে তিনি জানিয়েছেন।

আরও পড়ুনঃ  তাজমহল রক্ষায় আদালতের নতুন নির্দেশনা

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক সাজেদুল হক বলেন, ডলফিন ও কচ্ছপকে সমুদ্রের অলংকার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও সামুদ্রিক দূষণ (প্লাস্টিক ও অব্যবহৃত পরিত্যাক্ত জাল), সামুদ্রিক পরিবেশে পানির লবনাক্ততা, জৈব ও ভৌত গুনাগুনের পরিবর্তন এবং আবাসস্থলের চরম বিপত্তির কারনে ডলফিন ও কচ্ছপ মারা যাতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তবে ডলফিন ও কচ্ছপ মরে উপকূলে ভেসে আসার বিষয় নিয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগ গবেষণা শুরু করেছে।

পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বন বিভাগ থেকেও ডলফিন, কচ্ছপসহ সামুদ্রিক প্রাণি রক্ষায় একটি গবেষণা প্রকল্প তৈরির কাজ চলছে। তাছাড়া আমরাও জেলেসহ মৎস্য সম্পদের সঙ্গে জড়িত লোকদের সচেতনতায় কাজ করছেন বলে তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন