শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যমুনার ভাঙনে কাঁদছে মানুষ

যমুনার ভাঙনে কাঁদছে মানুষ
  • একরাতে অর্ধশত ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন 

আমরা খুউব কষ্ট কইর‌্যা সংসার চালাই। স্বপ্নেও ভাবি নাই যমুনা এতদূর আইস্যা আমাগোর এ বাড়িতে হানা দিবো। আমাগোরে ঘরের কানিতে যমুনা এ্যাহন আইস্যা খারাইচে, একটু কয়ে দেন না আমাগো বাড়ির সামনে কয়েটা বস্তা ফাল্যাইয়া দিতে

শ্রমিকের কাম কইরা খাই। রাইতদিন খাইটা প্রতিবন্ধী পোলাটারে নিয়্যা আমাগোরে সংসার চলতো। আমরা খুউব কষ্ট কইর‌্যা সংসার চালাই। স্বপ্নেও ভাবি নাই যমুনা এতদূর আইস্যা আমাগোর এ বাড়িতে হানা দিবো। আমাগোরে ঘরের কানিতে যমুনা এ্যাহন আইস্যা খারাইচে, একটু কয়ে দেন না আমাগো বাড়ির সামনে কয়েটা বস্তা ফাল্যাইয়া দিতে। সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরের কৈজুরী ইউনিয়নের হাটপাচিল গ্রামের চেন বানু(৫৫) বুকভরা হতাশা আর ছলছল চোখে এভাবেই দৈনিক আনন্দবাজার ” প্রতিবেদককের কাছে আকুতি জানাচ্ছিলেন। তবে এ প্রতিবেদকের কাছে তার প্রশ্নের কোন উত্তর ছিল না।

ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মানুষগুলো কান্নাজড়িত কণ্ঠে এ প্রতিবেদককে বলে, আমরা আবারও নিঃস্ব অইয়্যা গেল্যাম। যমুনা আমাগোরে পরিবারসহ পথে বসাইয়্যা দিলো। এদের মধ্যে কারও ছিল পাকা, কারও অর্ধপাকা। নিয়তি এদের পিছু ছাড়েনি। আবারও যমুনার হানা। যমুনার তীব্র ভাঙনে কয়েকদিনের ব্যবধানে আশ্রয়হীন হয়ে পড়লো অর্ধশত পরিবার।

বন্যার পানি বাড়তে থাকায় ও উজানের ঢলে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে যমুনা নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। গত কয়েক দিনে মুহূর্তের মধ্যে উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের আরকান্দি, ঘাটাবাড়ি, জালালপুর ও পাকুরতলা অপরদিকে কৈজুরী ইউনিয়নে হাটপাচিল ও মোনাকষা গ্রামে অন্তত অর্ধশত বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

আরও পড়ুনঃ  ১১দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতি

এসব বাড়ি ঘরের অধিকাংশ আসবাবপত্র ও গবাদি পশুসহ প্রয়োজনীয় মালামাল নদী গর্ভে চলে গেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের লোকজন সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। বর্তমানের তারা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষজন তাদের জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

ভুক্তভোগী সুফিয়া বেগম, সুরা খাতুন, বাবু বেপরী, আলহাজ আলী বলেন, গতবৃহস্পতিবার রাতে ঝড়-বৃষ্টির সময় নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ শুরু হয়। মুহূর্তে যমুনা পাড়ের বসতবাড়ি রাতের অন্ধকারে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। হঠাৎ ভাঙনে বাড়ির জিনিসপত্র অনেকেই রক্ষা করতে পারেননি। সবকিছু চোখের সামনে নদীতে তলিয়ে গেছে। রাত থেকে আমরা খোলা আকাশের নিচে বাস করছি।

জালালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ এবং কৈজুরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোয়াজ্জেম হোসেন(খোকন) জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দ্রুত সাহায্য চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এখনো কোনো সাহায্য হাতে আসেনি। পাওয়া মাত্র বিতরণ করা হবে বলে জানান। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজের ধীরগতিকেই ভাঙনের জন্য দায়ি করেছেন এবং অতিদ্রুত নৌকা দিয়ে ডাম্পিং করে বস্তা ফালানোর অনুরোধ করেন তারা। অপরদিকে দ্বায়িত্বে থাকা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের উপসহকারী প্রকৌশলী মহসিন আলম জানান, নৌকা দিয়ে ডাম্পিং করার কোনো বাজেট নেই তারপরও আমরা ভাঙন রোধে আজ থেকে ডাম্পিং করা শুরু করবো।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ মো. শামসুজ্জোহা বলেন, ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নিতে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। সরকারের ত্রাণ তহবিল থেকে সাহায্যের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং পরে তাদের নিরাপদ স্থানে পুনর্বাসন ব্যবস্থা করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন