শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্বপ্ন ভাসছে বানের জলে

স্বপ্ন ভাসছে বানের জলে
  • সিলেটে বন্যায় মৎস্য খামারে ব্যাপক ক্ষতি

সিলেট জেলায় পুরো ১০ দিন দাপট দেখিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। গত শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করেছে পানি। সিলেট থেকে ধীরে ধীরে বন্যা বিদায় নিলেও অনেককেই ‘উপহার’ দিয়ে যাচ্ছে কান্না। এভাবেই সিলেট জেলার ১৫ হাজারের অধিক মৎস্য খামারির স্বপ্ন ভেসে গেছে বানের জলে।

ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সিলেটে গত ১১ মে থেকে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় জেলার ১১টি উপজেলায় মোট ১৮ হাজার ৭৪৯টি পুকুর, দিঘী, হ্যাচারি ও মাছের খামার তলিয়ে গেছে। এতে ২ কোটি ১৩ লাখ মাছের পোনা এবং ২ হাজার ৩০৫ টন মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ফলে মাছ চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও হয়েছে অবকাঠামোগত ক্ষতি।

সিলেট জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেট জেলার ১৫ হাজার ১৬৩ জন খামার মালিকের ২১ লক্ষ ১৭৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় সিলেটের জকিগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, বিশ্বনাথ, জৈন্তাপুর ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় মৎস্য খামারিদের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। জকিগঞ্জে ৬ হাজার ৩৫০টি মাছের খামার তলিয়ে ৬২২ কোটি টাকা, গোয়াইনঘাটে ২ হাজার ৫৯২টি খামার তলিয়ে ১৪০ কোটি টাকা, কানাইঘাটে ২ হাজার ৩৫০টি খামার তলিয়ে ৬৪ কোটি টাকা, বিশ্বনাথে ২ হাজার ১৫০টি খামার তলিয়ে ১৫৫ কোটি টাকা, জৈন্তাপুরে ২ হাজার ১০০টি খামার তলিয়ে ৬৭৪ কোটি টাকা ও বিয়ানীবাজারে ১ হাজার ৪০২টি খামার তলিয়ে ২১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  পাঁচ দিনেও সন্ধান মেলেনি নিখোঁজ শিশুর

এ ছাড়াও সিলেট সদর উপজেলায় ৫৩৫টি মাছের খামার, গোলাপগঞ্জে ৮৪৫টি, বালাগঞ্জে ৭০টি, কোম্পানীগঞ্জে ১৪৫টি ও দক্ষিণ সুরমায় ২১০টি খামার তলিয়ে গেছে।

জানা গেছে, অনেক খামারি লোন বা ঋণ নিয়ে মৎস্য চাষ শুরু করেছিলেন। তাদের এখন মাথায় হাত। তাদের চোখের জল আর বানের জল মিলেমিশে একাকার।

বিশ^নাথ উজেলার দশঘর এলাকার মাছ চাষি শামসুল ইসলাম বলেন, পুকুরে মাছ চাষের জন্য ৩ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলা। বন্যার শুরুতে পুকুরের চারদিকে ঘের দিয়ে মাছ বাঁচানোর চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। বন্যার তোড়ে সব মাছ ভেসে গেছে। এখ আমি সেই টাকা পরিশোধ করবো কী করে! দুশ্চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না।

সিলেট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুল কালাম আজাদ দৈনিক আনন্দবাজারকে জানিয়েছেন, জেলায় মাছ চাষের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।

উল্লেখ্য, গত ১০ মে থেকে সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। সেই সঙ্গে উজান থেকে একের পর এক নামতে শুরু করে পাহাড়ি ঢল। ফলে ১১ মে থেকেই সিলেটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে থাকে। আর গত ১৩ মে থেকে সিলেট নগরের নিম্ন ও সুরমা তীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হতে থাকে। ফলে ২০০৪ সালের মতো ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয় সিলেটে। বর্তমানে পানি অর্ধেক কমে গেলেও নানা ভোগান্তিতে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর মানুষ। বিদ্যুৎ ও গ্যাসহীনতা, খাবার পানির সংকটের পাশাপাশি জলমগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ। পানি কমে যাওয়া এলাকাগুলোতে ছড়াচ্ছে উৎকট দুর্গন্ধ।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন