শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গ্যাস্ট্রিকের ওষুধই বাড়ায় আলসার

গ্যাস্ট্রিকের ওষুধই বাড়ায় আলসার
  • যত্রতত্র ওষুধের ব্যবহার কমাতে নীতিমালা দাবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রোটন-পাম্প ইনহিবিটর (পিপিআই) বা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ মাত্রাতিরিক্ত সেবনের ফলে ৪৫ শতাংশ গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়। এতে যে মাইক্রো নিউক্রিয়েন্টগুলো লস হচ্ছে তাতে দেহের ফ্রাকচার হয়। ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, বিটামিন -১২, আয়রন এই পিপিআই ব্যবহারের ফলে ডিফিসিয়েন্ট হচ্ছে। তাই বলে এসব রোগের ভয়ে হঠাৎ করে পিপিআই বন্ধ করা যাবে না। পিপিআই ক্রমে দুই সপ্তাহ, এক সপ্তাহ করে কমিয়ে দিতে হবে। দিনে একটি, দুদিন পরে আরেকটি করে ওষুধ দেয়া যেতে পারে। আমরা যদি নিয়ম মেনে চলাফেরা করি তাতেও এসিডিটি হবে না। এসিডিটি না হলে ওষুধ সেবন করা লাগবে না। একটি রোগের জন্য ওষুধ খেলে আরেকটি রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ৮টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ব্লকের মিলনায়তনে ‘Overuse of PPI: A review of emerging concern’ শীর্ষক সেন্ট্রাল সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। Proton-pump inhibitor হচ্ছে এমন ধরনের ওষুধ যার প্রধান কাজ হলো পাকস্থলীর প্যারাইটাল কোষ থেকে এসিড নিঃসরণ কমানো।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজীবুল আলম বলেন, গ্যাস্ট্রিকের ওষুদের বড় অংশ বিক্রি হচ্ছে ব্যবস্থাপনাপত্র ছাড়া। রোগীর একটু পাতলা পায়খানা, মাথাব্যথা, পিঠে ব্যথাসহ নানা জটিলতা দেখা দিলে ফার্মেসি দোকানীরা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিচ্ছেন। এই ক্ষেত্রেই একটু পানি পান করালে বা হালকা কিছু ওষুধ ব্যবহার করলে এই সমস্যা সমাধান করা যেত। দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবস্থাপনাপত্র ও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের কারণে শরীরে নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ সেবনের কারণে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার, স্মৃতিভ্রম মতো ঘটনা ঘটতে পারে। এমনকি ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম কমে আসতে পারে।

আরও পড়ুনঃ  প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আম্পানের পরবর্তী পুনর্বাসন কাজ শুরু হয়েছে

ডা. রাজীবুল আলম বলেন, রোগীর প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই এ ধরনের ওষুধ ব্যবস্থাপনা লিখতে হবে, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় অতিমাত্রায় এর ব্যবহার কমিয়ে আনতে হবে। যত্রতত্র এবং অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ ব্যবহার কমাতে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াা গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি বন্ধ করতে হবে।

এ বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, ইউএস ও ইউকে যখন ইচ্ছা তখন ওষুধ বিক্রি এবং কিনা সম্ভব নয়। বছরে তিনবার গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ কিনতে পারবেন। আপনি কিনতে পারবেন না। কারণে ওখানে সবকিছু রেকর্ড থাকে আর এর বিল পে করে কোন বেসরকারি বীমা প্রতিষ্ঠান। যদি আমাদের দেশে স্বাস্থ্যবীমা থাকতো তাহলে ওষুধ বিক্রি ও কেনা এবং তদারকি করা সম্ভব হতো। এতে এই অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বিক্রি ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গ্যাস্ট্রোএন্টারলোজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. রাজিবুল আলম, ফার্মাকোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. শরবিন্দু কান্তি সিনহা। নিউরোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সবুজের সঞ্চালনায় প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. এ কে এম মোশাররাফ হোসেন, উপ উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন