শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঝড়-বৃষ্টিতেই কাটাই-মাড়াই

ঝড়-বৃষ্টিতেই কাটাই-মাড়াই
  • ভিজা ধান নিয়ে বিপাকে চাষিরা

মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ঝড় তুফানের দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়ে ধান কাটা ও মাড়াই কাজে ব্যস্ততা বেড়েছে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার গভীর রাতের কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে উপজেলার কোলাপাড়া ও শ্যামসিদ্ধি এলাকায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি বসতঘর ধসে পড়ে। এতে নারীসহ আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৫ জন। এছাড়াও বিভিন্ন চকে অসংখ্য জমিতে ধানের ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। অতিরিক্ত শ্রমিক মজুরি দিয়ে কৃষক ডুবে যাওয়া জমির ধান কাটার পাশাপাশি দ্রুত ধান মাড়াই প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন। এ কাজে আধুনিক ধান মাড়াই কলের কদর বেড়েছে। ঝড় বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ভিজা ধান মাড়াই করে শুকানোর পরে দ্রুত সংরক্ষণ করাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন জমিতে চলছে ধান কাটা। বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট কিংবা মাঠে মাড়াই কলে এসব কাটা ধান মাড়াই করা হচ্ছে। উপজেলাব্যাপি কৃষকের ফসল ঘরে তুলতে বিশাল এ কৃষি কর্মযজ্ঞে নিয়োজিত হাজার হাজার কৃষাণ-কৃষাণি মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এরই মধ্যে গত দুইরাতে কালবৈশাখী ঝড়ে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ঝড়-তুফান, রোদবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপদাহ উপক্ষে করে ধান নিয়ে বিভিন্ন কাজকর্মের মধ্যে দিয়ে উৎপাদিত ধান সংরক্ষণের চেষ্টা করছেন।

আড়িয়াল বিল এলাকার বাড়ৈখালীর আনোয়ার হোসেন, লস্করপুরের দ্বীন ইসলাম, এ বিলের ধান কাটা প্রায় শেষের দিকে। বেশিরভাগ কৃষক তাদের ধান সংরক্ষণ করছেন। কুকুটিয়ার শহিদুল ইসলাম, গাদিঘাটের আবুল বেপারী জানান, ডুবে যাওয়া ধানকাটার পরে দ্রুত মাড়াই করাটাও চ্যালেঞ্জ। তা না হলে ধান নষ্ট হয়ে যাবে। এ মুহুর্তে ধান মাড়াই কলের চাহিদা বেড়েছে। প্রতিমণ ধান মাড়াই করে দেড় থেকে দুই কেজি পর্যন্ত ধান পাচ্ছি। কেউ কেউ সমপরিমাণ ধানের দামে নগদ অর্থও দিচ্ছেন। দৈনিক একটি মাড়াই যন্ত্রে প্রায় ৩শ’ থেকে ৪শ’ মণ ধান মাড়াই করা সম্ভব হচ্ছে।

আরও পড়ুনঃ  নোবিপ্রবিতে ভাষা পদযাত্রা-২০২০ উদযাপন

স্থানীয় ধান চাষিরা জানায়, চলতি বছর কালবৈশাখী ঝড়, আগাম জোয়ার ও বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন বিলে/চকে ধানি জমিতে পানি উঠে যায়। এর মধ্যে গত দুই রাতে ঝড়ে মানুষের ঘরবাড়ি, গাছপালা ও জমির পাকা ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ডুবে যাওয়া এসব ধান দ্রুত কেটে মাড়াই করতে হবে। তা না হলে ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তারা জানান, ৮০ থেকে ৯০ ভাগ কৃষক মাড়াই কলের ওপর নির্ভশীল। আধুনিক যন্ত্রটির ব্যবহারে ভালভাবে ধান মাড়াই করে সময় ও শক্তি উভয় বাঁচে।

জানা যায়, উপজেলার প্রায় সব ফসলি জমি পানিতে ডুবে গেছে। ৩ বেলা খাবার দিয়ে ১২শ’ থেকে ১৩শ’ টাকা রোজে একজন শ্রমিকের মূল্য দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে। সব খরচ শেষে ধানে কাঙ্খিত লাভ হচ্ছে না। কৃষকের প্রতিমণ মাড়াই করা ভিজা ধান কেনাবেঁচা হচ্ছে ৮শ’ টাকা দরে। কৃষিতে অনেকাংশে আধুনিক প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। কৃষি কাজে এসেছে নানাবিধ পরিবর্তন। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগীতায় গত কয়েক বছরে বেশকিছু উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন হারভেস্টার, রিপার মেশিন ও মাড়াই কলসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি প্রদান করতে দেখা গেছে। এতে করে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সামনের দিকে আরো বেশী আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির চাহিদা বাড়বে। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আধুনিক যন্ত্রপাতি এ অঞ্চলের কৃষিতে অগ্রনী ভুমিকা রাখতে পাড়ে। এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলা এ বছর বোরো মৌসুমে প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে আড়িয়াল বিলের শ্রীনগর অংশে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। কৃষকের পাকা ধান কাটতে ও মাড়াই কাজে কৃষি প্রণোদনার আওতায় আধুনিক বিভিন্ন যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন