শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অপারেটরে জিম্মি চাষিরা

অপারেটরে জিম্মি চাষিরা
  • বরেন্দ্রে পানি সেচে অনিয়ম

ঠাকুরগাঁওয়ে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় গভীর নলকূপের মাধ্যমে সেচ নেওয়ার জন্য কার্ডের টাকা ছাড়াও ভাড়ার টাকা দিতে হয় কৃষককে। আর এ গভীর নলকূপের ভাড়ার টাকা প্রদান করতে হয় অপারেটর আক্তারুজ্জামান আক্তারুলকে এমন অভিযোগ করেন কৃষকরা।

সদর উপজেলার ভূল্লী বড় বালিয়া ইউনিয়নে অবস্থিত ১০৮ নং গভীর নলকূপের আওতায় থাকা প্রায় ৫০ জন কৃষক সেঁচ নিতে গিয়ে এমন ভোগান্তিতে পড়েছে। তারই প্রতিবাদ জানিয়ে কৃষকেরা অপারেটরের নামে লিখিত অভিযোগ করেন বরেন্দ্র নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে।

অভিযোগ সূত্রে ও সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, বড় বালিয়া ইউনিয়নে ১০৮ নং গভীর নলকূপের দায়িত্বে থাকা অপারেটর আক্তারুজ্জামান বিগত ১০ বছর থেকে ওই এলাকার কৃষকের কাছে ডিপটিউবলের ভাড়া নিয়ে আসছে। প্রতি সেচ মৌসুমে একর প্রতি ২৪শ’ টাকা ভাড়া দিতে হয় কৃষককে। ওই গভীর নলকূপের আওতায় প্রায় ৬০ একর জমি রয়েছে। বোরো বা আমন মৌসুমে কৃষক একর প্রতি ২৪শ’ টাকা দিতে না পারলে তাকে সেচ সুবিধা দেওয়া হয় না। চলতি বছর ওই এলাকার ৫০ জন কৃষক একত্রিত হয়ে এ বিষয়ে বরেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে অভিযোগ করলে অপারেটর গভীর নলকূপে তালা মেরে দেয় এবং কৃষকদের পানি না দেওয়ার হুমকি দেয়।

অভিযোগকারী কৃষক শাহজাহান আলী বলেন, আমরা কার্ডের মাধ্যমে টাকা দিয়ে ডিপটিউবওয়েল থেকে পানি নেই। কার্ডে টাকা দিতে হয় আবার ভাড়াও দিতে হয়। এ ডিপটিউবওয়েল এর মালিক দাবি করে আক্তারুজ্জামান। বিঘা প্রতি ১২০০ টাকা না দিলে জমিতে তিনি সেচ দেবেন না। তিনি তালা মেরে রেখেছেন। সেই জন্য আমরা কৃষকরা সবাই মিলে বরেন্দ্র অফিসে একটি অভিযোগ করি। সেটা করতে গিয়ে আমাকে বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিচ্ছে ঐ অপারেটর। আমরা এটির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।

আরও পড়ুনঃ  ৪৪তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা

প্রায় আড়াই একর জমির মালিক কৃষক বিপ্লব বলেন, দশ বছর ধরে আমরা এ ডিপটিউবওয়েল এর আওতায় সেচ নিয়ে আসছি। চাপে পড়ে আমরা টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। আমরা নিজস্ব কার্ডে টাকা ঢুকানোর পরেও বিঘা প্রতি ১২০০ টাকা করে অপারেটরকে ভাড়া দেই। আসলে তিনি কেন এ টাকা নেন বা নিয়ম আছে কি না সেটা আমরা জানতে চাই।

ভুক্তভোগী আরেক কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, অপারেটরকে টাকা দিলে সে পানি দিবে না হলে পানি নিতে দিবে না। গত ১ মাস যাবৎ আমি পানি নিতে পারি নাই। কেন পানি দিবে না এমনটা জাইতে চাইলে উনি বলেন, এ ডিপটিউবলের মালিক উনি নিজেই। জোর করে পানি নিতে চাইলে মামলা করবে সবার নামে। পানি দিতে না পারায় আমাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এটার আমরা দ্রুত সমাধান চাই।

অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে গভীর নলকূপের অপারেটর আক্তারুজ্জামান বলেন, তারা যে অভিযোগটা করেছে তা মোটেও সত্য না। ডিপটিউবওয়েল করতে গিয়ে বরেন্দ্রকে আমি কয়েক ধাপে টাকা দিয়েছি। সেই টাকা তোলার জন্য এবং আমি আমার খরচের জন্য আংশিক কিছু টাকা নেই কৃষকের কাছে। কৃষকের কাছে বিঘা প্রতি ৮০০ বা ১০০০ টাকা চাই। কোনো ধরনের জোরপূর্বক টাকা নেওয়া হয়না। তারা যা দেয় তা নেওয়া হয়। অনেকজনে আবার টাকা দেয় না।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের ঠাকুরগাঁও রিজিয়নের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, ১০৮ নাম্বার ডিপটিউবওয়েল (গভীর নলকূপ) এর অপারেটরের বিরুদ্ধে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ সাপেক্ষে আমরা একটি কমিটি গঠন করেছি। এরপরেও যদি ঐ অপারেটর অনিয়ম করতে থাকে তাহলে আমরা তাকে বাতিল করব।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন