শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নদী ভরাটে অল্পতেই বন্যা

নদী ভরাটে অল্পতেই বন্যা
  • নাব্য ও অস্তিত্ব সংকটে সুরমা

খনন না করার কারণে পলিমাটিতে ভরাট হয়ে গেছে সুরমা নদী। বর্জ্যের স্তুপ আর পলিথিনে নদীর তলদেশ ভরে গেছে। এতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদীটি

দিনদিন কমছে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর নাব্যতা। জেলার অন্যান্য নদীও দীর্ঘদিন যাবৎ নাব্যতা সংকটে ভুগছে। সুরমা নদীর বিভিন্ন শাখা নদীও খালে পরিণত হয়েছে। যে শাখা নদীগুলোতে একসময় বড় বড় নৌকা আর জাহাজ চলতো সেই নদীগুলো এখন মৃতপ্রায়। শুষ্ক মৌসুমে গরু চরানো যায়। আর বড় বড় খাল বরাট হয়ে হয়েছে ড্রেন। খনন না করার কারণে পলিমাটিতে ভরাট সুরমা নদী। বিভিন্ন জায়গায় দখলেও রয়েছে। অপরিকল্পিত আবর্জনা ফেলায় ভরাট হয়ে যাচ্ছে নদীর বিভিন্ন অংশ। বর্জ্যের স্তুপ আর পলিথিন জমে ভরে গেছে নদীর তলদেশ। এতে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদীটি। জেলা শহরের বিভিন্ন খালও প্রভাবশালীদের দখলে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থাও নাজুক।

সিলেটের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের নদী সুরমা। সিলেটের জকিগঞ্জে ভারত থেকে নেমে আসা বরাক মোহনা থেকে সুরমা নদীর উৎপত্তি। ২৪৯ কিলোমিটার বা ১৫৫ মাইল দৈর্ঘ্যের নদীটি সিলেট নগর হয়ে সুনামগঞ্জ জেলার বাউলাই নদীর মোহনায় মিশেছে। বর্ষায় বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানির দেখা মিললেও শীত মৌসুমে দেখা দেয় নাব্যসংকট। বর্ষায় সামান্য বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলেই বন্যার সৃষ্টি হয়। সুরমার পাড় উপচে নদী তীরবর্তী এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়।  গত কয়েকদিন ধরে ভারতের মেঘালয়ে ভারী বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সুনামগঞ্জ শহরের নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন রাস্তাঘাট ও বাসাবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। জেলার ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুরসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে দোয়ারাবাজার, ছাতক ও তাহিরপুর উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্নআয়ের মানুষ। রোজগার বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে লাখো মানুষ চরম বিপাকে দিন কাটাচ্ছেন। সুনামগঞ্জের ষোলঘরস্থ সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার এখনো ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং গত ২৪ ঘন্টায় আজ শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৭৮মি. মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে জেলার ছাতক উপজেলায় সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর, নবীনগর, ধারারগাও, জেলরোড, উত্তর আরপিননগর, তেঘরিয়া ও বড়পাড়া এলাকার সড়ক ও কিছু ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। গোবিন্দগঞ্জ ছাতক সড়কে পানি ওঠায় ছাতকের সঙ্গে সারাদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকলে ও এখন সড়কে যানবাহন চলাচল করতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুনঃ  ৪৬তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ, পদ সংখ্যা ৩১৪০

পৌর শহরের বাসিন্দা রহমান মিয়া জানান, আগে নদীতে প্রচুর পরিমান পানি হলেও শহরে পানি আসতো না। আগাম বন্যায় ধানও নষ্ট হতো না। এখন সামান্য ঢলেই বন্যার সৃষ্টি হয়। যদি সুরমাসহ অন্যান্য নদী খনন করা হয় তাহলে সুরমা নদীর পানি ধারণ ক্ষমতা আরো বাড়বে। ঢলের পানি নদীতেই থাকবে।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানিয়েছেন গতকয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জ সদর, বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় ৬৭৭ হেক্টর বোরো ধান, ৭৫ হেক্টর বাদাম, আউশ বিজতলা ৭৪ হেক্টর, সবজি ৬০ হেক্টর, আউশ ধান ২০ হেক্টর পানিতে তলিয়ে যায়।

সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য অফিসার সুনীল মন্ডল জানিয়েছেন, টানা কয়েকদিনের  বৃষ্টিপাতের ফলে জেলা সদর, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় প্রায় সাড়ে ৪ শত পুকুর ঢুকে ৩৫ টন মাছ ও ৩০ লাখ পোনা বানের পানিতে ভেসে যায়।  এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় আড়াই কোটি টাকা

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি এবং সুনামগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘরস্থ পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে এবং তাহিরপুরের যাদুকাটাসহ অন্যান্য নদীর পানিও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন জানিয়েছেন ইতিমধ্যে  ছাতক, দোয়ারাবাজার, সদর ও তাহিরপুরে প্রায় ৮ হাজার পরিবার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সরকারের মাধ্যমে প্রশাসন উদ্যোগে ১৪০ মেট্রিন টন জি আর এর চাল, নগদ ১২ লাখ টাকা ও ২ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে। ২৫৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করায় শিক্ষ্কাার্যক্রম বন্ধ রয়েছে এবং ২০টির মতো আশ্রয় কেন্দ্রে  প্রস্তত রাখা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন