শুক্রবার, ২৬শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১১ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মেঘ দেখলেই বিদ্যুৎ উধাও 

মেঘ দেখলেই বিদ্যুৎ উধাও 
  • অপরিকল্পিত সংযোগে গ্রাহকদের ভোগান্তি চরমে

নীলফামারীর ডিমলায় আকাশে মেঘ জমলেই চলে যায় বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ যে কখন যায়, আবার কখন আসে তার জানা নেই কারও। বিদ্যুৎ কখন আসবে সে সংবাদ প্রদান নিয়েও অফিসের কর্তাব্যক্তিদের চলে লুকোচুরি খেলা। অফিস কর্তাদের ফোন করলে কেউ বলেন অপেক্ষা করুন। আবার কেউ বলে ট্রান্সফরমার বিকল। আবার কেউ বলেন সাব-স্টেশনে কাজ চলছে, আবার কেউ বলেন গ্রিড বন্ধ একটু পরেই পাবেন ইত্যাদি।

বেশ কয়েক বছর ধরে উপজেলা সদরসহ, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) আওতাভুক্ত এলাকায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটছে, বর্তমানে যা চরমে পৌঁছেছে। এছাড়া সামান্য ঝড়-বাতাস হলেই বিদ্যুৎ উধাও হয়ে যায়। ঝড়-বাতাস থামলেও ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ আসে না। এতে জনমনে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, এ উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে ৯টিতেই পল্লী বিদ্যুতের আওতাভুক্ত। শুধুমাত্র সদর ইউনিয়নটি পিডিবি বিদ্যুতের আওতায়। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৩ হাজার। এ উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের একটি সাব স্টেশন থাকলেও পিডিবির নেই কেনো সাব স্টেশন। ফলে এসব গ্রাহকের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে ৩৩ হাজার ভোল্টের লাইন প্রায় ২০ কিলোমিটার দুরত্বে পাশ^বর্তী উপজেলা ডোমার সাব-স্টেশন থেকে ডিমলায় আনতে হয়।

এলাকাবাসী জানায়, পিডিবির বিদ্যুতের সদ্যনিয়োগকৃত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নেসকো নিম্নমানের বিদ্যুৎসামগ্রী ব্যবহার করার ফলে একটু বাতাস বা ঝড় হাওয়া হলে তার ছিড়ে যায়। আবার রোদের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ওইসব তার গলে যায়। বিদ্যুতের খুঁটিগুলো অপরিকল্পিতভাবে পাকারাস্তার ওপরেই স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কা রয়েছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে খবর নেয়ার জন্য ডোমার বিদ্যুৎ  অফিসের উদ্ধর্তন কর্তৃপক্ষকে ফোন করলে তারা রিসিভ করেন না। বা ফোন রিসিভ করলেও আসতে অনেক দেরি করেন এমন অভিযোগ গ্রাহকদের।

আরও পড়ুনঃ  গাজীপুরে শীতের সিজনাল পিঠা বিক্রিতে ধুম

এদিকে ডোমার বিদ্যুৎ অফিস বলছেন, বিদ্যুতের ভোগান্তির জন্য কখনো লোডশেডিং, কখনো সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি, কখনো গাছকাটা আবার কখনো ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে যাওয়াসহ নানা সমস্যা হয়ে থাকে। এতে বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করে।

বাবুরহাট বাজারের ব্যবসায়ী বাবু ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলে যায় বিদ্যুৎ। একবার আসে একবার যায়। কি করে ব্যবসা করবো। আমাদের অনলাইনের ব্যবসা বিদ্যুৎ ছাড়া এক মুহুর্তেও চলে না।

ইলেকট্রনিক ব্যবসায়ী আলিনুর রহমান জানান, সাবস্টেশন না থাকায় এখানে বিদ্যুৎ অফিসের কোনো লাইনম্যান বা ইলেকট্রিশিয়ান নাই। একবার লাইনে ত্রুটি দেখা দিলে ডোমার  বিদ্যুৎ অফিস থেকে এসে লাইন মেরামত করতে ৩/৪ ঘণ্টা লাগে। সন্ধ্যার পরে লাইনে সমস্যা হলে পরেরদিন ছাড়া উপায় নেই। সারাদিন ফোন দিলেও কাজ হয় না।

ডিমলা দোকান মালিক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যবসায়ী সরোয়ার জাহান সোহাগ জানান, বিদ্যুৎ বিড়ম্বনায় মানুষ অতিষ্ঠ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শতভাগ বিদ্যুতায়নের সাফল্যকে কিছু মহল ইচ্ছাকৃত প্রশ্নবৃদ্ধ করছেন মনে হয়। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ঘরের ইলেকট্রনিক পণ্য নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে বিদ্যুতের সমস্যার কারণে সবচেয়ে বেশি ভুগছে শিক্ষার্থীরা।

এ বিষয়ে ডোমার বিদ্যুৎ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলি শহিদুল ইসলাম জানান, আকাশে বিদ্যুৎ চমকালে লাইন পড়ে যায়। এর আগে না। ঝড় বৃষ্টি হলে গাছ পালার ডাল ভেঙে বিদ্যুতের তার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অপরিকল্পিত বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা প্রকল্পের কাজ আমাদের এখানে কিছুই বলার নেই।

আরও পড়ুনঃ  মানবদেহের হাড়গোড় নদীর পাড়ে

নেসকোর নিয়োগকৃত ঠিকাদার মো. জনি বলেন, বিদ্যুতের সরঞ্জামাদি   নিম্নমানের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যেভাবে নকশা আছে সেভাবে বিদ্যুতের খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে। সড়ক বিভাগ আপত্তি জানালে খুঁটি সড়িয়ে নেওয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন