শনিবার, ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সমস্যায় জর্জরিত বাঘাবাড়ি নৌবন্দর

সমস্যায় জর্জরিত বাঘাবাড়ি নৌবন্দর
  • ৩৯ বছরেও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি
  • বিপুল পরিমান রাজস্ব হারাচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ
  • খালাস পণ্য খোলা আকাশের নিচে থাকে বছরের পর বছর

শ্রমিক সংকট। নেই জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের পর্যাপ্ত জেটি। এরপরও যা খালাস হয়, বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে তা নষ্ট হয়। এমনি নানা সমস্যায় জর্জরিত সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ি নৌবন্দরটি। প্রতিষ্ঠার ৩৯ বছর পরও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি এ বন্দরে। যার কারণে ৩৯ বছরে সরকারের বিআইডব্লিউটিএ হারিয়েছে বিপুল পরিমান রাজস্ব।

বন্দর সূত্র জানায়, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার বেশিরভাগ সার বাঘাবাড়ী নৌবন্দরের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া সিমেন্টের ক্লিংকার, কয়লা, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে এ বন্দরে এসে জাহাজ ভেড়ে। এখানে জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের পর্যাপ্ত জেটি, গুদাম ও সেট নেই। জেটির অভাবে জাহাজ থেকে সঠিক সময়ে পণ্য খালাস সম্ভব হয় না। যেগুলো খালাস হয়, সেগুলোও নানা সংকটে বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে থেকে গুণগত মান হারায়। পর্যাপ্ত যেটি না থাকায় পণ্য খালাসে বিলম্ব হয়। এতে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পণ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয় না। ট্রাকস্ট্যান্ড না থাকায় যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকায় বন্দরে প্রায়ই ট্রাক জটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া হাতের কাছে ট্রাক না পাওয়ায় পণ্য পরিবহণ বিলম্ব হয়। জাহাজ শ্রমিক ও পণ্য খালাসের লেবারদের বিশ্রমাগার ও খাবার ক্যান্টিন না থাকায় তারা সঠিকভাবে বিশ্রাম নিতে পারে না ও অমানবিকভাবে তাদের খোলা স্থানের মাটিতে অথবা কোনো ঘরের বারান্দায় বসে খাবার খেতে হয়। রাস্তাঘাট উন্নত না হওয়ায় পণ্যবাহী ট্রাক ও অন্যান্য যানবহণকে প্রায়ই দুর্ঘটনায় পড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়।

আরও পড়ুনঃ  আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস

অপরদিকে, পণ্য সংরক্ষণে পর্যাপ্ত গুদাম ও শেড তৈরি করা হলে গুণমান যেমন নষ্ট হবে না, তেমনি এসবের ভাড়া থেকে বিআইডব্লিউটিএ বিপুল পরিমান রাজস্ব পাবে। বন্দরে এখন আছে মাত্র তিনটি জেটি, ফলে কখনো কখনো পণ্য খালাসে জাহাজকে ২০ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়, বাড়ে শ্রমিক খরচ।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দরের লেবার এজেন্ট আবুল হোসেন বলেন, ১৯৮৩ সালে বাঘাবাড়ি নৌ-বন্দর প্রতিষ্ঠা হয়। এরপর দীর্ঘ ৩৯ বছর পার হলেও বন্দরটি আজও প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত করা হয়নি। দ্বিতীয় শ্রেণির এ বন্দর চ্যানেলটিতে পণ্যবাহী কার্গো জাহাজ চলাচলে সাড়ে ৭ ফুট পানির ড্রাফট প্রয়োজন হয়। তবে, নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে ৬/৭ ফুটের বেশি পানির ড্রাফট থাকে না। ফলে সে সময়ে ৬/৭ হাজার মেট্রিক টনের বেশি পণ্যবাহী জাহাজ এ বন্দরে আসতে পারে না। বন্দরটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত হলে এ বন্দর চ্যানেলে ১২ থেকে ১৪ ফুট পানির ড্রাফট থাকবে। তখন খুব সহজে এ চ্যানেলে ১২ থেকে ১৪ হাজার মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন কার্গো জাহাজ অনায়াশে যাতায়াত করতে পারবে। এতে উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় জ্বালানী তেল, রাসায়নিক সার, কয়লা, পাথর, রড, সিমেন্ট, ধান, চাল ও অন্যান্য মালামাল পরিবহণ খরচ অর্ধেক কমে যাবে। এছাড়া এ বন্দরটি প্রথম শ্রেণির হলে, এর রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হবে। প্রথম শ্রেণির হলে জেটি সংখা বৃদ্ধি পাবে ও যান্ত্রিক জেটি দ্বারা পণ্য খালাস হবে। এতে লেবার খরচ কম হবে ও সময় বেচে যাবে।

আরও পড়ুনঃ  লালপুরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যের দুর্নীতির অভিযোগ

তিনি বলেন, এ বন্দরটি থেকে বিআইডব্লিউটিএ এখন বছরে প্রায় ১৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়। এটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত হলে এর রাজস্ব আরো বৃদ্ধি পাবে। বন্দরটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত হলে এ সমস্যার সমাধান হবে। তিনি আরও বলেন, এ বন্দরের স্থান সংকুলান না হওয়ায় বন্দরের পূর্ব পাশের প্রায় ৩৪ শতক ব্যক্তি মালিকানা জায়গা ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করতে হয়। এতে আমাদের বছরে ৪ লাখ টাকা দিতে হয়। এটি প্রথম শ্রেণির হলে এবং ওই জায়গাটি বিআইডব্লিউটিএ অধিগ্রহণ করে নিলে আমাদের এ অতিরিক্ত অর্থদন্ড লাগবে না।

তিনি বলেন, বন্দরটি প্রথম শ্রেণির করতে সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তদবির করছি। তবে কর্তৃপক্ষের উদাসিনতার কারণে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সাবেক নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান বাঘাবাড়িতে ২ বার এসে এটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত করে দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছিলেন। তারপরেও কোনো কাজ হয়নি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নৌযান ফেডারেশন, বাঘাবাড়ি নৌবন্দর শাখার পরিচালক আব্দুল ওয়াহাব মিয়া বলেন, এ বন্দরটি প্রথম শ্রেণির না হওয়ায় এখানে বড় বগ জাহাজ আসতে পারে না। অপরদিকে এখানে জাহাজ শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত কোন সুবিধা না থাকায় শ্রমিকরা এ বন্দরে আসতে চায়না। যারা আসে তাদের বিশ্রমাগারের অভাবে চরম অসুবিধা পোহাতে হয়। তিনি এ বন্দরটি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত করে এ সমস্য সমাধানে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ বিষয়ে বাঘাবাড়ি নৌবন্দর লেবার সাগর আলী, সোবাহান আলী, মজনু মিয়া, নজরুল ইসলাম ও সেলিম হোসেন জানান, বাঘাবাড়ি নৌবন্দরে লেবারদের জন্য বিশ্রমাগার ও ক্যন্টিন না থাকায় আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। ক্যান্টিনের অভাবে খোলাস্থানে বসে খাবার খেতে হয়।

আরও পড়ুনঃ  নতুন সেতুর সংযোগ সড়কে ‘মরণ ফাঁদ’

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএর সহকারী পরিচালক ও বাঘাবাড়ি নৌবন্দর কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, এ বন্দরটির উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) পাশ হলে অচিরেই এর কাজ শুরু হবে। তখন আর এ সমস্য গুলি থাকবে না। তিনি বন্দরটি প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত করণের ব্যাপারে বলেন, এটা প্রথম শ্রেণিতে উন্নিত হোক তা আমরাও চাই। এটি হলে এখানে পণ্য খালাস ও সংরক্ষণের সুব্যবস্থা হবে। বহু লোকের কর্মসংস্থান হবে ও উত্তরবঙ্গর ১৬ জেলায় পণ্য সরবরাহ আরও সহজ হবে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন