বৃহস্পতিবার, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্রেতাশূন্য ১০ কোটির ‘ভিলেজ মার্কেট’

ক্রেতাশূন্য ১০ কোটির ‘ভিলেজ মার্কেট’

খুলনার ডুমুরিয়ার নিরাপদ পণ্য উৎপাদন-বিপননে অত্যাধুনিক সুবিধা সম্বলিত এ মার্কেট নির্মাণে ব্যয় হয় ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা

খুলনার ডুমুরিয়ায় চাষির কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে তৃণমূলের মানসম্মত পণ্যক্রয়ের উদ্দেশ্যে ২ একর ১০ শতক জমির উপর ‘ভিলেজ সুপার মার্কেট’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় এনজিও ‘সলিডাড়িডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’। নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে প্রায় ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিকমানের দৃষ্টিনন্দন এ মার্কেটি নির্মাণ শেষে ২০১৮ সালে উদ্বোধন করা হয়। তবে, উদ্বোধনের পরে সাড়ে তিন বছর অতিক্রম হলেও সফলতার দেখা মেলেনি। ক্রেতার অভাবে আগ্রহ হারাচ্ছেন বিক্রেতারা। এতে অধিকাংশ সময় ঘরগুলো ফাঁকা পড়ে থাকে। তবে মার্কেট পরিচালনা কমিটি বলছে, বাস্তবায়নকারী সংস্থার আন্তরিকতার অভাবে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ভিলেজ সুপার মার্কেট মালিক সমিতি জানায়, ২০১৫ সালে ডুমুরিয়া উপজেলার টিপনা গ্রামের শেখ বাড়ির সামনে ভিলেজ সুপার নামের এ মার্কেটের নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ইন্টারন্যাশনাল এনজিও ‘সলিডাড়িডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’। উদ্যোগটি বাস্তবায়নে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ২ একর ১০ শতক জমির উপর নেদারল্যান্ডের অর্থায়নে ১০ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে মার্কেটটির আনুষ্ঠানিক কাজ আরম্ভ হয়। প্রকল্পের আওতায় নির্মাণ করা হয় ডিপো, ১০ হাজার লিটার উৎপাদন ক্ষমতার চিলার আইচ ফ্যাক্টরি, মসজিদ, ইলেকট্রিক্যাল ম্যাকানিক্যাল রুম, হর্টি ক্যালচার প্রসেসিং জোন, হর্টি প্যাকেজিং জোন, একোয়া প্রসেসিং জোন, একোয়া প্যাকেজিং জোন, একোয়া আড়ৎ, হর্টি আড়ৎ, ব্যাংক, চাইল্ড কেয়ার সেন্টার, ফার্মার ট্রেনিং সেন্টার, অফিস সিকিউরিটি রুম, টয়লেট জোন ও বাউন্ডারি ওয়াল ইত্যাদি। নির্মাণ কাজ শেষে ২০১৮ সালে মার্কেটি উদ্বোধন করা হয়। তবে, অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা থাকার পরেও আজো মার্কেটটি জমেনি।

আরও পড়ুনঃ  নাম প্রকাশ না করে ১২০০ পরিবারকে সহায়তা

এলাকার কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম, মোক্তার হোসেন, মনিরুল ইসলাম জানান, মার্কেটটি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিলো এলাকার তৃণমূল চাষিদের কাছ থেকে ন্যায্যমূল্যে সরাসরি মানসম্মত ফল, সবজি, দুধ, মাছ প্রভূতি ক্রয় করে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর সুপার শপে বিক্রি করা। সেই সঙ্গে বিদেশেও রফতানি করা। এছাড়া কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের উপযোগী করে গড়ে তোলা। তবে কোনো উদ্দেশ্যই সফল হচ্ছে না। কারণ মার্কেটে তেমন কোনো ক্রেতা নেই। ক্রেতা না থাকায় বিক্রেতাও আসছে না। এতে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এতে মার্কেটের উদ্দেশ্য বিফলে যাচ্ছে।

মাছ (বেপারী) ক্রেতা তৈবুর রহমান বলেন, মার্কেটটি মূলত দু’টি কারণে জমছে না। এখানে মিটারে শাক-সবজি, ফল ও মাছ ওজন করা হচ্ছে। এতে আড়ৎদারদের কাছ থেকে ক্রেতারা বা ব্যবসায়িরা ওজনে বেশি পণ্য নিতে পারছে না। তবে, অন্য মার্কেটে দাঁড়িতে ওজন করায় আড়ৎদাররা তাদের ওজনে বেশি পণ্য দিয়ে দেয়। এতে উৎপাদনকারীরা ঠকে গেলেও ব্যবসায়িরা বেশি লাভবান হয়।

মার্কেটটির মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল আজিজ বলেন, মার্কেট কর্তৃপক্ষ প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো এ মার্কেট থেকে পণ্য ক্রয় করে বিদেশে বা বড় শহরগুলোর সুপার শপে বিক্রি করবে। সেই কারণে মাসে ৫ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে ঘর নিয়েছিল ব্যবসায়িরা। তবে সে প্রতিশ্রুতিও তারা রক্ষা করেননি। তাছাড়া লাভের ৩ ভাগের ১ ভাগ বাস্তবায়নকারী সংস্থাকে দিতে হয়। বছরের ৪-৫ মাস বেচাকেনা ভালো হলেও বাকি সময়ে নিজেদের পকেট থেকে ঘরভাড়া গুনতে হয়। তিনি আরও বলেন, এ এলাকার সবজি খুব ভালো। এ সবজি খুলনা বিভাগসহ ঢাকায় বিক্রি হয়। তবে সেটাও তারা (কর্তৃপক্ষ) বিদেশে রপ্তানি করতে পারছে না। এসব কারণে মার্কেট দিন দিন অকার্যকর হয়ে পড়ছে।

আরও পড়ুনঃ  নদীতে ইলিশ নেই

বাস্তবায়নকারী সংস্থা সলিডাড়িডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার ফাইনাস ম্যানেজার মিজানুর রহমান বলেন, গত বছর একবার বিদেশে সবজি রপ্তানি করা হয়। ইউরোপের দেশগুলো যে নিরাপদ সবজি চায় এখানে তা উৎপাদন হয় না। সবজি বিক্রি এখন বন্ধ আছে। তবে সিজেনে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়। দুধ বিক্রয়ের সেন্টারটি ব্রাককে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ২ হাজার লিটার দুধ বিক্রি হয়।

বাস্তবায়নকারী সংস্থা সলিডাড়িডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার ব্যবস্থাপক শহিদুল ইসলাম বলেন, এটি ট্রেডিশনাল মার্কেট নয়, শুধু জমজমাটের জন্য এ মার্কেট তৈরি করা না। এমন না যে প্রতিদিন এখানে কাঁচা বাজারের মত পণ্য পাওয়া যাবে। এলাকার চাষিদের উন্নয়নে মার্কেট তৈরি করা। তাদের উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম চলমান আছে। এলাকায় নিরাপদ পণ্য উৎপাদন হচ্ছে, নতুন নতুন পণ্য মার্কেটে আসছে।

Print Friendly, PDF & Email

সংবাদটি শেয়ার করুন